২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আগামী বছরের জন্য হজের নিবন্ধন বহাল রাখছেন অধিকাংশ যাত্রী

আগামী বছরের জন্য হজের নিবন্ধন বহাল রাখছেন অধিকাংশ যাত্রী - ছবি : সংগৃহীত

এ বছর হজে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন তাদের বেশির ভাগই আগামী বছরের জন্য নিবন্ধন বহাল রাখছেন। নিবন্ধন বাতিল করে টাকা প্রত্যাহারে প্রত্যাশী যাত্রীর সংখ্যা ৫ শতাংশের কম হতে পারে। বহির্বিশ্বের মুসলমানদের এ বছর হজ পালনের সুযোগ নেই মর্মে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানোর পর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিবন্ধন বাতিল করবেন মনে করা হলেও এখন অনেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। এ দিকে নিবন্ধনের জন্য আজ থেকে নয়, আগামী ১৯ জুলাই রোববার থেকে অনলাইনে আবেদন করা যাবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। 

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, যারা এ বছর নিবন্ধন করেছেন তারা নিশ্চিতভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী বছর হজে যেতে পারবেন। যারা টাকা ফেরতের জন্য আবেদন করবেন তাদের প্রাক-নিবন্ধনসহ সব বাতিল হয়ে যাবে। ফলে তার পক্ষে আগামী বছর হজে যাওয়ার কোনো সুযোগই থাকছে না। আবার হজে যেতে চাইলে তাকে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে। আগামী বছরের জন্য কোটার অতিরিক্ত প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছেন। ফলে আগামী বছর হজ পালনপ্রত্যাশী কেউই টাকা প্রত্যাহার কিংবা নিবন্ধন বাতিলে আগ্রহী হবেন না বলেই আমরা মনে করছি। 

অন্যান্য কারণে কিছু সংখ্যক প্রত্যাহার করার জন্য যোগাযোগ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই সংখ্যা কত হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সংখ্যা একেবারে কম হবে মনে হচ্ছে। 

আবাবিল ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মো: আবু ইউসুফ জানান, হজযাত্রীদের মধ্যে বিষয়টি প্রথম দিকে পরিষ্কার ছিল না। কিন্তু এখন জানার পর অনেকে মত পরিবর্তন করে নিবন্ধন বহাল রাখছেন। তার মতে, প্রত্যাহারপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৫ শতাংশের কম হতে পারে। 

হাবের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানান, তার এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রীদের কেউ এখন পর্যন্ত টাকা প্রত্যাহারের জন্য যোগাযোগ করেননি। তিনি আরো জানান, তার পরিচিত অপর এক এজেন্সির দুই শতাধিক হজযাত্রীর মধ্যে মাত্র ১০-১২ জন প্রত্যাহারের জন্য যোগাযোগ করেছেন।
হজ ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান মক্কা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের স্বত্বাধিকারী মাওলানা খোরশেদ আলম জানান, প্রথম দিকে কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন তাদের টাকা ও নিবন্ধনের কী হবে তা জানার জন্য। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় নিবন্ধন আগামী বছরের জন্য বহাল রাখার ঘোষণা দেয়াসহ বিষয়টি পরিষ্কার করায় আমরা হজযাত্রীদের সব বুঝিয়ে বলেছি। এর ফলে আগামী বছর হজে যাওয়ার জন্য অনেকে এখন অপেক্ষা করাকে বেছে নিচ্ছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নুরুল ইসলাম বলেছেন, হজযাত্রীরা চাইলে টাকা প্রত্যাহার করে নিতে পারবেন অথবা আগামী বছরের জন্য তাদের নিবন্ধন বহাল রাখতে পারবেন। নিবন্ধিত, প্রাক-নিবন্ধিত সবার নিবন্ধন ও জমা টাকার নিরাপত্তার বিষয়টি মন্ত্রণালয় নিশ্চয় করেছে। কোনো বেসরকারি এজেন্সি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো হজযাত্রীর টাকা খরচ করতে পারবে না। 

গত ২৩ জুন সৌদি সরকার জানায়, সৌদি আরবে বসবাসরত সীমিতসংখ্যকের অংশগ্রহণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছরের হজ পালিত হবে। এ বছর বাইরের কেউ হজ করতে পারবে না। হজপালনকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ হাজার হবে এবং তারা প্রথমবারের মতো হজপালনকারী এবং বয়স ৬৫ বছরের নিচে হতে হবে। এরপরই ধর্ম মন্ত্রণালয় এক বৈঠক করে নিবন্ধনকারী হজযাত্রীদের টাকা প্রত্যাহার করে নেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা জানায়। বলা হয়, ১২ জুলাইয়ের পরে অনলাইনে আবেদন করে টাকা ফেরত নিয়ে নিবন্ধন বাতিল করা যাবে।
এ ব্যাপারে গতকাল রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৩ জুলাই নয়, ১৯ জুলাই রোববার থেকে অনলাইনে টাকা ফেরত নেয়ার আবেদন করা যাবে। এর আগে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে ই-হজ সিস্টেমের ওপর ব্যাংক প্রতিনিধি, নিবন্ধন কেন্দ্রের প্রতিনিধি ও হজযাত্রী নিবন্ধনকারী এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে আজ ১৩ জুলাই থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। 

এতে বলা হয়, হজবিষয়ক পোর্টাল অথবা নির্ধারিত লিংকে হজযাত্রী নিজে অথবা নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিবন্ধন বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন গৃহীত হলে তার অনুকূলে নিবন্ধন বাতিল ভাউচার তৈরি হবে এবং ২০২০ সালের নিবন্ধন বাতিল হবে। ভবিষ্যতে হজে যেতে হলে তাকে নতুন করে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন বাতিলকারী ব্যক্তিকে কোনো রকমের কর্তন ছাড়াই প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের টাকা ফেরত দেয়া হবে। অনলাইনে ব্যাংক ট্রান্সফার, পে-অর্ডার অথবা সরাসরি টাকা ফেরত দেয়া হবে। 
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্টদের নিবন্ধন বাতিলের অনলাইন পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণের জন্য এক সপ্তাহ সময় নেয়া হয়েছে। জোন ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ হবে। এ ছাড়া ভার্চুয়ালিও দু-একটি সেশনের চিন্তা করছে হজ অফিস। 

এ বছর বাংলাদেশের জন্য হজের কোটা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চলা নিবন্ধন কার্যক্রমে ৬৪ হাজার ৫৯৯ জন নিবন্ধন করে, যার সরকারি ব্যবস্থাপনার ৩ হাজার ৪৫৭ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৬১ হাজার ১৪২ জন। 

এ দিকে প্রাক-নিবন্ধিত আছেন সরকারি ৩ হাজার ১৫১ জন এবং বেসরকারি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪২ জন। সৌদি আরবে অবস্থানরত যে ১০ হাজার মুসলিম এ বছর হজ পালন করার সুযোগ পাবেন তাদের ৭০ ভাগ বিদেশী এবং ৩০ ভাগ সৌদি নাগরিক। ইতোমধ্যেই সেখানে বিদেশী নাগরিকদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ৯ জিলহজ ৩০ জুলাই পবিত্র হজ পালিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement