২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিয়ানমারে অভ্যুত্থান

সেনাবিরোধী বিক্ষোভ দমাতে গুলি, সড়কে মোতায়েন ট্যাঙ্ক

ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় মোতায়েন সাঁজোয়া যান - ছবি : সংগৃহীত

মিয়ানমারে চলমান সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দমনে গুলি করছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সামরিক জান্তা।

রোববার সেনাবিরোধী চলমান বিক্ষোভের নবম দিনে দেশটির উত্তরের কাচিন প্রদেশে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সৈন্য মোতায়েন করা হয়। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের আশঙ্কা থেকে বিক্ষোভকারীরা ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানালে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ছোঁড়ে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করছে। তবে তাজা গুলি না রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে রোববার বিকেল থেকে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো বিভিন্ন শহরে সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার রাজধানী ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র শুলে প্যাগোডাতে ডজনখানেক পুলিশের ট্রাক ও জলকামানের চারটি যান মোতায়েন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের ‘নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ের’ আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে দেশটিতে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত এক টুইট বার্তায় বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনে যেকোনো দমনমূলক অভিযানে দায়বদ্ধতার বিষয়ে সামরিক জান্তাকে সতর্ক করেন।

জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘মনে হচ্ছে জেনারেলরা মিয়ানমারের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি দুঃসাহসের চিহ্ন। জেনারেলরা সাবধান : আপনারা দায়ী থাকবেন।’

এদিকে বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট সংযোগে বাধা নজরদারি করা সংস্থা নেটব্লকস এক টুইটার বার্তায় জানায়, স্থানীয় সময় রোববার দিবাগত রাত ১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা) ইন্টারনেট মিয়ানমারে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আট ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর তা আবার চালু করা হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারীই সংযোগ পাচ্ছেন না।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমনে সহিংসতার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিক্ষোভ দমনে শক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং প্রধান প্রধান শহরে সাঁজোয়া যান মোতায়েনের সংবাদে তিনি উদ্বিগ্ন।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মিয়ানমারের ১৫টি কূটনীতিক মিশন যৌথ এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের জনগণের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি ও উন্নতির পথে সংগ্রামে সমর্থন জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি বিক্ষোভকারী ও বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে, যারা তাদের বৈধ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির প্রতিবাদ করছে।’

অভ্যুত্থানের পর থেকে এই পর্যন্ত মিয়ানমারে অন্তত চার শ’ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণকারী দল অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনারস জানিয়েছে, বেশিরভাগকেই রাতে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, তাতমাদাও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement