২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে সবুজ\

-

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, নগরীতে সবুজ অঞ্চল থাকতে হয় জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৯ বর্গমিটার। যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে জনপ্রতি এ পরিমাণ সবুজ অঞ্চল আছে মাত্র ছয়টি ওয়ার্ডে। বাকি ৮৬টি অর্থাৎ, ৯০ শতাংশের বেশি ওয়ার্ডেই প্রয়োজনীয় সবুজ অঞ্চল নেই। সামগ্রিকভাবে ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছিল ১২ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় আট শতাংশে। আর বর্তমানে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছয়-সাত শতাংশের বেশি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকায় সবুজের পরিমাণ জানতে রিমোট সেন্সিং পদ্ধতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি গবেষণা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাপানের কিয়োটো ও হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির তিন গবেষক। গবেষণার জন্য তারা ব্যবহার করেন র্যাপিডআই স্যাটেলাইট চিত্র। ২০১৪ সালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া ইমেজ বিশ্লেষণ করে নগরীতে সবুজের আচ্ছাদন পরিমাপ করেন তারা। প্রতিটি ওয়ার্ডের গাছপালা আচ্ছাদিত এলাকাকে ওয়ার্ডটির মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে জনপ্রতি সবুজের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকার ৯৩ শতাংশ ওয়ার্ডেই পর্যাপ্ত সবুজ নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় আছে উত্তরা, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, দারুসসালাম, শুক্রাবাদ, রাজাবাজার ও পুরান ঢাকার কিছু অঞ্চল।
২০১৪ সালে নেয়া স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে তৈরি ‘এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি ইভ্যালুয়েশন ইন ঢাকা সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক পেশাজীবী সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইসিই) জার্নাল আইসিই পাবলিশিংয়ে প্রকাশিত হয়। তবে এখনকার তথ্য বিশ্লেষণ করলে ঢাকায় সবুজের পরিমাণ আরো কমেছে বলে মনে করেন তিন গবেষকের অন্যতম ও রাজউকের সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ মো: মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা গবেষণা পরিচালনা করি। সেই সময় ঢাকার ৯০ শতাংশের বেশি ওয়ার্ডে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটারের কম সবুজ অঞ্চল পাওয়া যায়। বর্তমানে এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। সবুজের চিহ্ন ক্রমেই কমে আসছে। মূলত জমির উচ্চমূল্যের কারণে গাছপালার জন্য জায়গা ছাড়তে চান না মালিকরা।
ধারাবাহিকভাবেই কমছে ঢাকার সবুজ অঞ্চল। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে পরিচালিত পৃথক আরেক গবেষণা বলছে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকার ১২ শতাংশ সবুজে আচ্ছাদিত থাকলেও ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় আট শতাংশে। এখন তা বড়জোর সাত শতাংশ হবে বলে মনে করেন রাজউকের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় সবুজ আচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ছয়-সাত শতাংশের মতো হতে পারে। আর রাজউকের অধীন এলাকায় সবুজ আচ্ছাদিত পার্ক বা খেলার মাঠ রয়েছে এক শতাংশেরও কম।
ঢাকায় জনপ্রতি সবুজ এলাকা এশিয়ার অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় বেশ কম। ঢাকায় জনপ্রতি সবুজ অঞ্চল ৯ বর্গমিটারের কম হলেও ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তা ২১ দশমিক ৫২ বর্গমিটার। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে জনপ্রতি সবুজ এলাকা ১৪ দশমিক ৫৭ ও সিঙ্গাপুর সিটিতে ১০ বর্গমিটার।
স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকার ৯২টি ওয়ার্ডের মধ্যে যে ছয়টিতে ডব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী সবুজ এলাকা আছে, তার চারটি ওয়ার্ডই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। বাকি ওয়ার্ডগুলোর কোনোটিতেই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সবুজ এলাকা নেই।
জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বায়ুমান বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন, দুই সিটি করপোরেশনেরই অনেক ওয়ার্ডে জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার বা তার বেশি পরিমাণে সবুজ এলাকা থাকা জরুরি। ঢাকা উত্তরকে সবুজ করার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিটি দোকানে দুটি করে ফুলের গাছ অবশ্যই লাগাতে হবে। যারা ছাদবাগান করবে, জুরি বোর্ডের মাধ্যমে বাছাই করে তাদের জন্য বিশেষ রেয়াতের ব্যবস্থা করা হবে। ভবনের নিরাপত্তাকে বিবেচনায় নিয়েই এ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হবে। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজায়নে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করব। কারণ আগে ঢাকা শহরের বাসাবাড়িতে বারান্দায় টবের মধ্যে হলেও গাছপালা দেখা যেত। দুর্ভাগ্যবশত মানুষের সুন্দর এ চর্চাও এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। আমরা সবাই নাগরিক, কিন্তু আমরা সুনাগরিক কয়জন? সুনাগরিক হলে নিজ তাগিদেই দু-চারটা টবে ফুল ফোটাতাম। এটা বলছি, কারণ এ ধরনের ক্ষুদ্র প্রয়াস অক্সিজেনের বড় উৎস হতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই জনপ্রতি ৯ বর্গমিটার বা তার বেশি পরিমাণ সবুজ অঞ্চল থাকা প্রয়োজন। ঢাকা দক্ষিণের এসব ওয়ার্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ১৬ (কাঁঠালবাগান, নর্থ রোড, সার্কুলার রোড); ২৫ (কাজী রিয়াজুদ্দিন রোড, লালবাগ কেল্লা, আতশ খান লেন), ২৭ (হোসনি দালান রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, বকশীবাজার রোড)।
সিটি করপোরেশনের তদারকির অভাবেই ঢাকা থেকে সবুজ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এক সময় গাছপালা তদারকির দায়িত্বে সিটি করপোরেশনের একটি হর্টিকালচার বিভাগ ছিল। সে দায়িত্ব থেকে সরে এসেছে সংস্থাটি। গাছ লাগানো হলেও তা পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে না। সর্বোপরি অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেই ঢাকায় সবুজের পরিমাণ কমছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তৃণমূল সংগঠনের মজবুতির জন্য কাজ করতে হবে : মাওলানা আব্দুল হালিম ‘দেশ ও জাতি দুঃসময় পার করছে’ ওসমানীনগরে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২ সহ-অধিনায়ক হতে পারেন রিজওয়ান মেক্সিকোয় মেয়র প্রার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহেও ক্লাস বন্ধ ঘোষণা দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু

সকল