১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' ও 'সংকীর্ণ মানসিকতার'

অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী পরমানু চালিত সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জন করবে - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ঐতিহাসিক নিরাপত্তা চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে চীন এ চুক্তিকে 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' ও 'সংকীর্ণ মানসিকতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ওই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু চালিত সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করবে।

আর এটিকে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে একটি উদ্যোগ বলেই মনে করা হচ্ছে।

ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সংকট বিরাজ করছে এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও রয়েছে তুঙ্গে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেছেন, ওই (যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়ার) জোট আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে জোরদার করছে।

তিনি দেশ তিনটির তীব্র সমালোচনা করে 'স্নায়ু যুদ্ধ মানসিকতা' আখ্যায়িত করেছেন এবং সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশ তিনটি তাদের নিজেদের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে।

চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করে তিন দেশের জোটবিরোধী সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলেছে, 'অস্ট্রেলিয়া এখন চীনের একটি প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে'।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই প্রথম তার সাবমেরিন প্রযুক্তি অন্য কাউকে দিতে যাচ্ছে। এর আগে তারা এটি শুধু যুক্তরাজ্যকেই দিয়েছিল।

আর এ চুক্তির মানে হল অস্ট্রেলিয়া এখন পরমাণু চালিত সাবমেরিন তৈরি করতে পারবে, যা প্রচলিত সাবমেরিনের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতির এবং একে চিহ্নিত করা আরও কঠিন।

এ ধরণের সাবমেরিন কয়েক মাস পানিতে ডুবে থাকতে পারে এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম। যদিও অস্ট্রেলিয়া বলছে, সাবমেরিনে পরমাণু অস্ত্র বহনের কোনো পরিকল্পনা দেশটির নেই।

অকাস নামের নতুন চুক্তিটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

তারা যদিও চীনের নাম উচ্চারণ করেননি, তবে তিন নেতাই ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- যা তাদের ভাষায় 'ক্রমাগত বাড়ছে'।

'ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও উন্নতি নিশ্চিত করা ও মূল্যবোধ সুরক্ষার জন্য সম মানসিকতার জোট আর অংশীদার হিসেবে এটা তিন দেশের জন্য ঐতিহাসিক সুযোগ,' তিন দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল।

পরমাণু সাবমেরিন কোন কোন দেশের আছে
বিশ্লেষকরা বলছেন অকাস নামের নতুন চুক্তিটি সম্ভব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিন দেশের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। এর অর্থ হলো অস্ট্রেলিয়া হবে পরমাণু সাবমেরিন সমৃদ্ধ সপ্তম দেশ।

এর পাশাপাশি দেশটি সাইবার সক্ষমতা ও সাগরতলে কাজ করার নানা প্রযুক্তিও পাবে।

'এটা আসলেই দেখাচ্ছে যে তিন দেশ (চীনের) আগ্রাসী মনোভাবের প্রতি উত্তর দিতে একটি পরিকল্পনা আঁটছে,' বলছিলেন এশিয়া সোসাইটি অস্ট্রেলিয়ার গাই বোয়েকেনস্টেইন।

বরিস জনসন পরে বলেছেন, চুক্তিটি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধপূর্ণ জায়গাগুলোতে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য বেইজিংকে দায়ী করে আসছিলো পশ্চিমারা।

চীন ওই অঞ্চলে তার শতবর্ষ পুরাতন অধিকার আছে বলে দাবি করছে এবং এর পক্ষে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রও তার মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের স্বার্থ সুরক্ষায় সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় সাবমেরিন স্টেশন থাকা মানে ওই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা, বলছেন বিশ্লেষকরা।

চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে উত্তেজনা
চীন অস্ট্রেলিয়ার বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, অতীতেও দু দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। বিশেষ করে চীনের উইঘুরদের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান, টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ের কিছু প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করা এবং করোনাভাইরাস মহামারি তদন্তে সমর্থন দেয়া নিয়ে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরেছে।

তাছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাপক বাড়ানো নিয়েও পশ্চিমারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল। তারা চীনের কিছু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়েও ক্ষুব্ধ ছিল। যেমন গত বছরই চীন অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইনের ওপর কর বাড়িয়েছিল ২০০ ভাগ পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার নিজেকে সুরক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

'পিছন থেকে আঘাত'
ফ্রান্স নতুন চুক্তির বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কারণ এ চুক্তির কারণে অস্ট্রেলিয়া ১২টি সাবমেরিন নির্মাণের জন্য যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে।

'এটা সত্যিকার অর্থেই পেছন থেকে আঘাত,' বলেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'আমরা অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি করেছিলাম, কিন্তু সেই আস্থার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।'

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ফ্রান্সের ক্ষোভের কারণ তারা বুঝতে পারছে, কিন্তু চুক্তির আগে তাদের সাথেও কোনো আলোচনা হয়নি।
সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement