১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমন বিপজ্জনক অবস্থা দিল্লিতে আগে দেখিনি

এমন বিপজ্জনক অবস্থা দিল্লিতে আগে দেখিনি - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে না। ভর্তি হতে পারলেও অক্সিজেন সঙ্কট। এমন বিপদ কখনো দেখেননি ভারতের মানুষ।

ভারতের করোনা পরিস্থিতির বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গণমাধ্যমকে কথাগুলো বলছিলেন গৌতম হোড়।

তিনি বলেন, বন্ধুর ছেলের সর্দি প্রকাশ পেয়েছে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে। সামান্য কাশিও রয়েছে। ঝুঁকি না নিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে বুধবার সকাল পর্যন্ত অনেক জায়গায় চেষ্টা করেছেন। তবে পরীক্ষা করানো যায়নি। সবাই কয়েক দিন পরে যোগাযোগ করতে বলেছেন। খবর নিয়ে জানলাম, করোনা পরীক্ষার চাপ এত বেশি যে দিল্লির ল্যাবগুলো নতুন করে নমুনা সংগ্রহের জন্য কারো বাড়িতে যাবে না। তা হলে করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা বসে আছেন, তাদের কী হবে? কী আর হবে, হয় নিভৃতবাসে চলে যেতে হবে অথবা ঈশ্বর-ভরসায় থাকতে হবে।

বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গৌতম হোড় বলেন, আগে করোনা পরীক্ষা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার রিপোর্ট পাওয়া যেতো। এখন রিপোর্ট পেতে ৪৮ ঘণ্টা লাগছে। ৭২ ঘণ্টা লাগলেও কিছু বলার নেই। আরেক বন্ধুর মেয়ে আগামী শনিবার দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরবে প্লেনে। করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট না দেখালে প্লেনে উঠতে দেবে না। তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন কোথায় করোনা পরীক্ষা করা যাবে ও শনিবারের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, বন্ধু ঘন ঘন ফোন করছে আমাকে। সমানে ফোন করেও লাভ হচ্ছে না। চিকিৎসকদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও তারা সুরাহা করতে পারছেন না। রাজনীতিকরা হাত তুলে রাখছেন। সাবেক উচ্চপদস্থ সেনা অফিসারও কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বন্ধুর মেয়ের বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত।

গৌতম হোড় বলেন, বুধবার সকালেই কলকাতা থেকে কলেজের বন্ধুর ফোন। তার আত্মীয় করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। করা যাচ্ছে না। বিকেলে বন্ধু জানালো, কোনোরকমে একটা হাসপাতালে বেড পেয়েছে। ছেলের মাও করোনায় আক্রান্ত। তার কী হবে? উত্তর জানা নেই।

দিল্লির এক সাংবাদিক বন্ধুর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তার এক বন্ধু করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোনো হাসপাতালে জায়গা নেই। অনেক খুঁজে একটা বেড পাওয়া গেলো। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানালেন, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সুপারিশ আনতে হবে। কিন্তু এর মধ্যেই খবর এলো, যার জন্য এই চেষ্টা তিনি আর নেই। একই অবস্থা হয়েছে এক সাবেক পুলিশ কর্মীর। তার স্ত্রী তাকে নিয়ে সারারাত হাসপাতাল খুঁজেছেন কিন্তু পাননি। সকালে সেই সাবেক পুলিশকর্মী হাসপাতাল খোঁজার দায় থেকে স্ত্রীকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই জীবনের সীমানা পেরিয়ে চলে গেছেন।

আরেক সাংবাদিক বন্ধুর ছেলের করোনা হয়ে অক্সিজেন লেভেল কমছে। অনেকে মিলে চেষ্টা করে হাসপাতালে একটা বেড জোগাড় করা হয়েছিলো। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক বলছেন, আপনি তো এখন তুলনায় ভালো আছেন। আপনি বরং এখন ভর্তি হবেন না। হাসপাতালের অবস্থা দেখে বন্ধুর ছেলে পালিয়ে আসতে চাইছিলো।

দিল্লির সব হাসপাতালে একটাই অবস্থা। হাসপাতালে ভর্তি হলেই সমস্যার সমাধান হবে তা নয়। অক্সিজেন দেয়ার দরকার হলে তা পাওয়া যাবে কি-না তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ দিল্লির বেশিরভাগ হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার অক্সিজেন মজুত আছে।

হাইকোর্টের কড়া মনোভাবের পর হাসপাতালে ভোর রাতে অক্সিজেন পৌঁছেছে। আজ না হয় সমস্যা মিটলো। কাল, পরশু কী হবে? উত্তর জানা নেই।

দিল্লির মতো শহরে যদি গড়ে ২৫ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে এক সপ্তাহে এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষের চিকিৎসা দরকার। এই হার চলতে থাকলে মাসে ছয় লাখ মানুষকে শুধু করোনার জন্য দিল্লিতে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমান পরিকাঠামোয় যা অসম্ভব। কিন্তু ন্যূনতম প্রস্তুতি কেন ছিলো না? না সরকারের, না মানুষের। বেশিরভাগ মানুষের মনে এমন ধারণা হয়েছে, করোনা চলে গেছে। মাস্ক পরা বন্ধ। সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউ।

দিল্লিতে গত শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি হয়। তার আগের বিকেলেও চিত্তরঞ্জন পার্কের বাজারে দেখেছি, প্রচুর মানুষ ভিড় করে ফুচকা খাচ্ছেন। আড্ডা চলছে। বিপদ দোরগোড়ায় না এলে চৈতন্য হয় না কেউ।

দেশের অন্য রাজ্যেও হুহু করে করোনা বাড়ছে, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যমন্ত্রীরা কেউ আসাম, কেউ তামিলনাড়ু, কেউ কেরালা, কেউ পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে ব্যস্ত। রাজ্যজয়ই তো আসল। মানুষ তো কতই মরবে। করোনা না হলে অন্য রোগে। কিন্তু রাজ্যজয়ের সুযোগ তো পাঁচ বছরে একবার আসে। তা কি ছাড়া যায়! যায় না। করোনা যখন ভারতে এলো, তখন সব দায় নিজের কাধে তুলে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সব নিয়ন্ত্রণ করছিলো। এখন দায় রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আর তার শেষ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি জনগণের ঘাড়েই দায় চাপিয়ে দিয়েছেন।

দিল্লিতে দেখতে দেখতে প্রতিটি পাড়ায় করোনা ঢুকে পড়েছে। ঘরের পাশেই চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। প্রতিদিন মানুষের মরে যাওয়ার খবরে ভরে যাচ্ছে ম্যাসেজ বক্স। ফোনের রিং বাজলে ভয় করতে শুরু করেছে। সত্যি বলছি, এমন বিপজ্জনক অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। না চাইলেও ভয় ঢুকে যাচ্ছে মনের ভেতর।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement