১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রামে সড়ক-অবকাঠামো উন্নয়ন

পরামর্শক ব্যয় মাসে ৩৫ লাখ টাকা

পরামর্শক ব্যয় মাসে ৩৫ লাখ টাকা - ছবি : সংগৃহীত

সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞ প্রকৌশলী থাকতেও সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি মাসে পরামর্শক খাতে খরচ ধরা হয়েছে গড়ে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। রুটিন-মাফিক কাজের জন্য পরামর্শক ব্যয় কমানোর জন্য বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আর প্রতিটি ব্রিজ নির্মাণে চার কোটি টাকা খরচ প্রাক্কলন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক খাতসহ বিভিন্ন ব্যয় নিয়ে আপত্তি তুলে কমানোর সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ও আইএমইডি। তাদের মতে এই খরচগুলো অনেক বেশি।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রধানের তথ্য ও চসিকের প্রধান প্রকৌশলীর দেয়া প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি সিটি করপোরেশন এলাকার সড়ক ব্যবহার করে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রামে নাগরিক সুবিধার চাহিদাও বেড়েছে। তাই শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শহরের ফুট ওভারব্রিজ, কালভার্ট, ব্রিজ, ওভারপাস, গোল চত্বর, রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য দুই হাজার ৪৯৯ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়, যেখানে সরকারের অর্থায়ন এক হাজার ৯৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং করপোরেশনের ৪৯৯ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা। প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলোÑ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭৬২ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ, ২২টি কালভার্ট নির্মাণ, ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ।

ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, ৭৬২.৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১০৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নে খরচ পড়ছে দুই কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণে ব্যয় হবে ৮৪ লাখ টাকা। ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে খরচ হবে ৫৮ কোটি টাকা। এখানে প্রতিটি ফুট ওভারব্রিজে ব্যয় হবে এক কোটি ৫২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ১৪টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, যাতে খরচ ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। ফলে প্রতিটি ব্রিজে খরচ হচ্ছে চার কোটি টাকা। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে ২২টি কালভার্ট, যাতে খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। প্রতিটি কালভার্ট নির্মাণ খরচ হবে ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ১০টি গোল চত্বর নির্মাণে যাবে ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি গোল চত্বরের জন্য খরচ এক কোটি ২০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ১৫টি বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বরাদ্দ ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জিপ গাড়ি কেনার জন্য এক কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই ব্যয় বরাদ্দকে অত্যধিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এগুলোর বিস্তারিত কারিগরি বর্ণনাও ডিপিপিতে যুক্ত করা হয়নি। সিটি করপোরেশনের নির্মাণ যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও এতগুলো যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে প্রশ্ন ও আপত্তি জানিয়েছে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, ডিপিপিতে ফুট ওভারব্রিজ কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার উল্লেখ থাকলেও ব্রিজ, কালভার্ট, গোল চত্বর কোথায় কোথায় নির্মাণ করা হবে তার স্থান উল্লেখ করা হয়নি। পিইসি সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর ৩৮টি ফুট ওভারব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ১২টি কালভার্ট, ১০টি গোল চত্বর, ৭৬২.৮৩ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণের প্রয়াজনীয়তা, এগুলো নির্মাণের নির্ধারিত স্থান, আকার, প্রাক্কলিত ব্যয় ম্যাট্রিক্স আকারে ডিপিপিতে যুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়। ওই সব নির্মাণে ধারণাগত ড্রইং, ডিজাইন ও লে-আউট প্ল্যান ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে ১৫টি বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ যানযন্ত্রপাতি বাবদ ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জিপ গাড়ি ক্রয় বাবদ এক কোটি ৪০ লাখ টাকা অত্যধিক বেশি। এটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে। এগুলোর কারিগরি বর্ণনাও ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি।

আর অর্থ বিভাগের মিজ লিজা খাজা বলেন, প্রকল্পটির কার্যক্রম ও ব্যয় অনেক বেশি বিধায় সার্বক্ষণিক একজন প্রকল্প পরিচালকের সংস্থান রাখা দরকার। পাশাপাশি অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার স্বার্থে অন্যান্য সিটি করপোরেশনের অনুরূপ একজন প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। চসিক প্রধান প্রকৌশলী পিইসিকে জানান, স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পটির ব্যাপারে আইএমইডির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলী খানের অভিমত হলো, প্রস্তাবিত প্রকল্পে পণ্য ও পূর্ত কাজ অনেকগুলো প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে, যা হ্রাস করা প্রয়োজন। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রথম আটটি অঙ্গে ক্রয় পদ্ধতি ও ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেন, ৩৬ জনমাসের জন্য পরামর্শক বাবদ সাড়ে ১২ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। রাস্তা উন্নয়ন, গোল চত্বর, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুট ওভারব্রিজ ইত্যাদি রুটিন-মাফিক কাজ। এর জন্য পরামর্শক ব্যয় হ্রাস করতে হবে। সমজাতীয় পণ্যগুলো একটি প্যাকেজে রেখে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ক্রয় পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষও সংশোধন করতে হবে। আর পরামর্শক খাতে ব্যয় সাত কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে ক্রয় পদ্ধতি সংশোধন করতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পের ব্যাপারে বলছে, ৭৬২.৮৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন যেটা করা হয়েছে তা রিভিউ করা দরকার। এ ছাড়া কোন কোন রাস্তা আরসিসি, কোনগুলো বিটুমিনাস এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। প্রকল্পে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের ব্যয় প্রায় একই রকম প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এত বড় আকারের একটি প্রকল্প কেন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে করা হয়নি? এটা করা উচিত। এ ছাড়া রাস্তা উন্নয়ন, গোল চত্বর, ব্রিজ, কালভার্ট, ফুট ওভারব্রিজ, যানযন্ত্রপাতি, ইউটিলিটি সরানো এবং পরামর্শক সেবা কেনা ইত্যাদি যথাযথ বর্ণনা ডিপিপিতে থাকা দরকার। ডিপিপিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে, যা সংশোধন করে আবার প্রেরণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম এবং প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে গতকাল সোমবার কয়েক দফায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কেউ ফোন রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement
মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সকল