২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমারের বিক্ষোভে সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক বিক্ষোভকারী - ছবি : রয়টার্স

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে টানা তিন সপ্তাহ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায় সামরিক শাসনের প্রতিবাদ ও ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চিসহ সকল বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়।

শনিবার বিক্ষোভে মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিকরাও অংশ নেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধীকারে সুচির অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থতা সত্ত্বেও মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তারা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে জানান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালায়ে পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শিপইয়ার্ড শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। কয়েক জন বিক্ষোভকারী গুলতি ছোড়ার জবাবে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। তবে পুলিশ কি রাবার বুলেট না তাজা গুলি ছুড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন চিকিৎসক জানান, এই ঘটনায় অন্তত এক ব্যক্তি কোনো প্রকার গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে শুক্রবার পুলিশের গুলিতে আহত সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা নারী বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও গুলি ছুড়লে তিনি আহত হন। মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে এটিই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা।

শনিবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইন নামের ২০ বছর বয়সী নিহত ওই বিক্ষোভকারীর এক স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভকারী ফুল দিয়ে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

একই ধরনের অন্য একটি অনুষ্ঠান রাজধানী নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়। খিন মাও মাও ও নামের শিক্ষার্থী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তার মৃত্যু এক দিক থেকে কষ্টের, কিন্তু তার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা আমরা পেয়েছি।’

ইয়াঙ্গুনের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা দেশটির সংখ্যালঘু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বর্ণিল পোশাক পরে অংশ নেন। ফেডারেল ব্যবস্থায় দেশটিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠাও বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

কারেন সম্প্রদায়ের সদস্য নাও ইহ তো হাও বলেন, ‘সামরিক বাহিনী জাতিগত গোষ্ঠীর বিভক্তির মাধ্যমে শাসন করতে চায়। আমরা তা হতে দিতে পারি না।’

নাগা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যুব নেতা ও ইয়াঙ্গুনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজক কে জাং বলেন, ‘একনায়কের অধীনে আমরা ঐক্যবদ্ধ দেশ গঠন করতে পারি না। আমরা জান্তাকে গ্রহণ করতে পারি না।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ক্ষমতায় আসার পর তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন অং সান সু চি। সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মী সম্প্রদায়ভুক্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই নেত্রী বিশেষভাবে সমালোচিত হন ২০১৭ সালে দেশটির উত্তরের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমান বিরোধী দমন অভিযানে সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করতে ব্যর্থ হওয়ায়। সহিংস ওই ঘটনায় সাত লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধিবাসী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

কে জাং জানান, সংখ্যালঘু কিছু সম্প্রদায় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এখনো অংশ নিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘জাতিভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মিত্রতা তৈরিতে অং সান সুচির ব্যর্থতায় এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।’

কে জাং বলেন, ‘তবে এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। আমরা সাধারণ মানুষের পাশেই একসাথে দাঁড়াবো। একনায়কের পতন পর্যন্ত আমরা লড়াই করবো।’

সংখ্যালঘু চিন সম্প্রদায়ের তরুণ নেতা সালাই মন বই চার দাবির কথা জানান : বর্তমান সংবিধান থেকে নিস্তার, একনায়কতন্ত্রের পতন, ফেডারেল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সব নেতাদের মুক্তি।

সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু লোক হয়তো এনএলডিকে পছন্দ করেন না কিন্তু আমরা এনএলডির প্রসঙ্গে আলাপ করছি না।’

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা শত শত বিক্ষোভকারী ইয়াঙ্গুনের সুলে প্যাগোডায় জড়ো হয়ে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দেন।

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স ও আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement