২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ট্রাম্পের ইউ টার্ন : যা বলছেন বিশ্লেষকরা

ট্রাম্পের ইউ টার্ন : যা বলছেন বিশ্লেষকরা - ছবি : সংগৃহীত

টুইটার অ্যাকাউন্টের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার যে ভিডিও বার্তা ডোনাল্ড ট্রাম্প পোস্ট করেছেন, তার কাটা-ছেঁড়া শুরু হয়েছে। কারণ, বুধবার ক্যাপিটলে অর্থাৎ মার্কিন কংগ্রেস ভবনে তার সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডব চলার সময় যে ভিডিও বার্তা ও টুইট তিনি করেছিলেন তার সাথে বৃহস্পতিবার বার্তার সুর ও বক্তব্য ছিল অনেকটাই আলাদা।

ওয়াশিংটনের বিবিসির উত্তর আমেরিকা বিষয়ক সম্পাদক জন সোপলের ভাষায়, ‘ইউ টার্ন‘ অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প যেন উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন।

বৃহস্পতিবার তিনি মেয়াদ শেষে অর্থাৎ ২০ জানুয়ারিতে ‘মসৃণভাবে নিয়মমতো’ নতুন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে ক্ষত সারানোর ও সমঝোতার।’

বুধবারের তাণ্ডবে অংশ নেয়া সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে তার কড়া ভাষার ব্যবহারে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, অন্য সব আমেরিকানের মতো তিনিও ‘অরাজকতা ও ভাঙচুর’ দেখে ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পীঠস্থানে’ এই ‘ঘৃণ্য হামলার’ সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

অথচ তার ২৪ ঘণ্টা আগে তার ভিডিও বিবৃতিতে এই সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তোমরা স্পেশাল’ এবং ‘আমি তোমাদের ভালোবাসি।’

একই সাথে ওই দিনই তিনি টুইট করেছিলেন, ‘যখন মহান দেশপ্রেমিকদের কাছ থেকে পবিত্র ও বিপুল একটি নির্বাচনী বিজয় জঘন্যভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়, তার পরিণতিতে এমন ঘটনাই ঘটে।’

অর্থাৎ পরোক্ষভাবে তিনি কংগ্রেস ভবনের ওই তাণ্ডবকে সমর্থন করেন। যে কারণে টুইটার ও ফেসবুক তার অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ভাষা ও ভঙ্গির এই বদলে প্রেসিডেন্টের কট্টর সমর্থকরা হয়তো বিস্মিত হচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা বুধবার তার ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়েই হয়তো- ক্যাপিটল হিলে ঢুকে ভাঙচুর করার সাহস দেখিয়েছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৃহস্পতিবারের বিবৃতির পর অনেক বিশ্লেষক বলছেন, নভেম্বর নির্বাচনের পর এই প্রথম তিনি পরোক্ষভাবে পরাজয় স্বীকার করলেন। যদিও মুখে তিনি তা বলেননি ও একবারও জো বাইডেনের নাম বা তার বিজয়ের কথা মুখে আনেননি।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুর বদলালেন?

ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির জন সোপল বলছেন, দুটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে : এক, কংগ্রেস জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন করার পর ট্রাম্প এখন বুঝতে পারছেন যে ফলাফল বদলানোর আর কোনো চেষ্টাই কাজ হবে না। তাই আপাতত ক্ষান্ত দিয়ে হোয়াইট হাউজ পরবর্তী কৌশল নিয়ে ভাবতে চাইছেন তিনি।

দ্বিতীয় কারণ, বুধবারের ঘটনার পর নিজের দল ও প্রশাসনের কাছ থেকে যে চাপ তার ওপর তৈরি হয়েছে তাতে সুর বদল করা ছাড়া কোনো বিকল্প হয়তো তার সামনে নেই। প্রেসিডেন্টর ‘আচরণের’ প্রতিবাদে দু’জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ দল ও প্রশাসনের যেসব ব্যক্তি গত চার বছর ধরে তার সুরে কথা বলেছেন, তাদের অনেকেই তার কথা শুনছেন না।

জন সোপলের মতে, বিশেষ করে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী উত্থাপন করে তাকে ক্ষমতাচ্যূত করার কথাবার্তা নিয়ে ট্রাম্প হয়তো ঘাবড়ে গেছেন। অবশ্য মাত্র ১২ দিনের মধ্যে ইমপিচমেন্ট বা সংবিধানের ২৫ সংশোধনী এনে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার সরকারের ভেতর থেকেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো উদ্যোগও তার শাসনামলের ওপর একটি কলঙ্ক হিসেবে থেকে যেত যেটা হয়তো ট্রাম্প চাইছেন না।

সোপল বলেন, বৃহস্পতিবারের বিবৃতির ভাষা, ভাষণ দেয়ার ধরণ প্রমাণ করে ভেতর থেকেই প্রেসিডেন্ট প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছেন। ‘আপনি যদি ভিডিওটি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন ট্রাম্প লেখা একটি বিবৃতি হুবহু পড়ার চেষ্টা করছেন। কেউ যেন তাকে বলে দিয়েছে যা লেখা আছে তা হুবহু পড়তে হবে। অনেকটা পণবন্দীদের যেভাবে বিবৃতি দেয়ানো হয়, তেমন। বোঝাই যায় তিনি এমন সব শব্দ বলছেন, যেটা তিনি বলতে চান না।’

২০২৪ সালে ফেরার ইঙ্গিত
তবে অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা হয়তো একটি কৌশল হিসেবেই রণেভঙ্গ দেয়ার পথ নিয়েছেন।

তার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার অসামান্য সমর্থকবৃন্দ আমি জানি আপনারা হতাশ, কিন্তু আমি বলতে চাই আমাদের যাত্রা সবে শুরু হলো।’

জন সোপল বলছেন, ‘ট্রাম্প হয়তো ইঙ্গিত দিলেন রাজনীতি থেকে তিনি সরে যাচ্ছেন না। চার বছর পর নির্বাচনে তিনি আবার আসবেন।’

এমন সম্ভাবনা কথার বেশ কিছু দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে খোলাখুলি আলোচনা হচ্ছে। নিজে না হলেও ট্রাম্পের পর তার পরিবারের কোনো সদস্য হয়তো ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।

২০২৪ সালে ওই সম্ভাব্য উত্তরসূরি ট্রাম্পের মেয়ে ইভাংকার কথা নিয়ে অনেক দিন ধরে কানাঘুষা চলছে। ক্যাপিটলে তাণ্ডবের সময় ইভাংকা ট্রাম্প হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক‘ বর্ণনা করে টুইট করেছিলেন যা কিছুক্ষণ পর তিনি মুছে ফেলেন।

হেরে গেলেও এবারের নির্বাচনে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ভোট পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পরাজিত কোনো প্রার্থী এত ভোট কখনো পাননি। অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, করোনাভাইরাস দুর্যোগ সৃষ্টি না হলে, তিনি হেসে-খেলে জিতে যেতেন।

বৃহস্পতিবার জনমত জরিপ সংস্থা ইউগভ এক পরিসংখ্যানে বলছে, ৪৫ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার মনে করেন, বুধবার কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা সঠিক ছিল। দলের মূল ভোটারদের মধ্যে তার অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তার কারণেই হয়তো রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্বের বিরাট অংশ এখনো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস করছেন না।

বুধবার ক্যাপিটল হিলে এমন তাণ্ডবের পরও জো বাইডেনের নির্বাচনী ফলাফল অনুমোদনের সময় কংগ্রেসের ১২০ জনেরও বেশি রিপাবলিকান সদস্য আপত্তি জানিয়েছেন। ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে তারা বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো এখনকার মতো রণেভঙ্গ দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান-বিরোধী, অপ্রচলিত, ও লড়াকু রাজনীতি আর রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা যে অচিরেই উধাও হয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement