২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বিদেশে ঘাস চাষ শেখা নিয়ে তুলকালাম, শত কোটি টাকার প্রকল্প

ঘাস চাষ শিখতে ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব - ছবি : সংগৃহীত

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ‘প্রাণী পুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাসের চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

এ প্রকল্পের আওতায় ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে - যা নিয়ে তুমুল হাস্যপরিহাস চলছে সারাদেশে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

যদিও মঙ্গলবার একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী ব্যয় কমাতে ও শুধুমাত্র সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উন্নত প্রাণীসম্পদের জন্য সুপরিচিত জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডে যাবেন কর্মকর্তারা মূলত উন্নত জাতের প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাস চাষের কৌশল, সংরক্ষণ ও প্রযুক্তি দেখা এবং এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য।

অধিদফতরের পরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলছেন, ‘এটি ঘাস চাষ দেখা বা শেখার প্রকল্প নয় বরং এটি হলো দেশের গরু-মহিষের জন্য উন্নত জাতের ঘাসের ব্যবস্থা করা, যাতে করে দানাদার খাদ্যের ওপর চাপ কমানো যায়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের গোচারণভূমি কমে যাচ্ছে আবার স্থানীয় জাতের ঘাস যথেষ্ট পুষ্টিমান নয় বলেই বিদেশে উন্নত জাতের প্রোটিন-সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল যেসব ঘাস আছে সেগুলো বাংলাদেশে আনতে হবে।’

‘বাংলাদেশের দুর্বা ঘাস ছয় মাসেও এক ফিট বাড়ে না। অথচ দেখুন ন্যাপিয়ার ঘাস ৪১ দিনের পাঁচ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। এখন এগুলো তো আনতে হবে বাংলাদেশে। আর আনা মানে তো জানতে হবে যে বীজ আনার পর কিভাবে হবে এগুলো, প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও আধুনিক যন্ত্রপাতির বিষয় আছে। এবং এর সংরক্ষণ সম্পর্কেও জানতে হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আজিজুর রহমান বলেন, লাল ন্যাপিয়ার জাতের ঘাসের ফুল ভ্যালু আরো বেশি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় অনেক কৃষক ন্যাপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করছেন কিছুদিন যাবত।

আজিজুর রহমান বলছেন, অনেকে ধান চাষের বদলে এই ধরণের উচ্চ ফলনশীল ঘাস চাষ করছেন অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য।

‘সীমিত জায়গায় বেশি ফলনশীল ও প্রোটিনযুক্ত ঘাস সারাদেশে সহজলভ্য করার চিন্তা থেকেই এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।’

কিন্তু প্রকল্পটি শুধু ঘাস চাষ দেখতে বিদেশে যাওয়ার জন্য?
কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ঠিক যে, এসব প্রকল্পে অনেক সময় অযাচিতভাবে উঁচু পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার নাম ঢোকানো হয় যারা মাঠ পর্যায়ে এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন না।

গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে ব্যয় কমিয়ে শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যেতে পারেন সেটি নিশ্চিত হতে।

আজিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, মূলত উন্নত জাতের ঘাস চাষ ও সংরক্ষণের কলাকৌশল যারা শিখে আসবেন তারা দেশে এসে সারা দেশে এটি ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করবেন।

আবার ব্যাপক ফলন হলে সংরক্ষণ কিভাবে করা হবে সে প্রশ্নও দেখা হবে। তাই এ সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে কিভাবে কাজ করা হয় সেটি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করবেন কর্মকর্তারা।

‘শুধুমাত্র ঘাস চাষ শেখার প্রকল্প বলে প্রচার করা হচ্ছে যা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দেশের কৃষি ও গবাদি পশুর জন্য,’ বলছেন আজিজুর রহমান।

কী আছে এই প্রকল্পে?
প্রকল্পটি প্রণয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের অর্থনীতি শাখার কর্মকর্তা নন্দদুলাল টিকাদার।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, প্রকল্প প্রণয়নের সময় তারা সারাদেশে দ্রুততম সময়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ঘাস ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়েছেন।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় যেসব কাজ হবে সেগুলো হলো :

• প্রকল্পের আওতায় উন্নত জাতের ঘাসের জার্মপ্লাজম নার্সারি স্থাপন
• সারাদেশে মোট আটটি খামারে ১৫৫ একর জায়গায় নার্সারিগুলো স্থাপন করা হবে
• ঘাস চাষের জন্য সারা দেশে ৯ হাজার জন খামারি ৯০০ একর জমিতে উন্নত জাতের ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করবেন
• সারাদেশ ২৭ হাজার প্রযুক্তি প্রদর্শন প্লট হবে
• অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ হবে ১৮ হাজার কেজি
• ৪৭৫টি উপজেলায় একজন করে কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে যাদের প্রকল্প চলাকালীন সময়ে ভাতা দেয়া হবে
• ৯ হাজার জন খামারিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে
• খামারিদের ভিটামিন মিনারেল ও কৃমিনাশক সরবরাহ করা হবে
• কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন সাভার ডেইরি ফার্মে লজিস্টিক সাপোর্ট- ট্রাক্টর, হার্ভেস্টর, হাইড্রোলিক ট্রলি, ডিপ টিউবওয়েল সরবরাহ করা হবে
• প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেতন, যানবাহনসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাটি নিশ্চিত করা হবে
• অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে ঘাস চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি
• খামার পর্যায়ে প্রাণী পুষ্টি উন্নয়ন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও দুর্যোগকালীন গো-খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সাইলেজ প্রযুক্তি গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ

নন্দদুলাল টিকাদার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, একনেকে যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করে শিগগিরই বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।

‘ব্যয় কমাতে ও বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে যেসব নির্দেশনা আসবে সেগুলো নিশ্চয়ই নিশ্চিত করা হবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে। তবে এটি নিশ্চিত যে প্রকল্পটি আমাদের কৃষি ও গো সম্পদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে,’ বলছিলেন তিনি।

ঠিক মতো শুরু হলে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এটি শেষ হবে এবং দেশে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ঘাস সহজলভ্য হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল