২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
এপির বিশ্লেষণ

৭০ বছরে এসে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে চীনের কমিউনিস্ট শাসন

শি জিন পিং
শি জিন পিং - ছবি : সংগৃহীত

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। তা হলো ২০৪৯ সালের মধ্যে, অর্থাৎ কমিউনিস্ট শাসনের ১০০তম বার্ষিকীকে সামনে রেখে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে ‘জাতীয় পুনরুজ্জীবন’ অর্জন করা। কিন্তু সমস্যা হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পও ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মহান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।

অর্থাৎ একটি উদীয়মান শক্তি (চীন) এবং বিশ্বের বুকে কর্তৃত্ববাদী একটি শক্তির (যুক্তরাষ্ট্র) মধ্যে বিদ্যমান সঙ্ঘাতের ফলে সৃষ্ট একঝাঁক নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে চীন তার কমিউনিস্ট শাসনের ৭০তম বার্ষিকী পালন করছে আজ। এর আগে কেবল সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারই ৭৪ বছর দেশ শাসন করেছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের এ রেকর্ড চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে ফেলবে এটি প্রায় নিশ্চিত। ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক স্থবিরতার ভারে সোভিয়েত সরকারের পতন হয়।

বিপরীতে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি একটি লক্ষণীয় নীতি অবলম্বন করেছে, যা লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে এবং দেশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। অবশ্য এ সময়টিতে সব বিরোধী শক্তিকে দমনও করা হয়েছে। কিন্তু এই নীতি, যা বছরের পর বছর দ্বিগুণ হারে বিকাশের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট শাসনকে ভালোভাবেই উপস্থাপন করেছে তা অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই আমেরিকার স্বার্থের সাথে সংঘর্ষিক হওয়ার কারণে পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। কেননা অতীতের বছরগুলোর চেয়ে বর্তমান সময় আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লেরামন্ট ম্যাককেনা কলেজের চীনা রাজনীতিক বিশেষজ্ঞ মিনসিন পেই বলেছেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে তাদের বেশ ভালো ধারণা ছিল, যতক্ষণ না কমিউনিস্ট পার্টি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সরবরাহ করেছেÑ এখন তাদের উচিত কর্মতৎপর হওয়া, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বড় ঝুঁকি না নেয়াÑ তবেই সব ঠিক থাকবে।’ চীনের উচ্চ-প্রবৃদ্ধির বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত দেশ প্রযুক্তি ও বিনিয়োগে সহায়তা করতে আগ্রহী ছিল। সে সময় অনেকে ধারণা করেছিল, যেহেতু চীন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক স্বাধীনভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী পশ্চিমা অধ্যুষিত ব্যবস্থায় আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে, চীন ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়। বিদেশের বাজারগুলোতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে সংস্থাটির বিধিবিধান মেনে চলায় সম্মত হয় চীন। তখন থেকেই, অনেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনকে প্রবেশাধিকার না দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের কিছু দেশ, সেই আহ্বানেরই প্রতিধ্বনি করছে।

ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে ইতোমধ্যেই হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা চীনা সংস্থাগুলোর আমেরিকান প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করেছে এবং শুল্ক আরোপ করে চীনের পণ্য আমদানিতে হ্রাস টেনেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে হুমকিস্বরূপ ক্রমবর্ধমান ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য বেইজিংকে প্ররোচিত করেছে। সামরিকভাবে দুই দেশ দক্ষিণ চীন সাগরে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে। যেহেতু আমেরিকানরা দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে সেহেতু চীনের নৌবাহিনীও ইতোমধ্যেই এ পানি সীমায় নিজেদের শক্ত উপস্থিতির জানান দিতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং অন্যরা তাদের উত্থান ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে। বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্টাডিস বিভাগের প্রফেসর ড. লি কিংসি বলেছেন, ‘চীনকে বহির্বিশ্বের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অব্যাহত রাখতে হবে। তবে চীনকে অবশ্যই তার বৈধ অধিকারগুলো ধরে রাখতে এবং বিগত বছরগুলোতে যা অর্জন করেছে তা রক্ষার জন্য শক্তি ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement