২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘর বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানালেন শাওন

হাশপল্লীতে হুমায়ূন স্মৃতি যাদুঘর বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানালেন শাওন - ছবি : নয়া দিগন্ত

নন্দিত কথা সাহিত্যিক মরহুম হুমায়ুন আহমদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার যথাযোগ্য মর্যাদায় গাজীপুরে পালিত হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ দিবসটি এবার স্বল্প পরিসরে সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।

কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুম এ লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশাদ ও নিনিত, শ্বশুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীসহ পরিবারের সদস্যরা রোববার সকালে গাজীপুরে আসেন। বেলা ১২টার দিকে তারা নুহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কবর জিয়ারত করেন। এ সময় প্রয়াত লেখকের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে অনন্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, কাকলী প্রকাশনীর সেলিম আহমেদ, অন্বেষা প্রকাশনীর শাহাদাৎ হোসেন, কাঠপেন্সিল প্রকাশনীর এসকে চৌধুরী, অভিনেতা সিরাজুল কবির কমল, হিমু পরিবহনের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হুমায়ুন ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।

মরহুম লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের সমাধির পাশেই নির্মাণ করা হবে হুমায়ুন স্মৃতি যাদুঘর। যেহেতু নুহাশপল্লী একটি পারিবারিক সম্পদ। পারিবারিক সম্পত্তির মধ্যে এ রকম কিছু একটা করতে হলে পরিবারের সবার মতামত নিতে হবে। ওই জায়গাটিতে এখনো আমি অপারগ হয়ে আছি। আমি এখনো সবাইকে একত্র করতে পারিনি। পারিবারিক সমন্বয়হীনতার কারণে যাদুঘরটি নির্মাণকাজ এখনো শুরু করা যাচ্ছে না। আমি চেষ্টা করছি পরিবারে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে যাদুঘরটি নির্মাণ করার জন্য। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, যাদুঘর নুহাশপল্লীতেই হবে এটা নিশ্চিত করে বলছি।

হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতিচারণ করে শাওন বলেন, বর্ষাকে তিনি উদযাপন করতেন। আমরা বৃষ্টিতে ভিজি, আর তিনি বর্ষা উদযাপন করতেন। যা তার ভক্তরাও জানে।

মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের আরো বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন এতিমখানার এতিমদের নিয়ে কোরআনখানির ব্যবস্থা করা হতো। এবার তা সীমিত আকারে হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের এ দিনটিতে দুপুরে এলাকার বিভিন্ন মাদরাসার এতিম শিশু ছাড়াও অতিথিদের খাওয়ার আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে খাওয়ার আয়োজন করা হয়নি। কোরাআনখানি ও আপ্যায়ন করতে যে টাকা ব্যয় হতো সে টাকাগুলো করোনাকালে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অসহায় ২০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে খুঁজে এসব পরিবারকে নির্বাচন করা হয়।

অনন্য প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা ছিল লেখকের বড় স্বপ্ন। তা এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি। সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে এদেশের সকল ভক্ত ও অনুরাগীদের হৃদয়ে কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকে কোরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া স্যারের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্য, লেখক, ভক্ত অনুরাগীদের উপস্থিতি ছিল সীমিত। দর্শণার্থীদেরও অংশগ্রহণ ছিল অনেক কম। ছিল না অন্য বারের মতো বড় পরিসরে মানুষ খাওয়ানো ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। লোক সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্য পর্যন্ত নুহাশপল্লীতে হুমায়ুন ভক্তদের আগমন অব্যাহত ছিল। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে নেত্রকোনায় হুমায়ুন আহমেদের শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

জনপ্রিয় এ লেখক হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তার ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটো ভাই। সবার ছোটো ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ২০১১ সালে তার অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরের বছরের মাঝামাঝি সময় তার অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু পরে ইনফেকশন হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেরিকায় নিউইর্য়কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর হুমায়ুন আহমেদকে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচু তলায় দাফন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement