১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্পর্শকাতর মামলায় বন্দীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ

স্পর্শকাতর মামলায় বন্দীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ - ছবি : সংগৃহীত

কারাগারে উগ্রবাদী, আইএস, শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিডিআর ও সংবেদনশীল মামলায় আটক বন্দীদের চলাচল ও গতিবিধি কঠোরভাবে নজরদারির জন্য ৬৮ কারগারের জেলার ও সুপারদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। একই সাথে যেসব কারাগারে এসব স্পর্শকাতর মামলার বন্দী রয়েছে সেসব এলাকার পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেও বলা হয়েছে। 

গত রোববার কারা অধিদফতর থেকে মোট ১৮টি নির্দেশনাসংবলিত চিঠি সব কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
সম্প্রতি কোনো কোনো কারাগারে ফোন করে, চিঠি দিয়ে বন্দী ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে ‘দুষ্কৃৃতকারীরা’। এমন ঘটনা জানার পরই আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা দেশের সব কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় থাকার জন্য চিঠি দিয়ে নির্দেশনা পাঠান। 

সোমবার রাতে কারা অধিদফতরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে শুধু বলেন, সম্প্রতি কোনো কোনো কারাগারে আটক স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের ছিনিয়ে নিতে কারাগারে উড়ো চিঠি দেয়া হয়েছে। কে বা কারা এ চিঠি দিয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে একটি চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়ে তারা বলছেন, এটি অবহিত হওয়ার পরই আইজি প্রিজন্স স্যার দেশের সব কারাগারকে সর্বোচ্চ সতর্কতাবস্থায় থাকতে অধিদফতর থেকে চিঠি পাঠান। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন কারাগারের মুখপাত্র মনজুর হোসেন। 

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মনজুর হোসেন নয়া দিগন্তকে চিঠি পাঠানোর সত্যতা স্বীকার করলেও বিস্তারিত তিনি জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর চিঠিতে কারাগারগুলোকে সর্বোচ্চ সর্তকতায় থাকার জন্য ৬৮ কারা কর্তৃপক্ষকে ১৮টি নির্দেশনার একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চিঠিতে কারাগারে রেড অ্যালার্ট বা ইয়োলো অ্যালার্ট দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। সর্বোচ্চ সতর্কতার কথা বলা আছে।

কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাশিমপুরে দেশের একমাত্র মহিলা কারাগারসহ সব কারাগারে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুষ্কৃৃতকারীদের সম্ভাব্য অপতৎপরতা, বন্দী ছিনিয়ে নেয়া বা পলায়নসহ যেকোনো দুর্ঘটনা রোধপূর্বক কারাগারের সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একজন জেলারের নেতৃত্বে একজন ডেপুটি জেলার ও প্রধান কারারক্ষীসহ পাঁচজন (আগে শাস্তিপ্রাপ্ত হননি) কারারক্ষীর সমন্ব^য়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ বা দাঙ্গা দমনে প্রস্তুত রাখতে হবে, সব কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সর্বোচ্চ সতর্কতাস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে, কারাগারের আরপি গেটে অবশ্যই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা ও হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করে যথাযথ তল্লøাশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, সব ক্ষেত্রে অভ্যাগতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অস্ত্রাগার থেকে দ্রুত অস্ত্র সংগ্রহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় মহড়া পরিচালনা করতে হবে, কারাগারে নিষিদ্ধ দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে, আরপি গেটসহ প্রধান গেটে কার্যকর সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, অ্যালার্ম ব্যবস্থা পরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখতে হবে, কারাগারের নিরাপত্তাঝুঁকি সংক্রান্তÍ সব তথ্য সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে অবহিত করতে হবে। সর্বোপরি কারাগারের অভ্যন্তরের মতো বহির্বিভাগেও নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। 

গতকাল কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আইজি প্রিজন্স অফিস থেকে চিঠি পাওয়ার পর কারাগেটে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে কারারক্ষীরা ডিউটি শুরু করেছেন। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেএমবির দু’জন সদস্য ছাড়াও মহাখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী আকতার হোসেন এবং পুরান ঢাকায় মানুষ খুন করে ১২ টুকরো করার হত্যা মামলার দুর্ধর্ষ আসামি সুমন আটক রয়েছে। আরো রয়েছে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার ৩৮৩ জন আসামি। পুরো কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সশস্ত্র কারারক্ষীদের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টহল দলও আরপি গেটের সামনে দায়িত্ব পালন করছে।


আরো সংবাদ



premium cement