২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

চীনের অর্থনীতি কি ‘সবুজ’ হবে?

চীনের অর্থনীতি কি ‘সবুজ’ হবে? - ছবি : সংগৃহীত

চীন ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুক্রবার তুলে ধরার কথা। এটিই হবে আগামী অর্ধ দশকের জন্য দেশটির অর্থনীতির রোডম্যাপ। মনে করা হচ্ছে, এখানে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে একটি অন্যতম গুরুতর লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরবে চীন।

চীন শুধু অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তিই নয়, দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নির্গমনকারীও। তাই মনে করা হয়, কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার জন্য জোরদার কিছু পদক্ষেপের রূপরেখা থাকবে নতুন পরিকল্পনায়। কিন্তু এ নিয়ে একটা উদ্বেগও আছে। সেটা হলো, কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে গেলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে দেশটির অর্থনীতির ওপর। কাজেই খুব বেশি ‘সবুজ’ অর্থনীতির দিকে চীনের এগিয়ে যাবার পথে সেটা একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটা কী?
১৯৫৩ সাল থেকে চীন পঞ্চবার্ষিকী বা ‘পাঁচসালা’ পরিকল্পনা প্রকাশ করে আসছে। এটি হচ্ছে একটি পরিকল্পনার দলিল, যাতে আগামী ৫ বছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যগুলো কী হবে- তা বলা থাকে। মূলত এটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি।

এই পরিকল্পনায় যে কাঠামো তুলে ধরা হয় সেটিই সরকার ও শিল্পখাতের সকল নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে।

দশকের পর দশক ধরে এই পরিকল্পনা ফসিলজাত জ্বালানিকে ভিত্তি করে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছে। এর ফলে চীনের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান।

এ পরিকল্পনার গুরুত্ব কোথায়?
কার্বন নির্গমনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, সারা পৃথিবীই হুমকির মুখে পড়ছে। তাই চীনের জন্য মূল প্রশ্নটা হলো, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ঘটাতে হবে, অন্যদিকে কার্বন নির্গমনও সীমিত করতে হবে। এ দু’টি একসাথে কীভাবে সম্ভব?

গত সেপ্টেম্বর মাসে এক ঘোষণা দিয়ে সারা পৃথিবীকে চমকে দেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি ঘোষণা করেন, চীন ২০৬০ সাল নাগাদ নেট কার্বন নির্গমন শূণ্যে নামিয়ে আনবে ও ২০৩০ সালের আগেই তাদের কার্বন ব্যবহারকে শীর্ষবিন্দুতে নিয়ে যাবে।

নেট কার্বন নির্গমন শূণ্যে নামিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে গ্রিনগাউস গ্যাস নির্গমন যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। এর পরের অতিরিক্ত নির্গমনগুলোর সাথে ভারসাম্য রেখে বায়ুমণ্ডল থেকে সমানুপাতিক পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস অপসারণ করা।

নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হচ্ছে, সেটা অর্জনের পথে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তা ছাড়া এই লক্ষ্যগুলো কতটা বাস্তবসম্মত এরও একটা ধারণা এ থেকে বিশ্লেষকরা পাবেন।

আগামী পাঁচ বছরের পদক্ষেপগুলোর রূপরেখা দেবার সাথে সাথে চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও করছে। এর অংশ হিসেবে আছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা। চীনা ডায়ালগ সাময়িকীর প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র উপদেষ্টা ইসোবেল হিলটন বলেছেন, ‘এখানে দেখা যাচ্ছে যে চীন ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগুলোকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এতে আছে লো-কার্বন প্রযুক্তিগুলো। তারা অর্থনীতিকে বাজারের উচ্চ স্তরের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে একটা ভিত্তি স্থাপনের, যাতে চীন নিম্নমাত্রায় কার্বন নির্গত করে এমন পণ্য ও প্রযুক্তির সরবরাহকারী হয়ে উঠতে পারে।’

নতুন পরিকল্পনায় কী থাকবে?
এখানে থাকবে কিছু মৌলিক লক্ষমাত্রা, যা বিশ্লেষকরা পরিকল্পনাটি কতটা উচ্চাভিলাষী তার বিচার করতে ব্যবহার করবেন। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে সমগ্র অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির সংখ্যা। কিন্তু এর সাথে আরো থাকবে জিডিপির প্রতি ইউনিটে কী পরিমাণ কার্বন ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে হয়তো আরো থাকবে সামগ্রিকভাবে মোট যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহৃত হবে এর মধ্যে 'জীবাশ্ম-জাত' নয় এমন অর্থাৎ নন-ফসিল জ্বালানির পরিমাণ কতটা হবে- এর একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা।

এক্ষেত্রে যেসব সংখ্যা দেয়া হবে তা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আঞ্চলিক সরকার ও শিল্পগুলোর প্রতি কী বার্তা বা সঙ্কেত দেয়া হচ্ছে সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভির্তা। তিনি বলেছেন, ‘চীনের যেসব প্রদেশ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কয়লার ওপর নির্ভরশীল ওইগুলো তাদের অর্থনীতি ও ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনা ও ফসিলজাত জ্বালানি ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ বন্ধ করাতে হবে। এই দুই উদ্দেশ্য অর্জনে একটা ভিত্তি স্থাপন করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

অন্য আরেকটি শর্ত হচ্ছে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য একটা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা, যাতে এই সেক্টরটি চলতি দশকের শেষ দিকের প্রয়োজন মেটানোর মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

কার্বন নির্গমনের শীর্ষবিন্দু
চীন বলছে, ২০৩০ সালের আগেই তাদের কার্বন নির্গমন শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ এর পর থেকেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এমন কিছু লক্ষ্য থাকবে, যাতে চীন খানিকটা আগেই সেই শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে যেতে পারে। তবে এসব লক্ষ্য হয়তো এই পরিকল্পনার দলিলে ধাকবে না, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

সাধারণত জলবায়ু ইস্যুতে যেটা দেখা যায় তা হলো, চীন প্রতিশ্রুতি কম দিয়ে, অর্জন বেশি করতেই পছন্দ করে।

লরি মিলিভির্তা বলেন, ‘সম্ভবত ফসিলজাত নয় এমন জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা এমন হবে যাতে কার্বন নির্গমন বছরে এক শতাংশ করে বাড়তে পারে। তবে যদি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী হয় ও সার্বিকভাবে জ্বালানির চাহিদার প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চাইতে কম হয়, তাহলে হয়তো ২০২৫ সালের আগেই চীনের নির্গমনের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে যাবে।’

অন্য অনেকে অবশ্য এমন সম্ভাবনার কথা আরো জোর দিয়েই বলছেন।

কয়লার ভূমিকা
চীনে কয়লার ব্যবহার ভবিষ্যতে কী পরিমাণ হবে তা সারা বিশ্বের জন্যই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ কয়লা উৎপাদিত হয় এর অর্ধেকই ব্যবহৃত হয় চীনে। পৃথিবীতে ২০২০ সালে যতগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে এর তিন চতুর্থাংশই ছিল চীনে।

এখন চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সিনিয়র নেতারা চাচ্ছেন দেশকে কয়লা নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনতে। বাস্তবতা হচ্ছে, চীনের আঞ্চলিক সরকারগুলো বেশি করে চাকরি সৃষ্টি করতে আরো অনেকগুলো কয়লাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।

লরি মিলিভির্তা বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে যে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা দরকার। চীনের তা নেই। কাজেই আগামীতে খুব সম্ভবত যা ঘটবে তা হলো, নতুন আরো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যোগ হতে থাকবে। কিন্তু উৎপাদনে শূণ্য বা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি, যার মানে হবে অব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।’

কোভিড কতটা প্রভাব ফেলেছে?
এ সপ্তাহে প্রকাশিত কিছু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি যেভাবে ঝিমিয়ে পড়েছিল সেই মন্দাবস্থা থেকে দেশটি দ্রুতগতিতে ফিরে এসেছে। ফলে সেখানে ২০২০ সালে কার্বন নির্গমনের মোট পরিমাণও ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি।

গ্রিনপিস ইস্ট এশিয়ার লি শুও বলেন, “২০২০ সালে ইস্পাত, সিমেন্ট ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো কিছু প্রধান শিল্প উৎপাদন ২০১৯ সালের স্তর ছাড়িয়ে গেছে। এটা রীতিমতো বিস্ময়কর। করোনাভাইরাস মহামারি থেকে চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এ পর্যন্ত যতটা হয়েছে, এর মধ্যে ‘সবুজ’ বলতে প্রায় কিছুই ছিল না।”

তিনি বলেন, ‘নতুন পরিকল্পনাটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সেখানে দেখার বিষয় হবে চীন কীভাবে নতুন ও পুরনোকে একসাথে মেলাচ্ছে।’

অন্যরা বিশ্বাস করেন অপেক্ষাকৃত পরিবেশবান্ধব বা ‘সবুজ’ নীতির পথে চীনের যাত্রা হয়তো আগে যা ভাবা হতো এর চেয়ে ধীরগতির হবে।

ড্রাওয়েল্ড জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্রের ঝ্যাং শুয়েই বলেন, ‘চীন হয়তো জ্বালানি ও কার্বন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যতামূলক লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিতে পারে। কিন্তু জিডিপির প্রবৃদ্ধির মাত্রার তুলনায় তা অনেক কম হবে বলেই মনে হয়।’ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এটা খুবই সম্ভব যে নীতিনির্ধারকরা কম উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেবেন। অন্তত জ্বালানি ও কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এর কারণ হলো, জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।’

সূত্র : বিবিসি

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement
স্পেশাল অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, প্রশংসিত দেওয়ানগঞ্জের রবিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা থাই-মিয়ানমার সীমান্ত শহরের কাছে আবারো সংঘর্ষ শুরু : থাই সেনাবাহিনী পাঁচবিবিতে মোটরসাইকেল ও ট্রাক্টরের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গায় ১৪০তম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো বার্বাডোস সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে : রিজভী কুষ্টিয়ায় অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা আটক পাকিস্তানে একসাথে ৬ শিশুর জন্ম, সবাই সুস্থ ৪০ বছর ধরে মুসল্লিদের ফ্রি চা খাওয়ানো মদিনার সেই বৃদ্ধের ইন্তেকাল সৌদির কাছ থেকে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ আশা করছে পাকিস্তান!

সকল