১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিহত চীনা সৈন্যদের ‘কলঙ্ক’ দেয়ায় ব্লগার গ্রেফতার

নিহত চারজন চীনা সৈন্যের একজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। - ছবি : বিবিসি

গত বছর ভারতীয় সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষের সময় নিহত চীনা সৈন্যদের বিষয়ে অপবাদ দেয়ার অভিযোগে চীনা পুলিশ একজন ব্লগারকে গ্রেফতার করেছে।

কর্তৃপক্ষ বলছ, ৩৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ওই সংঘাতের বিষয়ে ‘বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে সত্যকে বিকৃত করেছে।’

চীনা পুলিশের পক্ষ থেকে এই ব্লগারের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে তার বংশ নাম কিউ।

ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এধরনের কথিত আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ অন্তত সাতজনকে আটক করা হয়েছে এবং সবশেষ এই ব্লগারকে গ্রেফতার করা হলো।

গত বছরের জুন মাসে এই সংঘর্ষ হয় যাতে ৪৫ বছরের ইতিহাসে বিরোধপূর্ণ ভারত-চীন সীমান্তে প্রথমবারের মতো প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

চীনে ২০১৮ সালে একটি আইন পাস করা হয় যেখানে ‘দেশের বীর ও শহীদদের নামে কলঙ্ক রটানো’ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে চায়না ডেইলি পত্রিকার একটি কলামে বলা হয়েছে এধরনের ‘অপরাধের’ জন্য চীনের ফৌজদারি আইনের আওতায় এখনই কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা যাবে না, কেননা এই আইনটির সংশোধনী এখনো কার্যকর করা হয়নি।

বলা হচ্ছে, আগামী মাস থেকে সংশোধিত আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এবং তার পরেই এই আইনের আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে।

চায়না ডেইলির একজন কলামিস্ট বলেছেন, ‘আটক ব্লগার যদি এই কাজটি আর মাত্র ১০ দিন পরে করতেন, তাহলে তিনিই হতেন এই আওতায় সাজাপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি। এটা খুবই দুঃখজনক।’

‘বীরদের নামে কলঙ্ক রটানো’
নানজিং জননিরাপত্তা ব্যুরো থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিউ নামের এই ব্লগারকে আটক করা হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তার বয়স ৩৮।

স্থানীয় রিপোর্ট অনুসারে মাল্টিব্লগিং সাইট ওয়েইবোতে তার ২৫ লাখ অনুসারী রয়েছে। তবে বিবিসির পক্ষে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। কেননা তার অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ওয়েইবোর পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে ঘোষণা করা হয়, কিউ’র অ্যাকাউন্ট এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বলা হচ্ছে, ব্লগার কিউ আটক হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। বলেছেন, তিনি ‘নেটের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই অবৈধ আচরণ করেছেন, ওয়েইবোতে তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়েছেন এবং যেসব বীর সৈনিক সীমান্ত রক্ষা করছিল তাদের নামে কলঙ্ক রটিয়েছেন।’

তার পর থেকেই তিনি ‘ঝগড়া ও সমস্যা তৈরিতে প্ররোচনা দেয়ার’ অভিযোগে আটক রয়েছেন।

চীনে সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ আনা একটি সাধারণ ঘটনা।

চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মন্তব্য করার অভিযোগে আরো কিছু ব্যক্তি আটক রয়েছেন, তবে তারা ঠিক কী বলেছেন সেবিষয়ে কিছু প্রকাশ করা হয়নি।

চীন গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে যে ভারতের লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারতীয় সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে তাদের চারজন সৈন্য নিহত হয়েছে।

এর আগে ভারতের পক্ষ থেকে ওই সংঘর্ষে ২০ জন চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেসময় চীন সরকার তাদের সৈন্য হতাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও কোনো সংখ্যার কথা উল্লেখ করেনি।

চীনের সামরিক সংবাদ মাধ্যমে পিএলএ ডেইলিতে বলা হয়, ‘যেসব সৈন্য তাদের যৌবন, রক্ত এবং জীবন দিয়েছে তাদেরকে বীর হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে।’

নিহত সব সৈন্যকে মরণোত্তর পুরস্কারও দেয়া হয়।

চীন ও ভারতের মধ্যে এই সীমান্ত বিরোধ কয়েক দশকের। এর একটি বড় কারণ হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ঠিক মতো চিহ্নিত না হওয়াকেই দায়ী করা হয়।

নদী, হ্রদ, তুষারে ঢাকা পাহাড় ও পর্বতসঙ্কুল দুর্গম এলাকাটিতে সীমান্ত চিহ্নিত করা খুব কঠিন। কোথায় চীন আর কোথায় ভারত অনেক জায়গাতেই সেটা স্পষ্ট নয়। ফলে অনেক জায়গাতেই দু'দেশের সৈন্যরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে যখন সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটে।

তবে দুটো দেশের মধ্যেই এরকম পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে।

এ বছরের জানুয়ারি মাসেও ভারতের সিকিম সীমান্তে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, যাতে উভয়পক্ষের সৈন্যরা আহত হয়। তার পর থেকে দুটো দেশই সেসব জায়গা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে সম্মত হয় এবং এই কাজটাই এখন চলছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement