২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আফগান জেলে আইএস হামলা

- ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানের একটি জেলে হামলা চালালো আইএস উগ্রবাদীরা। পালালেন বহু বন্দি। ঘটনায় মৃত তিন। আহত বহু।

একেবারে সিনেমার মতো। আফগানিস্তানের জালালাবাদে সরকারি কারাগারে আক্রমণ চালালো উগ্রবাদীরা। একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটালো। চলল গুলির লড়াই। তারই মধ্যে জেল থেকে পালালেন বহু তালেবান এবং আইএস উগ্রবাদী। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। গুরুতর আহত ২৪ জন।

রোববার আচমকাই জালালাবাদের ওই জেলে আক্রমণ চালায় জঙ্গিরা। প্রথমে জেলের ঠিক বাইরে একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণ হয়। তা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলের ভিতরে হানা দেয় উগ্রবাদীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, জেলের ভিতরে অন্তত দুইটি ছোট ছোট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অতর্কিত এই আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে জেলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী। তারা কিছু করে ওঠার আগেই গুলিবৃষ্টি শুরু করে উগ্রবাদীরা। তাতেই মৃত্যু হয় তিনজনের।

তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে নিরাপত্তরক্ষীরাও। প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের গুলি বিনিময় হয়। কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। আর এরই সুযোগে জেল থেকে পালান বহু বন্দি। যার মধ্যে বহু তালেবান এবং আইএস জঙ্গি রয়েছে বলে প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে।

কারা ঘটালো
ঘটনার পরেই তালেবান বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। বিকেলের দিকে আইএস উগ্রবাদীরা জানায়, তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মূলত, সহকর্মীদের মুক্তির জন্যই এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আফগান সরকারকে সতর্কও করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।

ঈদ উপলক্ষে তালেবান এবং আফগান সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তাতেও ঈদে সহিংসতা এড়ানো যায়নি। ঈদের কয়েক দিন আগে তালেবান অধ্যুষিত এলাকায় এয়ার স্ট্রাইক করেছে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী। যাতে অন্তত আটজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ঈদে আগের দিন একটি বাজারে বিস্ফোরণ ঘটে। ঈদের বাজার করতে আসা বহু মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত সেই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি কোনও সংগঠন। তারপরেই রোববারের ঘটনা ঘটল।

হামলার ব্যাখ্যা
তালেবান অবশ্য কিছু দিন আগেই জানিয়েছিল ঈদের পর আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে তারা আগ্রহী। রোববারের ঘটনার পর তা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, রোববারের ঘটনায় তালেবানেরও মদত আছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই তারা দাবি করছে, চুক্তিমতো তাদের সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

বস্তুত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা এবং আফগান সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তালেবানের। সেখানে পাঁচ হাজার তালেবানকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু এখনও প্রায় পাঁচশো বন্দির মুক্তি হয়নি বলে তালেবানের দাবি। এ দিন জালালাবাদ জেলের ঘটনায় বহু তালেবান বন্দি পালাতে পেরেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এখনও আইএস
এই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। ২০১৯ সালেই আফগান সরকার রীতিমতো জোরের সঙ্গে দাবি করেছিল, আফগান ভূখণ্ডে আইএস উগ্রবাদীদের শক্তি পুরোপুরি শেষ করে দেওয়া গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কী করে রোববারের ঘটনা ঘটল?

বস্তুত, এ দিনের ঘটনার পরে আইএস যে ভাবে আক্রমণাত্মক বিবৃতি জারি করেছে, তা গোটা এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement