নির্বাচন

পটুয়াখালী-৩ আসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সিইসির ভাগ্নে শাহজাদা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে আওয়ামী লীগের ২২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও সাগর পার থেকে রাজধানী পর্যন্ত সর্বত্র আলোচনার বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে এস এম শাহজাদাকে নিয়ে তার পক্ষে জোর লবিং চলছে। এতে কপাল পুড়তে পারে বর্তমান এমপি সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের।

অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক কামরান শাহিদ প্রিন্স মহাব্বাত, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি,, দশমিনা উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফোরকান মিঞা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, দশমিনা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ লিটন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাবেক ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি তছলিম সিকদার, দশমিনা উপজেলা সভাপতি আ: আজিজ মিয়া, আওয়ামীলীগ সদস্য রেজাউল করিম, জলিল রাজু আহমেদ, ডা: শাহজাহান, মো: আবুল বরকত, মো: শাহআলম হাওলাদার, মো: হিরণ আহমেদ, মো: ইদ্রিস মিয়া, এস এম ফজলুল হক, গোলাম মোস্তফা নান্টু, মো: সোহেল ও আশরাফ হাওলাদার। 

অন্য দিকে বিএনপি থেকে ছয়জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তারা হলেনÑ ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি হাসান মামুন, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নেতা ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, কর্নেল (অব:) মো: ইছাহাক মিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক লায়লা ইয়াসমিন, সাবেক উপজেলা সভাপতি শাহজাহান খান, তার ছেলে মো: শিপলু খান,, ব্যারিস্টার আশিকুর রহমান, আকতার হোসেন মেবুল ও আলতাফ খান। 

গলাচিপা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো: মাহবুব, মালয়েশিয়া জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মিল্টনসহ আরো একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: কামাল হোসেন খান জাসদের রয়েছেন নিজাম উদ্দিন তালুকদার। গলাচিপা উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও দশমিনার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন। এ আসনের দুই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৭০৩।

এ আসনে অধিকাংশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ কারণে আসনটি আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বিএনপি কর্মীদের দাবি আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের নতুম মুখ প্রার্থী করলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ মনে করছে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল না করলে ইতিহাস তাদের অনুকূলে থাকবে।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দল ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর হন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশোভনীয় মন্তব্যে দল থেকে ছিটকে পড়েন। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এ সুযোগে শেখ রেহেনা পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ গোলাম মাওলা রনিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনিও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কিন্তু গোলাম মাওলা রনির সমর্থক একটি গ্রুপের হাতে গলাচিপায় কয়েকজন সাংবাদিক শারীরিক লাঞ্ছিত হলে দেশব্যাপী সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে ওঠেন।

পরে দেশের খ্যাতনামা এক শিল্পপতির সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তার অফিসের সামনে তার নিজ হাতে দুই সাংবাদিক পেটানোর ছবি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সাংবাদিক পেটানোর মামলা তিনি কারাবরণ করেন।

গোলাম মাওলা রনির এসব কর্মকাণ্ডে আবার ভাগ্য খুলে যায় খ ম জাহাঙ্গীরের। তবে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে খ ম জাহাঙ্গীর এমপি হন। 

এ দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের অভিযোগ, খ ম জাহাঙ্গীর ৫ জানুয়ারি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের ভাগ্য পরির্বতনে নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি আর টিআর কাবিখা, ৪০ দিনের কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব নিয়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজ দলে বেশি সমালোচিত।

গত ১৫ আগস্ট গলাচিপা শহরে জাহাঙ্গীরের বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি পালিত হয় এবং দুই গ্রুপে ব্যাপক মারামারি হয়। এসব কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে।

খ ম জাহাঙ্গীরের প্রতিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন গলাচিপা পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক তুহিন, দশমিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন শওকত, গলাচিপার উপজেলার সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মানিক মিয়া, গলাচিপা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাশিনাথ ধর, এস এম শাহজাদা, কামরান সাইদ প্রিন্স মহব্বত ও ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এরা সবাই দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি।

এসব নেতা তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে একসময় পরিচিত থাকলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। এসবের মধ্যেও খ ম জাহাঙ্গীর আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

আরো সংবাদ