১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৃত্যুর আগে শিক্ষার্থীদের পাঠাগার উপহার দেবেন ভারতের আবদুল্লাহ স্যার

আব্দুল্লাহ স্যার। - ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষায় সবারই সমান অধিকার, কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কট বা অন্যান্য কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে যেন পিছিয়ে পড়তে না হয় সেইলক্ষ্যে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন আবদুল্লাহ স্যার। নিজের বাড়িতে এক সাক্ষাৎকারে এমনই কথা জানালেন তিনি।

শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৭ সালে। তারপর এই দীর্ঘ ১৫ বছর অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বিনা পারিশ্রমিকে বাড়ি গিয়ে পড়িয়েছেন। এখন শরীর সায় দেয় না। কাজ থেকে বিশ্রাম নেয়ার সময় এসে গেছে। তাই প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করে যেতে চান। নিজ বাসভবনে পাঠাগার তৈরিই তার স্বপ্ন এখন।

তিনি বলেন, ‘আমার অনেক ছাত্রছাত্রী আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা আর্থিক কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। কেউবা চাকরির পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েছে। আমার এখন অনেক বয়স, খুব বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে পারি না। তাই আমি ঠিক করেছি সবার জন্য একটা পাঠাগার তৈরি করব।’

শুধু শিক্ষক হিসেবেই নয়; আবদুল্লাহ স্যারের পরিচিতি একজন কবি, ব্যাকরণবিদ ও সমাজসেবী হিসেবেও। তার লেখা বইগুলো হল- ‘উদুল বুকের আঁচল’, ‘ভ্যালারে নার দল’, ‘সবেমাত্র হাত ধরেছি’, ‘লকডাউন’, ‘একটু তুমি ইচ্ছেমাফিক’, ‘ভালোবাসা অন্য ঘরে’, রাজবংশী ভাষায় লেখা ‘এ্যাকনা কথা কং’ ও ‘তোর্সাপারের রানী’।

এছাড়াও প্রকাশিত হওয়ার পথে তিনটি কাব্যগ্রন্থ হল- বিশেষ কম্পন, মাটি ডোবে অন্ধকারে ও প্রেমের কবিতা। এছাড়াও লিখেছেন ‘শুধু ব্যাকরণ’ নামে বাংলা ব্যাকরণ ও একটি ইংরেজি ব্যাকরণ যা প্রকাশিত হওয়ার পথে। এর পাশাপাশি অসহায়ের মেয়ের বিয়েতে সাহায্য, বস্ত্র বিতরণ, বই বিতরণ, গাছ লাগানো ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নেয়া- সবটাই পেনশনের টাকা দিয়েই চালান।

দীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতা জীবনে জমিয়েছেন অসংখ্য বই। কিন্তু তারমধ্যে অনেক বই বিতরণ করে চলেছেন দুস্থ ও অসহায় ছাত্রছাত্রীদের। তিনি বলেন, পাঠাগার খোলার জন্য আমার কাছে প্রায় দুই হাজারের মতো বই আছে। আরো কিছু সংগ্রহ করে পাঠাগারের কাজটা শুরু করব। তার ইচ্ছে- এই পাঠাগারে যেমন স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থাকবে, তেমনই থাকবে বিভিন্ন উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতামূলক বইয়ের পাশাপাশি তার জোগাড় করা নানা ধরনের ইসলামিক বই। বই পড়ে জ্ঞান আরোহণের পাশাপাশি মনের শান্তি বজায় থাকে, তাই শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়; সবারই বই পড়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

তিন ছেলের সকলেই প্রতিষ্ঠিত। চাকরি সূত্রে বাড়ির বাইরে থাকেন। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে একা আবদুল্লাহ স্যার। তাই তিনি নিজের নাতি-নাতনির ভালোবাসায় খুঁজে ফেরেন তার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তার কথায়–ওদের বাবা কাকাকে পড়িয়েছি, ওরা আমার নাতি-নাতনির মতো। ওদের সাথে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে। তাই সকাল-বিকেল এই বয়সেও সাইকেল নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছোটেন বিনা পয়সার এই স্যার।

সূত্র : পুবের কলম


আরো সংবাদ



premium cement