২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

টাইফুনে তছনছ জাপান : নিহত ৩৩, নিখোঁজ ১৯

শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে লণ্ডভণ্ড জাপান - নয়া দিগন্ত

জরুরি অবস্থা জারি। এতো সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সর্বোচ্চ প্রস্তুতির পরও বাতাসের গতি আর ভারী বৃষ্টির কাছে হেরে গেলেউন্নত প্রযুক্তির দেশ জাপান। ৭ লাখেরও বেশি লোক উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়ার পরও প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় ‘হাগিবিস’এর আঘাতে এ পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি জাপান উপকূলের কাছে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে ১২ ক্রু সদস্য ডুবে মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আহত হয়েছে ২ শতাধিক।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জাপান টাইমসের সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে। শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিস ‘ক্যাটাগরি-৩’ মাত্রার ঝড়ে ক্ষতগ্রিস্ত এলাকার মানুষের উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে জাপানের ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দেশটির জরুরি আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা ইয়াসুশি কাজিওয়ারা জানান, ভারি বর্ষণে গ্রাম ও শহরে জরুরি সর্তকতা জারি করা হয়। তবে রোববার সকালে টাইফুনটি দুর্বল হয়ে পূর্ব উপকূলে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্বদিকের সমুদ্রের উপর এখন একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

জাপানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, হাগিবিসের আঘাতে কানাগাওয়া, টচিগি, গুনমা, ইওয়াতে, মিয়াগি, শিজুওকা, ইয়ামানাশি, নাগানো, ফুকুশিমা, চিবা ও সাইতামা প্রশাসনিক অঞ্চলে  সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। রোববার জাপান টাইমস অনলাইনের খবরে বলা হয়, বিগত ৬০ বছরের মধ্যে জাপানে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এটি। শনিবার টোকিওর দক্ষিণে হণশু দীপের উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। এসময়  ঘূর্ণিঝড়টির গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি থেকে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। সমুদ্রে উচ্চ ঢেউয়ের পাশাপাশি কমপক্ষে ১৪টি এলাকার নদীর তীর উপচে পানিতে প্লাবিত হয় আশপাশের আবাসিক এলাকা। কোথাও কোথাও ভূমিধসও হয়।

বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে জাপানের সেনাবাহিনী

 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জাপানের নাগানোতে। চিকুমা নদীতে জলোচ্ছ্বাসের কারণে আশপাশের এলাকা তলিয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যায়। এ পর্যন্ত ২ শতাধিক জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার-তৎপরতা চালাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে জাপানের সেনাবাহিনী। বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকে তোয়ালে নেড়ে দুর্গত মানুষ সেনাবাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

এনএইচকে আরো জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশ প্রচন্ড ঝড়ের কবলে, ভূমিধস ও বন্যার পানি বেড়ে যাওয়া ও গাড়িতে আটকে পড়ে মারা গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় ও গাছপালা উপড়ে পড়ে যায়। জরুরি সতর্কতা জারি করার পর লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত খাবার মজুত করে রাখে। ফলে সুপার মার্কেটগুলোতে পণ্য স্বল্পতা দেখা দেয়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশটির বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন সার্ভিস ও টোকিও’র  বেশিরভাগ মেট্রোর চলাচল শনিবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে হয়ে যাওয়া ভয়াবহ এক ঝড় মোকাবিলার ইতিহাস রয়েছে জাপানের। ওই বছর ৩০৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় আঘাত হেনেছিল। ওই ঝড়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বা নিখোঁজ ছিল। চারিদিকে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় প্রতিবছর জাপানে ২০ টির মতো টাইফুন আঘাত হেনে থাকে। তবে ৬০ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ ঝড়ের আঘাত।

হোকুরিকু বুলেট ট্রেন ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত

পূর্ব জাপান রেলপথ কোম্পানি বা জেআর ইস্ট বলছে, হোকুরিকু বুলেট ট্রেন লাইনের জন্য ব্যবহৃত তাদের বুলেট ট্রেনগুলোর এক-তৃতীয়াংশ বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেআর ইস্ট বলছে, মধ্য জাপানের নাগানো জেলার আকানুমায় অবস্থিত কোম্পানির একটি স্থাপনায় পানি প্রবেশ করেছে। উল্লেখ্য, "বুলেট রেল-বগি কেন্দ্র" নামক এই স্থাপনাটি সাধারণত বুলেট ট্রেন রাখা বা মেরামতের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কোম্পানি কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ১২০টি বগিসহ মোট ১০টি ট্রেনের ক্ষতি নিশ্চিত করা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনগুলোর মধ্যে ই-৭ সিরিজের ৮টি এবং ডব্লিউ-৭ সিরিজের ২টি ট্রেন রয়েছে যা হোকুরিকু লাইনের জন্য ব্যবহৃত মোট ৩০টি ট্রেনের অন্তর্ভুক্ত। কর্মকর্তারা বলছেন, হোকুরিকু লাইনের ট্রেন চলাচল পুনরায় পুরোপুরি চালুর কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। তারা বলছেন, অপেক্ষাকৃত কম রেলগাড়ি নিয়েই হয়ত তাদের ট্রেন চলাচল কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হতে পারে। জেআর নাগানো স্টেশনের উত্তরপূর্বে চিকুমা নদীর পশ্চিম দিকে এই কেন্দ্র অবস্থিত। উল্লেখ্য, শনিবার তাইফুন হাগিবিস ঐ অঞ্চলে আঘাত হানার পর নদীটির পানি তীর উপচে প্রবাহিত হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে জাপানের বুলেট ট্রেনের লাইন

 

এদিকে কিয়োদোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী টাইফুন শুরু হওয়ার পরপরই জাপানের পূর্ব উপকূলের হনশু দ্বীপে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

এদিকে জাপান টাইমসের খবরে স্থানীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, টোকিও উপসাগরে পানামার একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এতে ১২ ক্রু সদস্য ডুবে মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের, সাতজন চীনের এবং দু'জন ভিয়েতনামের নাগরিক। অপরদিকে  রোববার সকালে অপর একটি জাহাজের চার ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement