২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাইকেলে চড়ে ৩ বন্ধুর রোমাঞ্চকর হজযাত্রা

সাইকেলে চড়ে ৩ বন্ধুর রোমাঞ্চকর হজযাত্রা। - ছবি : সংগৃহীত

তাজিকিস্তান থেকে সৌদি আরব। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সময়ে দুই দেশের মাঝের দূরত্ব খুব বেশি মনে হয় না। কিন্তু কেউ যদি সাইকেলে চড়ে এক দেশে থেকে আরেক দেশে যেতে চায়, তাহলে তা কোনোভাবেই সহজসাধ্য নয়; তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, তাজিকিস্তানের তিন বন্ধু এই অসাধ্য কাজকেই বেছে নিলেন। তারা সংকল্প করেছেন- সাইকেলে চড়ে মাতৃভূমি থেকে সৌদি আরবে যাবেন। তাও আবার প্রমোদ ভ্রমণে নয়; যাবেন পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে।

খালিজ টাইমস জানায়, ঈদুল ফিতরের পর তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবে থেকে যাত্রা শুরু করেছেন তারা। তাদের এ যাত্রায় মিশে আছে আবেগ-উচ্ছ্বাস ও আধ্যাত্মিক আবহ।

ওই তিন বন্ধু হলেন- গফুরভ দিলোবার, নাজারভ সাইদালি ও তালাবভ শোকির। গত ৩ জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসে আরব আমিরাতে পৌঁছায় তাদের ছোট্ট দলটি।

কিন্তু কেন তারা বিমানযাত্রা ছেড়ে সাইকেলে করে হজে যাচ্ছেন-তারও রয়েছে এক বিশেষ কারণ। আর তা হলো-তাজিকিস্তান সরকার ৪০ বছরের কম বয়সীদের হজযাত্রায় বিধি-নিষেধ আরোপ করায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবার দেশটির সরকার বয়স্কদের হজ পালনের সুযোগ করে দিয়েছে। এই অভিযাত্রী দল স্থলপথে যাত্রা শুরু করেন। কেননা, এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না।

৩৭ বছর বয়সী দিলোভার জানান, ‘আমরা সব বন্ধু মিলে বাইসাইকেলে হজযাত্রার সিদ্ধান্ত নিই। বছরের শুরু থেকে মাসব্যাপী এই ভ্রমণের প্রস্তুতি চলতে থাকে। ভ্রমণকালে নানা সমস্যায় পড়লেও বন্ধ হয়নি আমাদের হজযাত্রা। গরম আবহাওয়া, ধুলাবালি, ঝোড়ো বাতাস থেকে শুরু করে ভাষার প্রতিবন্ধকতা, রাস্তায় ঘুমানোসহ নানা ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছি। তবে সব বাধাই আমরা অতিক্রম করে আমিরাত পর্যন্ত পৌঁছি। এখন আমরা দুবাইয়ে অবস্থিত সৌদির কনস্যুলেট জেনারেলে ভিসার জন্য অপেক্ষায় আছি। ’ এমনকি নিজের হজ ভ্রমণের দুর্দান্ত মুহূর্তগুলো ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত পোস্ট দেন দিলোভার।

জানা যায়, প্রথমে পাহাড়-পর্বতঘেরা পথ পাড়ি দিয়ে পাশের দেশ তুর্কমেনিস্তান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দলটি। কিন্তু দেশটিতে প্রবেশ করলে ২০ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক হওয়ায় তা এড়িয়ে চলেন তারা। এদিকে ভূরাজনৈতিক কারণে আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্ত দিয়ে চলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অতঃপর উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ থেকে বুখারা হয়ে তারা হজযাত্রা শুরু করেন। এরপর আজারবাইজানের রাজধানী বাকু, ইরানের কাজভিন প্রদেশ, ইসফাহান, বন্দর আব্বাস হয়ে ফেরিযোগে আমিরাতের শারজায় গমন করেন।

অভিযাত্রী দলের সদস্য সাইদালি বলেন, ‘হজ ভ্রমণে একটি পথ বন্ধ থাকলে আরেকটি পথ খুলে গিয়েছে। প্রতি মুহূর্তে যাত্রাপথ পরিবর্তন হলেও আমাদের ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখন আমরা হজ ভিসা পাওয়ার আশায় দুবাইয়ে অবস্থান করছি। আশাকরি- খুব শিগগির সবার ভিসা পেয়ে যাব। ’

দিলোভার বলেন, ‘গত ৩০ দিনের যাত্রাপথে বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে আমাদের নতুন বন্ধু তৈরি হয়েছে। আমরা গ্রহণ করেছি জীবনের নতুন নতুন পাঠ। বিশেষ অজ্ঞাত স্থানে ফ্ল্যাট টায়ারে আমাদের সাহায্য করেছেন অনেক অপরিচিত জন। এমনকি প্রথম সাক্ষাতেই আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অনেক মানুষ। ’

সূত্র : খালিজ টাইমস ও ইসলামী জীবন


আরো সংবাদ



premium cement