২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাস : ভারতে ভ্যাকসিনেশন অভিযান চরম সঙ্কটে, দিল্লিতে শতাধিক সেন্টার বন্ধ

মুম্বাইয়ের একটি টিকাকেন্দ্রে এসে কৈফিয়ত চাইছেন ক্ষুব্ধ নাগরিকরা - ছবি বিবিসি

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী দেশ ভারতেই কোভিড ভ্যাক্সিনের জন্য সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিশিল্ডের জোগানে ভাটা পড়েছিল আগেই, বুধবার রাজধানী দিল্লির সরকারও অভিযোগ করেছে কোভ্যাক্সিনের নির্মাতা ভারত বায়োটেকও তাদের নতুন করে আর টিকা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

দিল্লিতে শতাধিক ভ্যাক্সিনেশন সেন্টার এর ফলে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রাজধানী দিল্লি ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তেই টিকা-প্রত্যাশীরা অ্যাপে বুকিং পাচ্ছেন না, টিকাকেন্দ্রে গিয়েও তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে বা চূড়ান্ত নাকাল হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।

বস্তুত গত ১৬ জানুয়ারি ভারতে মহাধূমধামে যে বিশাল টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছিল, একশো দিন যেতে না-যেতেই সেই কর্মসূচি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রথম দু-আড়াই মাসে ভারত প্রায় সত্তরটি দেশে সাড়ে ছয় কোটির মতো ভ্যাক্সিন রফতানিও করেছিল, কিন্তু তা বন্ধ করার পরও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও এখন কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।

ভ্যাক্সিন সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে কার্যত প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গেছে-আর এরই মধ্যে দিল্লির আম আদমি পার্টির সরকার আজ অভিযোগ করেছে কেন্দ্রের নির্দেশেই ভারত বায়োটেক তাদের কোভ্যাক্সিন পাঠাতে অস্বীকার করেছে।

দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ শিশোদিয়া এদিন জরুরি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, কোভ্যাক্সিনের নির্মাতা সংস্থা আমাদের চিঠি লিখে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে তারা দিল্লিকে টিকা দিতে পারবে না। কারণ তাদের কাছে দেয়ার মতো না কি কোনো টিকাই নেই।

শিশোদিয়া আরো অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারাই এই টিকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন আর তাদের বিমাতৃসুলভ আচরণের কারণেই দিল্লিতে কোভ্যাক্সিনের শতাধিক টিকাকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ক্ষমতাসীন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দাবি করেন, টিকার জোগান বাড়ানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে এখন টিকার ফর্মুলা দিয়ে টিকা বানানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

পাত্র জানান, মহারাষ্ট্রের হ্যাফকিন বায়োফার্মা, ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যাল লিমিটেড, ভারত ইমিউনোলজিক্যালস এরকম তিন-চারটি সরকারি সংস্থাকে কেন্দ্র কোভ্যাক্সিন বানানোর নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিএমআর ও নানা সংস্থার সাথে কথাবার্তা চালাচ্ছে, বলছে তোমরা আমাদের কাছ থেকে ফর্মুলা নাও, টিকা বানাও!

টিকার জোগান নিয়ে বিজেপি রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানালেও টিকা পেতে সাধারণ নাগরিকরা যে নাজেহাল হচ্ছেন, তাতে কিন্তু কোনো ভুল নেই।

কোউইন নামে যে সরকারি অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে টিকার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার কথা সেখানেও স্লট মিলছে না-আবার সাতসকালে টিকাকেন্দ্রে ওয়াক-ইন করেও নিরাশ হতে হচ্ছে বহু লোককেই।

পশ্চিমবঙ্গে হলদিয়ার একটি টিকাকেন্দ্রে গত সপ্তাহে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সীমা ঘোষালের।

সকাল পৌনে ছটার সময় টিকাকেন্দ্রে পৌঁছেও তিনি শোনেন, সর্বোচ্চ যে ১৩০ জনকে সেদিন টিকা দেয়া যাবে তাদের সবার নাম না কি লেখা হয়ে গেছে-তার আর সেদিন সুযোগ মিলবে না।

তিনি বলছিলেন, অত সকালেও এসে শুনি দেড়শোজনের বেশি না কি নাম লেখা হয়ে গেছে! অথচ তখন সেখানে মাত্র পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে, সেন্টারের গেটও বন্ধ। তাহলে কারা নাম লিখল? কাদের নাম লিখল? আর তারা গেলই বা কোথায়, তা তো কিছুই বুঝতে পারছি না! আবার টিকাকেন্দ্রগুলোতে উপছে পড়া ভিড়, ঘেঁষাঘেঁষি লাইনের জন্যই সংক্রমণের ভয় পাচ্ছিলেন তারই প্রতিবেশী আলো বণিক।

বণিক টিকাকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, এত ভিড় ঠেলে কেন ভ্যাক্সিন নিতে ঢুকতে যাব বলুন তো? করোনার ভ্যাক্সিন নিতে এসেই যদি এই গাদাগাদি ভিড়ে করোনায় আক্রান্ত হই, তার চেয়ে তো বাড়িতে বসে থাকাই ভালো।

ভারতের বৃহত্তম বায়োফার্মা কোম্পানি বায়োকনের কর্ণধার কিরণ মজুমদার সরাসরি বলছেন, ভারতে টিকাকরণের গতি যে হারে কমছে তাতে আমি রীতিমতো উদ্বিগ্ন বোধ করছি। বহু সেন্টারে টিকার জোগান আসছে না, আবার কোনো কোনো সেন্টার তাদের নির্ধারিত কোটাই দিয়ে উঠতে পারছে না। কোথাও তো কিছু একটা ভুল হচ্ছেই।

তার প্রশ্ন, জানুয়ারিতে ভ্যাক্সিন অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে কেন আমরা নির্মাতা সংস্থাগুলোকে অর্ডার দিইনি, চাহিদার হিসেব কষে সাপ্লাই শিডিউল তৈরি করিনি?

টিকাকরণ অভিযানের অঙ্কগুলো কষার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেবে ও পরিকল্পনায় যে মারাত্মক ভুল হয়েছিল, সেটা ভারতে আজ দিনের মতো স্পষ্ট।

তার মধ্যে প্রথম দিকে বাংলাদেশ-সহ সত্তরটি দেশে টিকা পাঠিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলা হয়েছে, দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সরকার-সহ অনেকেই এই অভিযোগ এখন বারেবারে তুলছেন।

বিবিসি বাংলা


আরো সংবাদ



premium cement