সঙ্কট উত্তরণে শ্রীলঙ্কায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২০ জুন ২০২২, ২৩:২৮
মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে শ্রীলঙ্কাকে টেনে তুলতে উদ্ধার প্রকল্প বিষয়ে আলোচনার জন্য শ্রীলঙ্কায় এসেছে ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ)-এর একটি প্রতিনিধিদল। এর মধ্যে দেশটিতে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি। প্রয়োজন জরুরি ত্রাণ তহবিলও।
একের পর এক ভুল নীতি, কোভিড মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ মিলিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশটি গত এপ্রিলেই জানিয়ে দিয়েছে এই মুহূর্তে তার পক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়।
এদিকে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি, দেখা দিয়েছে খাদ্য ও ওষুধের মারাত্মক ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।
এই অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কাকে টেনে তুলতে এবং সম্ভাব্য উদ্ধার প্রকল্পের রূপরেখা ঠিক করতে সোমবার দেশটিতে এসেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। তা কেমন হবে, কী ধরনের শর্ত থাকবে আগামী ১০ দিন ধরে চলবে সেই আলোচনা।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘আইএমএফের নীতি অনুযায়ী এই কঠিন সময়ে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমরা আবারো নিশ্চিত করছি।’
কলম্বো আশা করছে, এই সফরের মধ্য দিয়ে ঋণ পুনর্গঠন, পর্যালোচনা এবং জরুরি ভিত্তিতে আইএমএফ পরিষদ দেশটির জন্য অর্থ ছাড় দেবে। কিন্তু সাধারণত এই ধরনের আলোচনার সুরাহা হতে মাসের পর মাস সময় লাগে। যদি তাই হয় তাহলে পণ্যের ঘাটতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়বে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিমার’-এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ প্যাট্রিক কারেন জানান, কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তি হলেও চূড়ান্ত প্রকল্পে পৌঁছানোর জন্য শ্রীলঙ্কা এখন যেসব দেশ বা যাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে তাদেরকে পর্যাপ্ত ছাড় দেয়ার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর ঋণ পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট দীর্ঘ বলে জানান তিনি।
সরকার সমর্থক আর বিরোধীদের মধ্যে সহিংসতা চলছে শ্রীলঙ্কায়। জারি করা হয়েছে কারফিউ। বৃহস্পতিবার কারফিউয়ের আগে কলম্বোর প্রধান বাসস্ট্যান্ডে প্রচণ্ড ভিড় জমে। যে যেভাবে পেরেছে বাসে ওঠার চেষ্টা করেছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে চীন, ভারতসহ নানা দেশ, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বন্ড মার্কেট থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকার। আইএমএফ-এর কাছ থেকে উদ্ধার তহবিল পাওয়ার জন্য আলোচনায় দেশটির আগের এসব ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে বন্ড বা ঋণপত্রের ক্রেতারা চান আলোচনায় তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি যাতে গুরুত্ব পায়।
বার্লিন-ভিত্তিক কাপিটুলুম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পোর্টফলিও ম্যানেজার লুৎস রোয়েহমেয়ার বলেন, ‘অনেক আন্তর্জাতিক বন্ডহোল্ডারদের মূল চাহিদা তারা যাতে আলোচনায় অংশ নেয় এবং ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়টি যাতে সবার উপরে থাকে।'
শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ এরইমধ্যে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন। জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, ওষুধের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। মোহাম্মদ রহমান নামে ৬৪ বছর বয়সী এক অটোরিক্সাচালক গ্যাসের জন্য ১৬ ঘণ্টা ধরে একটি স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। আয়-রোজগার নেই, বাড়ি যেতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না।’
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা