২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি

আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার পানির মূল্য ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি - সংগৃহীত

ঢাকা ওয়াসা আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির বিল ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক গ্রাহকের বিল বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। ইতোমধ্যে ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী প্রতি হাজার লিটার পানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা; যা আগে ছিল ১১ টাকা ৫৭ পয়সা। আর বাণিজ্যিকে প্রতি হাজার লিটারে ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে পানির মূল্য ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। মাত্র সাত মাসের মাথায় পানির মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি চাপে পড়ে গেছেন রাজধানীবাসী। বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পানির আবাসিকে মূল্য বাড়ানো মোটেও যুক্তিযুক্ত হয়নি। এটা অমানবিক মনে করছেন তারা। পানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে তারা সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এপ্রিল মাসের বিল গত মে মাসে হাতে পেয়ে অবাক হয়ে গেছেন গ্রাহকরা। মাত্র সাত মাসের মাথায় পানির মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে পারছেন না রাজধানীবাসী। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মানুষের আয় যখন কমে গেছে, তখন এ পানির বিল বৃদ্ধি অমানবিক মনে করছেন গ্রাহকরাও। তবে পানির এ মূল্যবৃদ্ধি করোনাভাইরাসের মধ্যে করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পানির এ মূল্যবৃদ্ধি করোনাভাইরাসের আগেই করা হয়েছে। কার্যকর করা হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে। তবে সারচার্জ নেয়া হচ্ছে না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে পানির বিল বাড়ানো মোটেও যুক্তিযুক্ত হয়নি। তিনি জানান, মানুষের এমনিতেই আয় কমে গেছে। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মানুষের জীবন চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ সময়ে পানির মূল্য বাড়ানো মোটেও যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে তিনি মনে করেন। এটা অমানবিক। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এতে তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতের উৎপাদনব্যয় কমে গেছে। প্রাকৃতিক উৎস ওয়াসার পানি উত্তোলন করতে প্রয়োজন হয় বিদ্যুতের। ওয়াসার যদি লোকসান হয়ই তাহলে তারা সরকারের কাছে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর আবেদন করতে পারত। তা না করে দেশের এ দুঃসময়ে জনগণের ঘাড়ে বাড়তি বিল চাপানো মোটেও ঠিক হয়নি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের এ মহামারীর মধ্যে পানির মূল্যবৃদ্ধি মোটেও ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, মানুষের আয় কমে গেছে। এ সময়ে প্রয়োজনে পানির বিলের ওপর ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে, কিন্তু সেখানে গ্রাহকের ওপর বাড়তি বিল চাপিয়ে দেয়া সত্যিই অমানবিক। এ অসাধু ব্যবসার মানসিকতা থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বের হয়ে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের ওপর যে বাড়তি মূল্য চাপানো হয়েছে তা সমন্বয় করে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সাথে চলতি অর্থবছরে যেন পাানির মূল্য আর বৃদ্ধি না করা হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বাইরেও প্রতি বছর ওয়াসা যে পানির মূল্য বৃদ্ধি করে তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না। তাই মূল্য বাড়ানোর প্রক্রিয়াও সংশোধনের দাবি জানান তিনি।

রাজধানীর খিলগাঁও থেকে একটি কলেজের অধ্যাপিকা জানান, ওয়াসার পানির বিলের ওপর শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়া হয়, সারচার্জ কখনো নেয়া হয় না। তিনি দুই বছরের তিনটি বিলের কপি এ প্রতিবেদকের কাছে পাঠিয়ে এর প্রমাণও দিয়েছেন। যেমন, গত বছরের আগস্টে প্রতি হাজার লিটার পানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ টাকা ২ পয়সা হারে। এতে ওই মাসে তার যে বিল এসেছিল তার ওপর শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। কোনো সারচার্জ ধার্য করা হয়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নতুন হার অর্থাৎ ১১ টাকা ৫৭ পয়সা হারে তাকে পানির বিল দেয়া হয়েছে। তাতে ওই মাসে যে বিল করা হয়েছে তার ওপর শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সারচার্জ ধার্য করা হয়নি। আবার সাত মাসের মাথায় নতুন মূল্যহার অর্থাৎ ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা হারে যে বিল ওয়াসা থেকে পরিবেশন করা হয়েছে তাতেও তার মোট বিল ২ হাজার ৪০০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৩৬০ টাকা যুক্ত করে ২ হাজার ৭৬০ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে ওয়াসার এমডি কিভাবে করোনার কারণে সারচার্জ মওকুফ করলেন।

ওই অধ্যাপিকা জানান, বর্তমানে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে একটানা দুই মাস সাধারণ ছুটি ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের। বেশির ভাগ বাণিজ্যিক অফিস বন্ধ ছিল। মানুষ এখন চলতে পারছে না। এখনো মানুষ আতঙ্কে ঘর হতে বের হতে পারছেন না। এ খারাপ সময়ে ওয়াসার পানির মূল্য ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি কোনোভাবেই ঠিক হয়নি বলে ওই অধ্যাপিকা মনে করেন। এটি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement