২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সু চির বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘনের নতুন অভিযোগ সামরিক জান্তার

প্রতিবাদী নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান
বিক্ষোভকারীর হাতে কারান্তরালে অং সান সু চির ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ এনেছে। সোমবার রাজধানী নেপিডোর আদালতে শুনানির জন্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিয়ানমারের সাবেক এই স্টেট কাউন্সিলরকে হাজির করার পর তার বিরুদ্ধে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বিধিনিষেধ ভঙ্গের নতুন এই অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, গত বছর আগস্টে নেপিডোতে জাবুথিরি টাউনশিপে সুচি তার ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) দলীয় সদস্যদের বাড়ি সফর করেন। এই সময় 'প্রচুর জনসমাগম' হয় যা, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটিতে চলমান বিধিনিষেধের লঙ্ঘন।

অং সান সু চির আইনজীবী মিন মিন শুই বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সুচির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ৭৫ বছর বয়সী নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নেত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সংখ্যা ছয়ে দাঁড়িয়েছে- পাঁচটি নেপিডোতে এবং একটি ইয়াঙ্গুনে লিপিবদ্ধ অভিযোগ।

এর আগে সুচির বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের অধীনে ভিন্ন একটি অভিযোগসহ, আমদানি-রপ্তানি আইন, যোগাযোগ আইন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়।

মিন মিন শুই জানান, বর্তমানে অং সান সু চি নেপিডোতে গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আদালতে তাকে সুস্থ দেখালেও মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

এছাড়া সোমবার, মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও নেপিডো উন্নয়ন কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও এনএলডির পার্লামেন্ট সদস্য ড. মিও অংকে আদালতে হাজির করা হয়।

শুনানির সময় উইন মিন্ট, অং সান সু চি ও অন্যরা আদালতে নিজেদের আইনজীবীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ ও পরামর্শের আবেদন করেন। আদালতে সামরিক জান্তার প্রতিনিধিরা জানান, এই আবেদন তারা তাদের উচ্চপদস্থদের কাছে পেশ করা হবে।

আদালত ২৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত করে।

এদিকে মিয়ানমারের অবস্থা পর্যব্ক্ষেণকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) তাদের রোববারের প্রতিবেদনে জানায়, ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে বিক্ষোভে সামরিক জান্তার দমন অভিযানে অন্তত সাত শ' ছয়জন নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতায় সামরিক জান্তার হাতে বন্দী রয়েছে তিন হাজার ৫৯ জন। এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে আরো ৬৫৭ জনের নামে।

সোমবার মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা এই বছর সামারিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রকাশের মাধ্যমে নববর্ষ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

থিনগিয়ান নামে পরিচিত মিয়ানমারের নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব আগামী ১৩ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উদযাপিত হবে।

অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের সংগঠক জেনারেল স্ট্রাইক কোলাবোরেশন কমিটির নেতা এই থিনজার মাউঙ্গ ফেসবুকে লিখেন, 'সামরিক কাউন্সিল থিনগিয়ানকে ধারণ করে না। জনগণের হাতেই রয়েছে জনগণের ক্ষমতা। জনগণের থিনগিয়ান পালনে জনতার একত্রিত হওয়া উচিত।'

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও ইরাবতি


আরো সংবাদ



premium cement