২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সামরিক জান্তার বিরোধিতায় মিয়ানমারের বিউটি কুইন হান লে

হান লে - ছবি : সংগৃহীত

সুন্দরী প্রতিযোগিতায় দেয়া বক্তব্য সাধারণত সংবাদের শিরোনাম তৈরি করে না। কিন্তু থাইল্যান্ডে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল-২০২০’ অনুষ্ঠানে মিস গ্র্যান্ড মিয়ানমার হান লের বক্তব্য আকৃষ্ট করে সবাইকে। পুরস্কার না জিতলেও তার বক্তব্যতেই তৈরি হয় খবর।

প্রতিযোগিতার মঞ্চে হান লে তার বক্তব্যে বলেন তার দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে সাধারণ মানুষের ওপর সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতার কথা।

মিয়ানমার সুন্দরী বলেন, ‘আজ আমার দেশ মিয়ানমারে মানুষ মারা যাচ্ছে। দয়া করে মিয়ানমারকে সাহায্য করুন। আমাদের এখন জরুরি ভিত্তিতে আপনাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য দরকার।’

এক মাসেরও কিছু কম সময় আগে ২২ বছর বয়সী হান লে ছিলেন ইয়াঙ্গুনের রাস্তায়। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

দুই মাস আগে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নিলে দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় এসে গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত এক গণতান্ত্রিক নির্বাচন বাতিল করে দেয়, যাতে মিয়ানমারের সামরিক শাসনের অধীনে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ আন্দোলনকারী নেত্রী অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে।

অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়লে, সামরিক বাহিনী শুরুতে জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এক সপ্তাহ পরে বিক্ষোভ দমাতে রাবার বুলেট ও প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার শুরু করা হয়।

মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের (এএপিপি) তথ্যানুসারে দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে ৫৫০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, এ বিক্ষোভে ৪৩ জন শিশু নিহত হয়েছে।

হান লে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিমান বালা হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে এখন কি করবেন জানেন না তিনি। অনেকে রাজনীতিতে আসতেও বলছেন, যদিও এতে মন সায় দিচ্ছে না তার। তবে নিজের অবস্থান ও মতামত ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছপা হবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হান লে। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার দেশের পরিস্তিতি সম্পর্কে বলতে এ সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চকে ব্যবহার করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ব্যাংকক থেকে বিবিসিকে টেলিফোনের মাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হান লে বলেন, ‘মিয়ানমারে সাংবাদিকরা বন্দী... তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কথা বলার।’

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলাকে দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি অং সান সু চিকে নিজের ‘বিপুল অনুপ্রেরণা’হিসেবে মন্তব্য করেন।

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ, যে কারণে আমরা জাতিসংঘকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আমাদের নেতাদের ফেরৎ চাই এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই।’

সুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে তার বক্তব্যের মাধ্যমে সামরিক জান্তার দৃষ্টি তার ওপর পড়ায় এখন তিনি উদ্বিগ্ন। হান লে জানান, আপাতত অন্তত তিন মাস তিনি থাইল্যান্ডেই অবস্থান করবেন।

নিকটজনদের অনেকেই তাকে দেশে ফিরতে মানা করছেন।

তার ও নিকটজনদের দুশ্চিন্তা অমূলক নয়। গত সপ্তাহে ১৮ জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেলিব্রেটি ও দুই সাংবাদিকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আনুগত্য ভঙ্গের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।

হান লে বলেন, দেশে সামরিক বাহিনী বা অন্য কোনো কর্মকর্তার সাথে তার কখনোই যোগাযোগ হয়নি। তবে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি হুমকিমূলক অনেক মন্তব্য পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা আমাকে হুমকি দিয়ে বলছে মিয়ানমারে আমি যখনই ফিরে যাবো... কারাগার আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

নিজের পরিবার সম্পর্কেও উদ্বিগ্ন হান লে। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে নিয়মিত তাদের সাথে যোগযোগ করতে পারছেন না তিনি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হান লে নিজের পরিবারের নিরাপদে থাকার কথাই জেনেছিলেন। পরিবারের নিরাপত্তার জন্য নিজের বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ না করার জন্য বিবিসিকে অনুরোধ করেন তিনি।

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয় গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement