২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিদ্যুৎ সঙ্কট লাঘব হতে পেরিয়ে যেতে পারে এ বছর

বিদ্যুৎ সঙ্কট লাঘব হতে পেরিয়ে যেতে পারে এ বছর - ছবি : সংগৃহীত

উৎপাদন ও সঞ্চালনে সার্বিক অবকাঠামোগত সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশে চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসন হতে এ বছর পেরিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা অচিরেই এ সংকটের সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে আরো চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ বিদ্যুৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ-কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারতের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসবে বলে তিনি লিখেছেন।

এর ফলে বাংলাদেশ দ্রুতই বিদ্যুৎ সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গ্রিডে নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হতে এ বছরও পেরিয়ে যেতে পারে।

ফলে নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়া নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোথা থেকে, কবে আসবে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

বাংলাদেশে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো, সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এবং সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখাসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেয় সরকার।

এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকারি দফতরগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনাসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে।

একই সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত না হবার অনুরোধ করে সরকারের বলেছে সেপ্টেম্বরের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র এবং পরিচালক শামীম হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পায়রা তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২য় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টসহ মোট ৪টি উৎস থেকে ওই বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার।

তিনি বলেছেন, ‘পায়রাতে যে তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, সেখান থেকে আসবে বিদ্যুৎ। এরপর রামপালে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে সেটাও চালু হয়ে যাবে এ সময়ের মধ্যে। আর ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট, সব মিলিয়ে চারটি উৎস থেকে ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করবো।’

তার কাছে প্রশ্ন ছিল কবে নাগাদ সে বিদ্যুৎ আসবে?

জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে চলে আসার কথা।’

বাংলাদেশে সাধারণ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের মত, যা শীত মৌসুমে নেমে দাঁড়ায় নয় হাজার মেগাওয়াটে।

ফলে নতুন বিদ্যুৎ না পৌঁছালেও শীতে চাহিদা কম থাকার কারণেই পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা যাচ্ছে, পায়রা তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২য় ইউনিট এবং রামপাল থেকে বিদ্যুৎ বিতরণের সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ এখনো হয়নি।

ফলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার প্রত্যাশার কথা লিখেছেন তার একটি অংশ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে এ বছরের শেষ নাগাদ।

বাংলাদেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনার সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ শেষ হতে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে।

তিনি জানিয়েছেন, পদ্মাসেতু থেকে দুই কিমি দূরে সেতু কর্তৃপক্ষ এজন্য তাদের টাওয়ার তৈরি করে দিয়েছে।

‘এখন ওটার উপর আমাদের উপকেন্দ্র স্থাপন করে তারপর লাইন টানতে হবে। কিন্তু বর্ষাকালে বজ্রপাত হয় বলে প্রাণের হুমকি আছে, ফলে কাজটি কিছুটা ধীরগতিতে করতে হচ্ছে।’

‘এটি শেষ হতে হতে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি নভেম্বরের শেষ নাগাদই কাজ শেষ করতে,’ তিনি বলেন।

আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আসবে কবে?

ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সরকার ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেনি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরুর আগে দুইটি সঞ্চালন লাইন তৈরি হবে, একটি দিনাজপুরের রোহনপুরে, আরেকটি বগুড়ায়, যার কাজ এখনো শেষ হয়নি।

এর সাথে উপকেন্দ্র তৈরি এবং উৎপাদন শুরুর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে ‘অক্সিলারি বিদ্যুৎ’ নেয়ার কথা প্রতিষ্ঠানটির, সেটিও এখনো নেয়নি আদানি।

এসব পদক্ষেপ শেষ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে, তারপরই শুরু হতে পারে তাদের উৎপাদন।

‘প্রত্যাশা বাস্তসম্মত নয়’

কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, যেসব সূত্রে শিগগিরই বিদ্যুৎ পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে তার কোনোটাই সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবে না।

এখন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এজাজ আহমেদ বলছেন, এজন্য সরকার যে সময়সীমার মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছে সেটি ‘বাস্তবসম্মত’ নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত না, তারা একটা প্রত্যাশার ওপর নির্ভর করছে। মনে করা হয় সবকিছু যেরকম পরিকল্পিত, এমন হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি সবসময় তা হয় না।’

‘যেটা সঞ্চালন লাইন সেটাও কিন্তু প্রস্তুত হয়নি। আর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ ওই একই লাইন দিয়ে আসবে। কিন্তু আদানির বিষয়টা আমাদের কাছে খুব স্পষ্ট না যে, সেটি ঠিক কবে থেকে আসবে। কারণ সেটি ঘোষণা করা হয়নি।’

বর্তমান সমস্যার আশু সমাধানের জন্য অধ্যাপক আহমেদ সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরি ঠেকানো এবং গ্যাসকূপে সংস্কার করে উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement