২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিউনিসিয়ায় আননাহদা দল থেকে ১১৩ সদস্যের পদত্যাগ

তিউনিসে আননাহদার কার্যালয় - ছবি : আলজাজিরা

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই দেশটির স্থগিত পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল আননাহদার ১১৩ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে এই সদস্যরা তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের অভ্যুত্থান চেষ্টার মাধ্যমে 'আসন্ন স্বৈরতান্ত্রিক বিপদের' মোকাবিলায় দলের ব্যর্থতায় তারা পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগকারী সদস্যরা বিবৃতিতে কায়েস সাইদের এককভাবে ক্ষমতা গ্রাসের বিরুদ্ধে সমন্বিত উদ্যোগের ব্যর্থতার জন্য আননাহদা নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করেন।

পদত্যাগকারীদের মধ্যে দলটির আট পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন। এছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবদুল লতিফ মক্কি পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন।

এক ফেসবুক বার্তায় আবদুল লতিফ মক্কি বলেন, দুঃখ ভারাক্রান্ত হলেও তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমার আর কোনো পথ নেই। তিউনিসিয়ার জন্যই আমাদের অভ্যুত্থানকে রুখতে হবে।'

অপরদিকে দলীয় কয়েকজন নেতা আননাহদার শীর্ষ নেতা ও স্থগিত পার্লামেন্টের স্পিকার রশিদ গানুশিকে রাজনৈতিক সংকটের মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের পার্লামেন্ট স্থগিত করা ও প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে নির্বাহী ক্ষমতা হস্তগত করার সিদ্ধান্তকে আননাহদা 'সংবিধানবিরোধী' হিসেবে উল্লেখ করলেও দলটি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের পর তিউনিসিয়ায় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আননাহদার আবির্ভাব ঘটে। পার্লামেন্টে আসনে দলটির বৃহত্তম অংশীদারিত্ব থাকলে সরাসরি সরকার গঠনে না থেকে বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে সরকারের পেছন থেকে সমর্থন দিয়ে আসছিলো।

গত ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।

পরে ২৩ আগস্ট 'রাষ্ট্রের জন্য হুমকি' বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।

অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ।

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে 'সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' বলে অভিযোগ করে আসছে।

২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো।

এছাড়া বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে।

তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement