২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কায় বিতর্কিত গোটাবায়ার জয়ের নেপথ্যে

গোটাবায়া রাজাপাকসে - ছবি : বিবিসি

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে বিজয়ী হয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসের ভাই গোটাবায়া পেয়েছেন ৫২ শতাংশের বেশি ভোট।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন, এবং সোমবারই হয়তো গোটাবায়া রাজাপাকসে শপথ নিতে যাচ্ছেন।

গোটাবায়া রাজাপাকসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের যেভাবে দমন করেছিলেন তা নিয়ে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হয়েও কেন বিজয়ী হলেন তিনি?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, এই নির্বাচনকে ঘিরে শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে বিভক্তি ছিল স্পষ্ট ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটাবায়া রাজাপাকসে সিংহলি সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় বেশি ভোট পেয়েছেন, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমাদাসার জনপ্রিয়তা ছিল সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিমদের মধ্যে।

কিন্তু নির্বাচনের আংশিক ফল বেরুনোর পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, গোটাবায়া রাজাপাকসেই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।

গোটাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলিদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রায় দশ বছর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এবং শ্রীলংকায় তামিলদের সাথে গৃহযুদ্ধের অবসানের কৃতিত্ব দেয়া হয় তাদের।

সেসময় গোটাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেরকম কঠোর এবং নিষ্ঠুরভাবে তিনি দমন করেছিলেন, সেজন্যে তিনি বেশ বিতর্কিত।

তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনেরও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু রাজাপাকসে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।

এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানেও রাজাপাকসে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

তার বিজয়ে শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিরা বেশ উৎফুল্ল।

সাংবাদিকদেরকে একজন ভোটার বলেন, তিনি সবসময়ই চেয়েছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসেই যেন প্রেসিডেন্ট হন। আরেকজন বলেন, রাজাপাকসে শ্রীলংকার নিরাপত্তার ব্যাপারে যেসব অঙ্গীকার করেছেন, তার সাথে তিনি একমত বলেই তিনি তাকে সমর্থন দিয়েছেন।

অন্যদিকে এক টুইটে গোটাবায়া রাজাপাকসে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে বলেন, শ্রীলঙ্কার সব মানুষ এই নতুন যাত্রার সাথী।

অন্যদিকে সাজিথ প্রেমাদাসা ভালো করেছেন তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলে।

তিনি জোরালো সমর্থন পেয়েছিলেন তামিল এবং মুসলিমদের কাছ থেকে।

কিন্তু শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকারের সাথে প্রেমাদাসার সম্পর্ক তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছিল।

শ্রীলঙ্কা গত কিছুদিন ধরে যে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে দেশটিকে স্থিতিশীল করতে রাজাপাকসে ভূমিকা রাখবেন বলে তার সমর্থকরা আশা করছেন।

গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় এক ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর এটি ছিল শ্রীলঙ্কায় প্রথম নির্বাচন। ইসলামিক স্টেটের সাথে সম্পর্কিত উগ্রবাদীরা শ্রীলংকার গির্জা এবং অভিজাত হোটেলগুলোকে টার্গেট করে এই হামলা চালিয়েছিল, যাতে নিহত হয় আড়াইশ’র বেশি মানুষ।

রাজাপাকসে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকে। অন্যদিকে তিনি আরো বলেছিলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন।

চীনের কাছে শ্রীলঙ্কা যেরকম ঋণগ্রস্ত, সেটি নিয়ে দুদেশের সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন চলছে। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে এটি বেশ স্পর্শকাতর বিষয়।

সে কারণে বিশ্লেষকদের মতে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কাজটি সহজ হবে না, বিশেষ করে যখন তাকে ভারতের সাথেও একটি ভারসাম্যপূর্ণ বজায় রাখতে হবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement