সিলেবাস

বাংলা প্রথমপত্র গদ্য : আমাদের লোকশিল্প

সুপ্রিয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আজ তোমাদের বাংলা প্রথম পত্রের ‘গদ্য : আমাদের লোকশিল্প’ থেকে একটি নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পলাশপুর গ্রামের রহিমা। দরিদ্র হলেও শিল্পী মনের অধিকারী। ছোটবেলা থেকেই সে বাঁশ, বেত দিয়ে সংসারে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তৈরি করত। কিন্তু আচমকা একদিন তার স্বামী মারা গেলে দুই সন্তান নিয়ে পথে বসে রহিমা। উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে সুই-সুতা হাতে তুলে নেয় সে। তার সুখ-দুঃখের জীবনালেখ্য রহিমার দীঘল সুতার টানে ভাষা দিতে থাকে। একদিন বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে তার সুচিশিল্পগুলো যায় বিদেশে এবং মোটা অঙ্কের অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি প্রচুর সুনাম অর্জন করে।
প্রশ্ন : ক. কোন এলাকার মাদুর সকলের কাছে পরিচিত।
খ. ‘ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল দুনিয়াজুড়ে’ বলতে কী বুঝায়?
গ. স্বামীর মৃত্যুর পর রহিমার কাজটি আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের কিসের প্রতিনিধিত্ব করে? বর্ণনা করো।
ঘ. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রহিমার অবদান ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করো।
উত্তর : ক. খুলনার মাদুর সকলের কাছে পরিচিত।
খ. উচ্চমান ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে ঢাকাই মসলিন এককালে দুনিয়াজুড়ে কদর লাভ করেছিল। ঢাকাই মসলিন আমাদের লোকশিল্পের এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উপাদান। কারিগরি দক্ষতা ও শিল্পীমনের মিলন ঘটিয়ে অতি সূক্ষ্মভাবে এটি তৈরি করা হতো। ছোট একটি আঙটির ভেতর দিয়ে কয়েক শ’ গজ মসলিন কাপড় অনায়াসে প্রবেশ করানো যেত। এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই দুনিয়াজোড়া মসলিনের কদর ছিল।
গ. উদ্দীপকের রহিমার কাজটি আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে উল্লিখিত নকশিকাঁথা তৈরি ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে। কামরুল হাসান রচিত ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে নকশিকাঁথার কথা বলা হয়েছে। বাংলার বৈচিত্র্যময় লোকশিল্পের অন্যতম নিদর্শন নকশিকাঁথা। গ্রামীণ নারীরা সাধারণত বর্ষাকালে এসব কাঁথা সেলাই করে। আপন পরিবেশ ও জীবনের গল্পকেই তারা সুই-সুতার সাহায্যে নকশায় রূপ দেয়।
উদ্দীপকের রহিমাও জীবিকার তাগিদে নকশি কাঁথা তৈরি করে। প্রবন্ধের বর্ণনার মতোই নিজের জীবনের কাহিনীকে সে সুই-সুতার সাহায্যে কাঁথায় আঁকতে শুরু করে। রহিমা দরিদ্র হলেও শিল্পীমনের অধিকারী বলে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর সে বাঁচার অবলম্বন হিসেবে সুই-সুতা হাতে তুলে নেয়। একসময় অর্থের পাশাপাশি এসব নকশিকাঁথা তাকে যথেষ্ট সুনামও এনে দেয়। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে নকশিকাঁথার এ তাৎপর্যের কথাই বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, রহিমার কাজটি আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে উল্লিখিত নকশিকাঁথা তৈরির ঐতিহ্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
ঘ. ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের বক্তব্য অনুযায়ী যথাযথ সম্প্রসারণ ঘটাতে পারলে উদ্দীপকের রহিমার অবদান আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের দেশের মানুষ অবসর কাটানোর জন্যই মূলত লোকশিল্পের চর্চা করে। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে এসব শিল্পের ঠিকভাবে সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানো যেতে পারে। ঠিক যেমনটি হয়েছে উদ্দীপকের রহিমার ক্ষেত্রে।
উদ্দীপকের রহিমা স্বামীর মৃত্যুর পর উপায় না দেখে সুই-সুতা হাতে নেয়। নকশিকাঁথায় নিজের জীবন কাহিনী আঁকতে আঁকতে সেও নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়।
এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে লোকশিল্পের সম্পর্ক বেশ পুরনো। যুগ যুগ ধরে এ দেশের কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিস নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। ঐতিহ্য ও সুনাম ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহেরও ব্যবস্থা হয় এ শিল্পের মাধ্যমে।
উদ্দীপকের রহিমার নকশিকাঁথা একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ায় সে নিজে লাভবান হয়। রহিমার নকশিকাঁথা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে সে তার অভাব ঘোচাতে পেরেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রহিমা এভাবেই অবদান রাখছে।

আরো সংবাদ