২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হিরোশিমার বোমা থেকে মিচিকো যেভাবে দৌড়ে বেঁচেছিলেন

নিজের মেয়ে সানি এবং মেয়ের জামাই নোবু হামাদার সাথে মিচিকো - ছবি : সংগৃহীত

হিরোশিমায় বোমা পড়লো যেদিন, ভাগ্যক্রমে সেদিন অল্পের জন্য প্রাণ বেঁচেছিলেন মিচিকো ইউশিটসুকা। হিরোশিমায় সেদিন যে ভয়ংকর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি, বাকী জীবন তাকে এর ভার বহন করতে হয়েছে। সেই কাহিনি লিখেছেন তারই নাতনি জামাই কলিন ইন্স:

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের সেই সকালে মিচিকো ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলেছিলেন।

‘আমার মনে আছে, আমি ভাবছিলাম যদি পরের ট্রেনটা ধরতে পারি, তাহলেও আমি সময়মতো কাজে পৌঁছাতে পারবো। কিন্তু আবার ভাবছিলাম, যদি আমি দৌড়ে স্টেশনে যেতে পারি, তাহলে হয়তো আগের ট্রেনটাই ধরতে পারবো।’

সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মিচিকো এই কথাগুলো লিখেছিলেন আরো বহু বছর পরে।

‘আমি দৌড়ে ইয়োকোগাওয়া স্টেশনে পৌঁছালাম এবং লাফ দিয়ে সেই ট্রেনটিতে উঠতে পারলাম, যে ট্রেনটিতে চড়ে আমি প্রতিদিন কাজে যাই।’

মিচিকো যে সেদিন এভাবে দৌড়ে ট্রেনটিতে উঠতে পেরেছিলেন, এটি তার জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল। সময়মতো তিনি কর্মস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। হিরোশিমায় যখন বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা বিস্ফোরিত হচ্ছে, তখন মিচিকো অনেক দূরে তার কারখানায় নিরাপদ আশ্রয়ে।

বিশ্বে সেই প্রথম এবং শেষ কোন যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল পরমাণু বোমা।

‘যদি আমি সেদিন আমার প্রতিদিনের নিয়মিত ট্রেনটি ধরতে না পারতাম, আমি হয়তো ইয়োকোগাওয়া স্টেশন এবং হিরোশিমা স্টেশনের মাঝামাঝি কোন জায়গায় মারা যেতাম’, লিখেছিলেন তিনি।

মিচিকো ইউশিটসুকার বয়স তখন ১৪। হিরোশিমা শহরের একেবারে কেন্দ্রে মেয়েদের এক স্কুলে পড়েন। যুদ্ধের কাজে সাহায্য করার জন্য এই স্কুলের মেয়েদেরও একদিন ডাক পড়লো। মিচিকো কাজ শুরু করলেন টয়ো কোগিও কারখানায়। এটি ছিল শহর কেন্দ্র থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে। এই কারখানায় জাপানি সামরিক বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র তৈরি করা হতো।

মিচিকো যে সেদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছিলেন, তার কারণ আলসেমি নয়। আসলে তিনি খুব বেশি ক্লান্ত ছিলেন। এর আগের দিন তাকে অনেক লম্বা সময় কারখানায় কাজ করতে হয়েছিল।

যুদ্ধের কারণে জাপানে তখন ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। মিচিকোও প্রায়শই খেয়ে-না খেয়ে থাকেন। আগের রাতে হিরোশিমার আকাশে চক্কর দিচ্ছিল মার্কিন বি-২০৯ বোমারু বিমান। বার বার শত্রু বিমানের সতর্কতা জানিয়ে সাইরেন বেজে উঠছিল। সকাল সাতটার দিকে শেষবার সাইরেন বাজলো, এবারেরটা ‘অল ক্লিয়ার সাইরেন।’ তার মানে বিপদ কেটে গেছে, আকাশে আর কোনো শত্রু বিমান নেই।

কিন্তু হিরোশিমার ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে জানতেন না মিচিকো। ‘ম্যানহাটান প্রজেক্টের‌’ লোকজন ছাড়া কেউই আসলে জানতো না।

‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট' ছিল মার্কিন সরকারের এক অতি গোপন গবেষণা প্রকল্প। এরাই তৈরি করেছিল বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা।’

এর কয়েক ঘন্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের মারিয়ানা আইল্যান্ডসের তিনিয়ান ঘাঁটি থেকে যাত্রা আকাশে উড়েছে ইনোলা গে। যে পরমাণু বোমাটি এই বিমানে বহন করা হচ্ছিল, মার্কিনীরা মজা করে তার দিয়েছিল ‘লিটল বয়’। সকাল ঠিক ৮টা ১৫ মিনিটে হিরোশিমার ওপর ফেলা হলো বোমাটি।

আনুমানিক ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ সেদিন বোমা বিস্ফোরণের পর তাৎক্ষণিকভাবে বা পরবর্তী মাসগুলিতে মারা গিয়েছিল।

মিচিকো সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তাকে রক্ষা করেছিল হিজিয়ামা পর্বত। হিরোশিমা শহরের কেন্দ্র আর তার কারখানার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এটি। বোমা বিস্ফোরণের পর এই পাহাড়টি তাদের সুরক্ষা দিয়েছিল।

বিস্ফোরণের পর আকাশে যে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা যাচ্ছিল, হিজিয়ামা পর্বতের অপর পাশ থেকে তা দেখেছিলেন মিচিকো।

এরপর যে হট্টগোল শুরু হলো, তার মধ্যে মিচিকো দৌড়ে গেলেন নাকায়ামাটোগের দিকে। এটি এক পাহাড়ি পথ। এই পথ চলে গেছে গিওনে তার এক আত্মীয়ের বাড়ির দিকে। সেই পথে মিচিকো দেখলেন, হাজার হাজার মানুষ ধ্বংস হয়ে যাওয়া হিরোশিমা থেকে পালাচ্ছে।

মিচিকো লিখেছেন, ‘সব জায়গায় কেবল আহত মানুষ। আমি বহু মানুষের পুড়ে যাওয়া, গলিত দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। বিস্ফেরণের ধাক্কায় বাতাসের চাপে তাদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে। অনেকের দেহের ভেতরের প্রত্যঙ্গ শরীর থেকে বা মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে।’

‘আমি যখন হাঁটছি, কেউ একজন হঠাৎ আমার গোড়ালি ধরে টান দিল এবং মিনতি করতে থাকলো, তুমি কি আমাকে একটু পানি দিতে পার? আমি তার হাতটা ছাড়িয়ে দিলাম… এবং বললাম, আমি দুঃখিত, আমাকে মাফ করো! আমার খুব ভয় করছিল এবং আমি পালানোর জন্য দ্রুত হাঁটতে থাকলাম।’

‘আমি আর আমার মা এরপর দশদিন ধরে হিরোশিমার চারদিক হেঁটে বেড়ালাম। আমরা আমার বড় ভাইকে খুঁজছিলাম। ও ছিল একজন সৈনিক। আমরা পরে আবিস্কার করি, ও মারা গিয়েছিল বিস্ফোরণের একেবারে কেন্দ্রে। … আমার ভাইয়ের দেহাবশেষ আমরা কোনদিনই খুঁজে পাইনি।’

মিচিকো হয়তো প্রাণে বেঁচে গেলেন, কিন্তু এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখনো যেসব ডাক্তার বেঁচে ছিলেন, মিচিকোর লক্ষণগুলো ততদিনে তারা আরও অনেকের মধ্যেই দেখেছেন।

‘আমার মধ্যে তেজস্ক্রিয় বিকীরণের লক্ষণ দেখা দিল... আমার মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছিল, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। আমার প্রচন্ড ডায়ারিয়া হলো। আমার চুল পড়তে শুরু করলো এবং আমার সারা শরীরে বেগুনি চাকা চাকা দাগ দেখা দিতে লাগলো’, লিখেছেন মিচিকো।

‘এক পারিবারিক বন্ধুর বাড়ির বাইরের একটি ছাউনিতে আমাকে আলাদা করে রাখা হলো। আমি যেন জীবন আর মৃত্যুর মাঝে দুলছিলাম। আমার চারপাশে যারা ছিল, সবাই ভাবছিল, আমি মারা যাব। কিন্তু আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে উঠলাম।’

যুদ্ধ থামাতে বড় ভূমিকা রাখে মার্কিন নৌবাহিনীর অবরোধ, রাশিয়ার আসন্ন আক্রমণের হুমকি আর পটসড্যাম ঘোষণা- যাতে জাপানের আত্মসমর্পনের শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল। জাপানে সম্রাটের শাসন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও এক্ষেত্রে কাজ করে।

১৫ আগস্ট সম্রাট হিরোহিতো যে আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেন, সেটি রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়। যখন তিনি ঘোষণা করেন যে জাপানকে অবশ্যই ‘অসহনীয় ভার সইতে হবে’, তখন হিরোশিমার অনেক মানুষ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। তাদের মনে প্রশ্ন, আমরা কি এই ভার এরই মধ্যে বহন করিনি?

এর পরের দিন, সপ্তাহ আর মাসগুলোতে হিরোশিমা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলো।

বোমা হামলার তিনদিন পরেই ট্রেন, ট্রাম আর বাস চলতে শুরু করলো আবার। দুই মাসের মধ্যে স্কুল খুললো। ক্লাশ নেয়া হচ্ছিল প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলভবনে কিংবা খোলা আকাশের নীচে।

হিরোশিমার সব ব্যাংক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। টিকে ছিল কেবল একটি, ব্যাংক অব জাপান। প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক অব জাপান তাদের অফিসে এসে কাজ করতে বললো। হিরোশিমা আবার ছাই থেকে উঠে দাঁড়ালো।

‘১৯৪৮ সালে আমার বয়স ছিল ১৮, তখন আমার বিয়ে হয়। ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে আমার প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম নিল। কিন্তু জন্মের দু সপ্তাহ পরেই মেয়েটি মারা যায়। আমার বিশ্বাস, পরমাণু বোমার যে প্রতিক্রিয়া, তার কারণে আমার সন্তান মারা গিয়েছিল।’

পরে অবশ্য মিচিকো আরো দুটি সুস্থ শিশুর জন্ম দেন। কিন্তু তখন নতুন এক সমস্যা দেখা দিল। তার স্বামী প্রায়শ্‌ই উধাও হয়ে যেতেন। তার গোপন প্রেমিকার সঙ্গে সময় কাটাতে। যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে যেতেন মিচিকোর উপার্জিত অর্থ।

মিচিকো ক্লান্তি আর অবসাদে ভেঙ্গে পড়লেন। একদিকে তেজস্ক্রিয় বিকীরণজনিত অসুস্থতা, আরেকদিকে স্বামীর গোপন প্রণয়। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য আকুল হয়ে উঠলেন তিনি। নিজের দুই সন্তানকে তিনি প্রায়শই আত্মীয়দের কাছে রাখতেন দেখাশোনার জন্য। যখন তারা ফিরে আসতো, নিজের হতাশার ঝালটা ঝাড়তেন মেয়ে সানির ওপর।

‘১৯৬৪ সালে আমার মা ক্যান্সারে মারা গেলেন। আমার পরিবারে আমি ছাড়[আর কেউ রইলো না। আমার মা যুদ্ধে নিহত সৈনিকের পরিবারের একজন হিসেবে কিছু ভাতা পেতেন। আমার মা মারা যাওয়ার পর সরকার সেই ভাতা দেয়া বন্ধ করে দিল‍।’

মিচিকো যখন শেষ পর্যন্ত তার স্বামীকে একদিন মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ করলেন, তখন তিনি স্বীকার করলেন যে তিনি প্রেম করছেন। তার স্বামী তখন সেই প্রেমিকার কাছে চলে গেলেন। মিচিকোর তখন নিজের কোন আয় নেই, স্বামীর দিক থেকেও কোন আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। সরকারও কোন সাহায্য দিচ্ছে না। ভীষণ আর্থিক সংকটে পড়ে গেলেন।

একটি ঐতিহ্যবাহী জাপানি রেস্টুরেন্টে তিনি কাজ খুঁজে নিলেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি কিমোনো পরে সেখানে কাজে যেতেন। রেস্টুরেন্টে আসা কাস্টমারদের খাবার পরিবেশন করতেন অনেক রাত পর্যন্ত।

প্রতি বছর আগস্টের ৬ তারিখে হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত হতো শান্তি সম্মেলন। সেখানে আসতেন মাদার টেরেসা, ফিদেল ক্যাস্ত্রো এবং মিখাইল গর্বাচেভের মতো ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রনায়ক। কিন্তু সেখানে দেয়া বক্তৃতায় যেসব ভালো ভালো কথা বলা হতো, সেগুলো সহ্য করতে পারতেন না মিচিকো। যেদিন হিরোশিমায় বোমা পড়েছিল, সেদিনের দৃশ্যের সঙ্গে তিনি এসব কথা মেলাতে পারতেন না। তাই তিনি কখনোই এই অনুষ্ঠানে যেতেন না।

