২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দক্ষিণ আমেরিকার যে শহরে গোটা মহাদেশের চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে

- ছবি : সংগৃহীত

ইকুয়েডরের গোয়াইয়াকিল শহরে কোভিড -১৯ এর কারণে ভয়াবহ জনস্বাস্থ্যের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
ইকুয়েডরের সবচেয়ে জনবহুল শহর গুয়াইয়াকিলে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষজন শুধুমাত্র জনাকীর্ণ হাসপাতাল মারা যাচ্ছে তা নয়, এখানে মানুষকে রাস্তায় মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে বাড়িতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের লাশগুলো সরিয়ে নিতেও কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। কারণ লাশ সরিয়ে নেয়ার তালিকা আর এর জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

গুয়াইয়াস প্রদেশে করোনাভাইরাসের কারণে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবগুলো দেশ মিলিয়েও এই পরিমাণ মানুষ মারা যায়নি করোনাভাইরাসে। ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১৯৩৭ জনের মধ্যে।

প্রদেশটির রাজধানী গুয়াইয়াকিলেই মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশ রোগীর বসবাস। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলির মধ্যে একটি যেখানে মাথাপিছু করোনাভাইরাস আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি।

তার উপর, ভাইরাস পরীক্ষার আগেই যারা মারা গেছেন তাদেরকে এই পরিসংখ্যানের বাইরে রাখা হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ইকুয়েডরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ - এর আগে রয়েছে ব্রাজিল এবং চিলি- তবে জনসংখ্যার অনুপাতে ইকুয়েডরে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি।

গুয়াইয়াকিলের শেষকৃত্য আয়োজকরাও এই পরিথিতি সামলে উঠতে পারছে না। সঙ্কটের মাত্রা এমন যে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো লাশ সরিয়ে নিতে এবং সমাহিত করতে বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরি করেছেন।

"আমার মামা সেগুন্দো ২৮ শে মার্চ মারা গিয়েছিলেন এবং কেউই আমাদের সাহায্য করতে আসেনি।" বলেন, জেসিকা কাস্তেদা।

তিনি রাজধানী থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ২৫ লাখ জন বসতির কুইটো শহরে বাস করেন।

"হাসপাতালে বিছানা পাওয়া যায়নি এবং তিনি বাড়িতেই মারা যান। আমরা জরুরি সেবা সংস্থাগুলোয় খবর দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের বলেছে ধৈর্য্য ধরতে। তার মরদেহ এখনও বিছানায় পড়ে আছে, আমরা ছুঁয়েও দেখতে পারিনি।"

শুধুমাত্র মার্চের শেষ সপ্তাহে, বিভিন্ন বাড়িতে মারা যাওয়া ৩০০ জনেরও বেশি মৃতদেহ পুলিশ সংগ্রহ করেছে।

জরুরি সেবা সংস্থাগুলোয় মানুষের অতিরিক্ত ফোনের কারণে যে কেবল কোভিড -১৯ রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা নয়, এতে অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষকেও ভুগতে হচ্ছে।

"আমার প্রতিবেশী পড়ে গিয়ে তার মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, এবং আমি (জরুরি নম্বর) ৯১১ এ ফোন করেছিলাম, কিন্তু তারা আসেনি," শহরের বাসিন্দা ওয়েন্ডি নোবোয়া বলেন।

তার ৯৬ বছর বয়সী প্রতিবেশী গোর্কি পাজমিনো ২৯শে মার্চ দুর্ঘটনার কারণে মারা যান।

"তার লাশটি পুরো দিন মেঝেতে পড়ে ছিল। পরিবার এসে না তোলা পর্যন্ত তিনি ওভাবেই পরে ছিলেন। তবে তারা তাকে কবর দিতে পারেনি। কারণ তার মৃত্যুর সনদ স্বাক্ষর করার মতো কোনও ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না।"

যারা রাস্তায় পড়ে মারা যাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর খবর রিপোর্ট করতে এবং মানুষকে সেটা জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে যে একজন ব্যক্তি একটি হাসপাতালের বাইরে পড়ে আছেন এবং একটি বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হচ্ছে(যদিও বিবিসি স্বাধীনভাবে ফুটেজের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি)।

"আমার বন্ধু বাজার করতে গিয়ে মোড়ের পাশে একজন মৃত ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন। রাস্তার ঠিক কয়েক মিটার দূরে আরও একটি লাশ রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি," গুয়াইয়াকিলে প্রকাশিত দৈনিক এল তেলেগ্রাফো-র সাংবাদিক জেসিকা জাম্ব্রানো এই তথ্য জানিয়েছেন।

"এখানে আমরা রাস্তায় মানুষকে ঘুমোতে দেখতে অভ্যস্ত। এখন আমরা দেখছি গৃহহীন মানুষেরা শহরের কেন্দ্রে মারা যাচ্ছেন।"

যারা বাড়িতে মারা যাচ্ছে তাদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এবং তারা সরকারী সুযোগ-সুবিধার উপর যথেষ্ট চাপ দিতে পারে। জনাকীর্ণ হাসপাতালগুলো আর কোন রোগীকে জায়গা দিতে পারছে না।

"গুয়াইয়াকিলের মানুষেরা হতাশ, কাউকে কাউকে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে", এক্সপ্রেসো পত্রিকার সাংবাদিক ব্লাঙ্কা মনকাদা এ কথা বলেন।

মার্চের শেষ সপ্তাহে, বাড়িতে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন (বিভিন্ন কারণে) এবং তাদের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে।

নিউজ এজেন্সি ইএফই-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপেক্ষমান তালিকায় বর্তমানে ১১৫টি নাম রয়েছে। বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement