২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ই-পাসপোর্টে বিরল অভিজ্ঞতা

ই-পাসপোর্টে বিরল অভিজ্ঞতা - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে সেবাপ্রাপ্তি সম্পর্কে নানা ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি প্রায়ই হতে হয়। কিন্তু এক বিরল অভিজ্ঞতা হয় ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে। অনলাইনে ফরম পূরণ করে জমা দেয়া। ফরম পূরণ শেষ হওয়ার পর সাক্ষাতের সময় নির্ধারণও অনলাইনে। এর পর প্রিন্ট আউট নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দেয়া। প্রতিটি ধাপে কী হচ্ছে তার হালনাগাদ তথ্য আসে অনলাইনে। অ্যাপয়েন্টের সময় কাছাকাছি এলে মোবাইলে এবং ই-মেইলে সাক্ষাৎকারের সময় জানিয়ে দেয়া হয়। একই সাথে জানানো হয় সময় পরিবর্তন চাইলে কী করতে হবে তাও। 

অবশেষে নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনের আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর সাক্ষাৎকার। সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে ফরম জমা দানের পরই এনরোলমেন্ট অফিসারের কাছে ছবি তোলা, আঙুলের প্রিন্ট নেয়া ও চোখের ছবি গ্রহণের জন্য যেতে হয়। সবকিছুতে মনে হয়েছে বাংলাদেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবার জন্য আসা হয়নি। প্রতিটি পর্বেই অনলাইনে ফিডব্যাক দেয়া হয় কী হচ্ছে এবং কোন পর্যায়ে রয়েছে আবেদন। প্রথমে বার্তা আসে আপনার আবেদন ফরম গ্রহণ করা হয়েছে। এর পর বার্তা আসে পাসপোর্টের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। 

সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হওয়ার পালা পাসপোর্টের সরবরাহ প্রাপ্তিতে। শুনেছিলাম করোনার জন্য পাসপোর্টে জট লেগে গেছে, পেতে লাগতে পারে অনেক সময়। আবেদন ফরমে পাসপোর্ট প্রদানের নির্ধারিত তারিখ উল্লেখ করা হয় ৪ অক্টোবর। অথচ ১৩ সেপ্টেম্বর আবেদন জমা দেয়ার পর ১৬ সেপ্টেম্বরই বার্তা আসে আপনার পাসপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। স্লিপ জমা দিয়ে উত্তরা অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন। উত্তরা অফিস থেকে ই-পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগেনি। 

পাসপোর্টটি পাওয়ার জন্য কোনো পর্যায়ে কাউকে অনুরোধ তদবির বা অন্য কোনো কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। অথচ নির্ধরিত দিনের ১৭ দিন আগে, জমা দেয়ার মাত্র ৪ দিনের মাথায় পাসপোর্ট ডেলিভারি। বাংলাদেশটা যদি সব ক্ষেত্রেই এমন হতো। তবে এটি হতে পারত উপনিবেশ-পূর্ব সময়ের মতো পৃথিবীর সমৃৃদ্ধ একটি অঞ্চল ও দেশ। 
একটা সময় ছিল পাসপোর্ট মানেই দালালের দৌরাত্ম্য, পদে পদে হয়রানি। এবারের ই-পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুরনো বাংলাদেশকে যেন আর খুঁজেই পাওয়া গেল না।

পাসপোর্ট অফিসের প্রতিটি কর্মকর্তার ব্যবহার, মনোভাব ছিল সহযোগিতার। হ্যাঁ এর ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সেটি সোনালী ব্যাংকের পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার ব্যাপারে। প্রথমবার উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে সোনালী ব্যাংকে যাওয়ার পর ফিরিয়ে দেয়া হয় অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের আগে টাকা জমা নেয়া যাবে না। অ্যাপয়েন্টমেন্টের পর জমা দিতে গেলে বলা হয় আবেদনের নাম আর পাসপোর্টের নামের মধ্যে আগে পরে আছে। বললাম এটি এনরোলমেন্ট অফিসার ঠিক করে দেবেন। বলা হলো আগে ঠিক করে নিয়ে আসেন। পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার পর এনরোলমেন্ট অফিসার বললেন কিছুই লাগবে না, আপনি পাশে ওয়ান ব্যাংকে জমা দিয়ে আসেন। সত্যি সত্যি আমি ১৫ মিনিটের মধ্যে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ফি জমা দিয়ে চলে আসি। ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তা শুধু ড্রাফটে নামটা চেক করতে বললেন। অথচ এর আগে সোনালী ব্যাংকে দু’দিন ঘুরে পাসপোর্টের ফিটাই জমা দিতে পারিনি। আর চার দিনের মধ্যে ই-পাসপোর্ট করে সরবরাহ করেন পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের জরুরি ফি বা তদবির ছাড়াই। 

চাইলে এভাবে পুরো বাংলাদেশটাকেই হয়তোবা পাল্টে দেয়া সম্ভব। প্রয়োজন সদিচ্ছা আর বাস্তব উদ্যোগ।


আরো সংবাদ



premium cement