২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বিমানের তিন শতাধিক কেবিন ক্রুর দিন কাটছে কষ্টে

বিমানের তিন শতাধিক কেবিন ক্রুর দিন কাটছে কষ্টে - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। ফ্লাইট সংখ্যা কমে যাওয়া এবং প্রতি মাসে ১৫০০ ডলার ওভারসিজ অ্যালাউন্স ভাতা বা তিল হওয়ায় তিন শতাধিক কেবিন ক্রুর অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকে বাসা ভাড়ার টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তারা অন্তত আউট অ্যালাউন্স বিলটি যেন দেয়া হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। 

গত মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্স চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনো উড়োজাহাজ চলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। যার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে পাইলট, কেবিন ক্রু, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন থেকে শতকরা ১০-৫০ ভাগ টাকা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই টাকা কমানোর ফলে কম বেতনে চাকরি করা গ্রুপ-৪ এ কর্মরত কেবিন ক্রুদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। যাত্রীদের যেসব কেবিন ক্রুরা উড়োজাহাজে হাসিমাখা মুখে সেবা দিতেন তাদের অভাবের কারণে মুখের হাসিও মলিন হয়ে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, এখন কেবিন ক্রুদের প্রকৃত উড্ডয়ন ঘণ্টার ভিত্তিতেই প্রতি ঘণ্টায় ২১ দশমিক ৪৩ মার্কিন ডলার হারে ওভারসিজ অ্যালাউন্স দেয়া হচ্ছে। একই সাথে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। গ্রুপ ফোরে কর্মরত বিমানে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুরা ১৫ হাজার ৯০০ টাকা স্কেলে বেতন পাচ্ছেন। এই সংখ্যা তিন শতাধিক। সেই হিসাবে একজন কেবিন ক্রুর বেতন ২২ হাজার টাকার মতো। অপর দিকে ফ্লাইট কমে যাওয়ায় আউট স্টেশন অ্যালাউন্স মিলও পাচ্ছেন না। 

কেবিন ক্রুরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, ‘২২-২৩ হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে তারা সংসার চালাবেন? কিভাবে বাড়িভাড়া দেবেন আর কিভাবেইবা খাবার খাবেন?
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাধিক কেবিন ক্রু নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানের কেবিন ক্রুর চাকরিতে সবাই আসেন গ্লামার ও আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা ভেবেই। এর বিরাট একটি অংশ আসেন ঢাকা বাইরের জেলা থেকে। চাকরি হওয়ার পরে সবাই এয়ারলাইন্সের পিকআপ ও ড্রপের প্রয়োজনীয়তার কারণে নিঃসন্দেহে একটা মধ্যম মাপের বাসায় ওঠার চেষ্টা করেন। যার ভাড়া কোনো অবস্থায় ২০ হাজার টাকা নিচে নয়। এর বাইরে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে ২৫-৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এর সাথে পারিবারিক প্রয়োজনে বাকি খরচগুলোতো আছেই। কিন্তু এই করোনা সময়ে কেবিন ক্রুদের মাসের পর মাস ২২ হাজার টাকা বেতনে চলতে হচ্ছে। এই সময়ে আউট স্টেশন অ্যালাউন্সও থাকছে না। ফলে যে জিনিসটা দেখা যাচ্ছে পরিবর্তিত জীবনে একবার অভ্যস্থ হয়ে যাওয়ার পর আবার সীমিত আয়ের মধ্যে তাকে একোমোডেট করা একেবারেই অসম্ভব। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে যা কিছু সঞ্চয় ছিল তা প্রথম এক-দুই মাস এমনকি তৃতীয় মাস পর্যন্ত চলা গেছে। চতুর্থ মাসে তো চলার আর কোনো সুযোগ নেই। এর মধ্যে আছে পরিবারকে সাপোর্ট করা।

শিশুদের স্কুল, টিচারের খরচ অথবা পরিবারের কোনো অসুস্থ সদস্য থাকলে তার চিকিৎসার খরচ। এই অবস্থার মধ্যে নিম্ন আয়ের বিমানের গ্রুপ ফোরের যে কেবিন ক্রুরা আছেন তাদের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। এর মধ্যে যারা তাদের থেকে একটু সিনিয়র তাদেরও অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। তারা গাড়ি ব্যবহার করতেন। অনেকেই গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে আউট স্টেশন অ্যালাউন্স ও অন্যান্য অ্যালাউন্সের অনুপস্থিতিতে তাদের জীবনেও দুঃসহ অধ্যায় নেমে এসেছে। রীতিমতো অনেকেই বড় বাসা ছেড়ে ছোট বাসায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন; ভাড়া অ্যাডজাষ্ট করার জন্য। 

এক প্রশ্নের উত্তরে কেবিন ক্রুরা বলছেন, এই অবস্থায় কমবেশি সবারই আউট স্টেশন অ্যালাউন্স আটকে আছে। এক বা দুই মাসের প্রাপ্র্য (জানু- ফেব্রু) অ্যালাউন্সটা যদি ঢাকা থেকে প্রদান করার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে কমবেশি সবারই ঈদের একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। তারা বলেন, এই মুহূর্তে শুধু গ্রুপ ফোরে কর্মরত আছেন ৩০০-এর মতো কেবিন ক্রু। শুধু গ্রুপ ফোরের সমস্যা হচ্ছে তা না, সবারই সমস্যা হচ্ছে। তারা বলেন, তবে গ্রুপ ফোরের যারা অবিবাহিত অথবা সদ্য বিবাহিত (তারকা শিল্পী) সহকর্মী তারা যে এখন কী অবস্থায় আছেন তা একমাত্র আল্লাহই জানেন বলে জানান তারা। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমাদের কর্তৃপক্ষ যে আদেশ করছেন (বিশেষ ফ্লাইট) সেটাই আমরা করে দিচ্ছি। তাহলে আমাদের অ্যালাউন্সগুলো দিলে অসুবিধা কোথায়? আমরা তো অতিরিক্ত কিছু চাচ্ছি না? 

এ প্রসঙ্গে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তাহেরা খন্দকারের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।


আরো সংবাদ



premium cement