মিচিকোর মেয়ে সানির একটি মেয়ে এবং ছেলে সন্তান হলো। এরপর থেকে যেন মিচিকোর সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্ক ঠিক হতে শুরু করলো। জাপানে আগস্টে ছুটির সময়ে যে ওবন উৎসব হয়, তখন প্রতিটি পরিবার তার পূর্ব পুরুষদের সন্মান জানায়। মিচিকো এই উৎসবের সময় তার মেয়ে সানির কাছে যেতেন। তারা দুজনে একসঙ্গে কোন টিভিতে কোন নাটক দেখতেন, যার কাহিনী হয়তো হিরোশিমায় বোমা হামলার ঘটনাকে ঘিরে। এটি মিচিকোর খুব একটা ভালো লাগতো না।

‘আন্না মনো জানাই‌‌’- ব্যাপারটা মোটেই এরকম ছিল না’, বলতেন তিনি।

মিচিকো তার জীবনের বাকী সময়টাতে ১৯৪৫ সালের সেই অভিজ্ঞতার কথা খুব কমই বলতেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে যখন এই বোমা হামলার ৫০তম বার্ষিকী এগিয়ে আসলো, মিচিকোর ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিলেন তিনি যেন এই ঘটনার ব্যাপারে নিজের স্মৃতি লেখেন। এটা তার মনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে

শুরুতে মিচিকো এটা করতে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, যদি নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখে রেখে না যান, এগুলো চিরতরে হারিয়ে যাবে।

হিরোশিমা ততদিনে এক জমজমাট আধুনিক নগরী। প্রশস্ত সব রাস্তা, বিলাসবহুল সব ডিপার্টমেন্ট স্টোর। শহরটি যে বিয়োগান্তক ঘটনার শিকার হয়েছিল, তার খুব কম চিহ্ণই তখন আর অবশিষ্ট আছে।

মিচিকো তখন হিরোশিমার একেবারে কেন্দ্রে সরকারের দেয়া একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। সেখান থেকে তিনি চলে যান শহরতলির কাছে হেসাকায়। তার নতুন ফ্ল্যাটটি সেই পাহাড়ি রাস্তা নাকায়ামাটোগের কাছে, হিরোশিমায় বোমা পড়ার দিন যে রাস্তা ধরে তিনি হেঁটেছিলেন।

সেদিন তার গোড়ালি ধরে একজন আহত মানুষের টান দেয়ার ঘটনার স্মৃতি তাকে এখনো তাড়া করে।

‘আমার স্মৃতি থেকে আমি কোনদিনই সেই কন্ঠস্বরটি মুছে ফেলতে পারবো না’, লিখেছেন তিনি।

যখন আমি প্রথম হিরোশিমায় আসি, আমি এর ইতিহাস সম্পর্কে খুব কমই জানতাম। কিন্তু আমি কাওরি নামের এক মেয়ের দেখা পাই। যে আমাকে মিচিকোর গল্প করেছিল। মিচিকো ছিল তার নানী। বহু বছর পর আমি এবং কাওরি যখন স্বামী-স্ত্রী, তখন আমরা মিচিকোর বিবরণ লিপিবদ্ধ করি। তার করুণ কাহিনি এবং বেঁচে থাকার জন্য তার তীব্র আকুতি আমাকে নাড়া দিয়েছিল।

আমার স্ত্রীর মনে আছে, মিচিকো তার শেষ জীবনে তীব্র বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

যে সমাজে সততার চেয়ে স্তাবকতাকে বেশি মূল্য দেয়া হয়, সেখানে বন্ধু পেতে তাকে সবসময় কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু এতদিনে তিনি আসলেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তিনি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হন। তাকে এক বৃদ্ধনিবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মিচিকো মারা যান ২০১২ সালের জানুয়ারিতে।

হিরোশিমায় বোমা ফেলার ঘটনার যে স্মৃতিচারণ তিনি লিখে গেছেন, সেটি সংরক্ষিত আছে হিরোশিমার শান্তি স্মারক হলে। যে দিনটি পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছিল, বদলে দিয়েছিল তার নিজের জীবন, সেই দিনটির স্মৃতি।

মানুষ যে সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে পারে এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে, তার স্মৃতিকথার শেষ লাইনটি সেটাই মনে করিয়ে দেয়।

‘পরমাণু বোমার ৫০তম বার্ষিকীতে আমি নতুন করে অনুভব করতে পারি জীবন কতটা মূল্যবান।’

 


আরো সংবাদ



premium cement