২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নিহত ছাড়ালো ৫০০

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিহত সহযোদ্ধার লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভে দেশটির সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস অবস্থানে ক্রমেই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। প্রায় দুই মাস চলমান এই বিক্ষোভে সোমবার পর্যন্ত মোট ৫১০ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী এক সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়।

থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) নামের এই সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সোমবার পর্যন্ত অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত দুই হাজার পাঁচ শ' ৭৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে আটজন দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের দক্ষিণ দাগোন ডিস্ট্রিক্টে নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকায় বিক্ষোভে সাধারণ অবস্থার চেয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলে মনে করা হচ্ছে, কোনো এক প্রকার গ্রেনেড লাঞ্চার নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বালুর বস্তা দিয়ে প্রস্তুত ব্যারিকেডের পেছনে লুকিয়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়।

দক্ষিণ দাগোনের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনী সারারাত ওই স্থানে দমন অভিযান চালিয়েছে, যাতে আরো বেশি লোক হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, 'সারারাত গোলাগুলি করা হয়েছে।'

পুলিশ ও জান্তা মুখপাত্রের সাথে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা সামরিক জান্তার শাসনের প্রতিবাদের নতুন কৌশল হিসেবে সড়কের সংযোগস্থলে আবর্জনার স্তুপ তৈরি করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইয়াঙ্গুনের রাস্তা রাস্তায় আবর্জনার স্তুপের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি আবর্জনা যথাযথ স্থানে ফেলার জন্য কর্তৃপক্ষের এক আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই 'জান্তার আদেশ অমান্য' কর্মসূচি পালন করে বিক্ষোভকারীরা।

শনিবার দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের সাথে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তাক্ত সংঘর্ষে আহত কয়েক জনের মৃত্যুর পর নিহতের সংখ্যা নতুন করে বাড়ার তথ্য জানায় এএপিপি।

বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান সংগঠক দল জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটি সোমবার দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদেরও সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সহায়তার আহ্বান জানান।

এ দিকে মিয়ানমারের স্বায়ত্তশাসনপন্থী তিনটি সংগঠন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, দি আরাকান আর্মি ও তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এক যুক্ত বিবৃতিতে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের হত্যা বন্ধ করে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানায়।

তা না হলে সকল জাতিগত নৃগোষ্ঠীর সাথে মিলে 'মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লবে' অংশগ্রহণকারীদের রক্ষায় তারা পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এ দিকে থাই সীমান্তে স্বায়ত্তশাসনপন্থী অপর দল কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) সাথে মিয়ানমারেরর সামরিক বাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে। সামরিক জান্তার আগ্রাসন থেকে বাঁচতে মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থান থেকে নাগরিকরা অভ্যুত্থানকে প্রত্যাখ্যান করা দলটির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সূত্র : রয়টার্স


আরো সংবাদ



premium cement