১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেনিয়ায় ভিন্ন মেজাজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ভোর হওয়ার আগে থেকেই অনেক ভোট কেন্দ্রে লম্বা লাইন দিয়েছেন ভোটাররা। - ছবি : বিবিসি

কেনিয়ায় আগামী পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ চলছে। দেশটির নির্বাচনে যে সহিংসতা ও অনিয়মের ইতিহাস রয়েছে, সেই পটভূমিতে এবারের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী দেশটির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট বিবিসিকে বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো প্রত্যেক প্রার্থী বলেছেন তারা ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন।

জীবনযাত্রার ব্যয়, বেকারত্ব এবং দুর্নীতির ইস্যুতে তীব্র বিতর্ক ও ব্যাপক প্রচারাভিযানের পর শুরু হওয়া ভোট এখন পর্যন্ত মোটামুটি নির্বিঘ্নে চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যদিও কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে ভোটগ্রহণে বিলম্ব ও কিছু সমস্যার খবর এসেছে।

বেশিরভাগ জরিপ বলছে, তুমুল লড়াই হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গা এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর মধ্যে।

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা এবং তার নিজের ডেপুটি রুটোর মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় কেনিয়াত্তা তার এক সময়কার শত্রু ওডিঙ্গাকে এই নির্বাচনে তার সমর্থন দিচ্ছেন।

ওডিঙ্গা রাজধানী নাইরোবিতে তার একটি শক্ত ঘাঁটি কিরবাতে নিজের ভোট দিতে গেলে তার সমর্থকদের বিশাল বাহিনী তাকে ঘিরে ধরে।

তিনি এখনো সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি, তবে তার স্ত্রী আইডা ওডিঙ্গা বলেছেন, তার স্বামী ‘নির্বাচনী মেজাজ নিয়ে খুশি।’

বহু এলাকায় মানুষ ভোর হওয়ার আগে থেকেই ভোট দেয়ার জন্য লাইন দিয়েছে। ভোট চলবে ১১ ঘণ্টা ধরে। দেশটিতে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ।

স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে। সমস্যার কারণে যেসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ দেরিতে শুরু হয়েছে, সেখানে লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে দেয়া হবে বলে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

নেতিবাচক নির্বাচনী ইতিহাস
রুটো রিফট ভ্যালিতে এলডোরেট শহরে নিজের ভোট দেয়ার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোটের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন।

‘কেনিয়ার বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো প্রত্যেক প্রার্থী অঙ্গীকার করেছেন যে নির্বাচনের ফল তারা মেনে নেবেন,’ বিবিসিকে বলেছেন রুটো।

নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বিবাদের জেরে ২০০৭ সালে ভোটের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক সহিংসতা চলে, যার ফলে প্রাণ হারায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ব্যক্তি এবং প্রায় ৬ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালায়।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আদালত রায় দিয়েছিল যে নির্বাচন কমিশন ভোটদান কেন্দ্র থেকে ভোটের ফলাফল ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পাঠানোর সময় নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছে।

বিচারকরা তাদের রায়ে বলেছিলেন, নির্বাচনে ‘বিধিভঙ্গ ও অনিয়ম’ হয়েছে।

এরপর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেনিয়াত্তা বিজয়ী হন। সেসময় প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী রাইলা ওডিঙ্গা পুনর্নির্বাচন বর্জন করেন।

নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান, ওয়াফুলা চেবুকাটি, যিনি ২০১৭ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দায়িত্বে ছিলেন, বারবার কেনিয়ার জনগণকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, এবারে তার দল সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর।

কেনিয়ার ভোটাররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ও এমপি নির্বাচনের জন্যও ভোট দিচ্ছেন।

বাবা বনাম হাসলার
মনে হচ্ছে এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ৭৭ বছর বয়স্ক ওডিঙ্গা এবং ৫৫ বছর বয়স্ক রুটোর মধ্যে।

ওডিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের নেতা। সমর্থকরা তাকে ডাকেন ‘বাবা’ বলে। তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ছেন পঞ্চমবারের মতো।

রুটো দেশের সাধারণ জনগণের সাথে তার যোগাযোগের ওপর দিয়ে তাদের কাছে নিজেকে তুলে ধরছেন ‘হাসলার’ বা একজন করিৎকর্মা হিসেবে। তিনি বলছেন, তিনি যে কাজে হাতে দেন তা করে ছাড়েন।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরো দুজন প্রার্থী।

যদিও দুর্নীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় ও বেকারত্বের ইস্যুতেই ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে কেনিয়ায় জাতিগত আনুগত্যের ব্যাপারটাও কাজ করে থাকে।

তবে, দেশটির সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠী ‘কিকুউ’ মূল প্রেসিডেন্ট পদের জন্য কোনো প্রার্থী দাঁড় করায়নি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement