২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৬৮ কারাগারে কোয়ারেন্টিনে ৬৪ জন : ১ কয়েদি ও ২১ কারারক্ষী করোনাক্রান্ত

৬৮ কারাগারে কোয়ারেন্টিনে ৬৪ জন : ১ কয়েদি ও ২১ কারারক্ষী করোনাক্রান্ত - সংগৃহীত

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে এ মুহূর্তে প্রায় ৯০ হাজার বন্দী অবস্থান করছেন। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সোমবার পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৪৪ জন বন্দী রয়েছেন; যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে কর্তৃপক্ষ কারাগারের প্রধান গেট থেকে শুরু করে কারা অভ্যন্তরের প্রতিটি সেলে থাকা হাজতি ও কয়েদিদের চলাফেরাসহ সবকিছুই কঠোর মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখছে। যার কারণে এখন পর্যন্ত কোনো বন্দী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।

তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কয়েদি এবং ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২১ জন কারারক্ষী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, কারাগারের অধীনে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেষণে বিভিন্ন হাসপাতালে বন্দীদের নিরাপত্তার ডিউটি করতে গিয়ে ২০ জন কারারক্ষী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার সর্বশেষ পুরাতন ঢাকায় কর্মরত কারারক্ষী শাহিনুরের করোনা টেস্ট পরীক্ষায় পজিটিভ আসে। তাকে মিরপুর মেটার্নিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো: মনজুর হোসেন ২১ জন কারারক্ষী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান। এ ছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন কয়েদি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হন। বর্তমানে তিনি মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আর কারারক্ষী যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সবাই কেরানীগঞ্জ কারাগারের স্টাফ। ঢাকা মেডিক্যাল, বিএসএমএমইউ, বক্ষব্যাধি, হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিক্যালে তারা ডিউটিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন জিঞ্জিরা ২০ শয্যার হাসপাতালে, ১০ জন মিরপুর মেটার্নিটিতে এবং অপর ৯ জন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিনে (আইলোসেলশন বাদে) আছেন ঢাকা বিভাগে ৩৩ জন কারারক্ষী অন্যত্র ১৭ জন কারারক্ষী, সিলেটে একজন কারারক্ষী, একজন হিসাবরক্ষক, বরিশালে একজন কারারক্ষী, চট্টগ্রাম বিভাগে দুইজন কারারক্ষী ও ৯ জন বন্দী।

গতকাল পর্যন্ত কারাগারে মোট বন্দী কতজন রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮৮ হাজার ৭৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৫ হাজার ২১৩ জন আর মহিলা ৩ হাজার ৫৪১ জন। এর মধ্যে নতুন বন্দী এসেছে ২৬৭ জন এবং জামিনে মুক্তি পেয়েছে ৩২০ জন । এ দিকে জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতালে চিকিৎসার পর ছাড়পত্র পাওয়া দুই বন্দীকে কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে নির্মাণাধীন মহিলা কারাগারের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিনে তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা না দিলে তাদেরকে কারাগারের (পুরুষ) সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠানো হবে।

গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ নাদিম (৩৫) নামে এক আসামিকে গত ৯ মার্চ জাতীয় অর্থোপেডিকস হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। একইভাবে গত ৭ এপ্রিল রমজান (৫৩) নামে অপর এক বন্দীকে চিকিৎসার জন্য একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর তাদের দু’জনকে গত ২৮ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র পাওয়া দুই বন্দীকে কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে না নিয়ে পাশের নতুন মহিলা কারাগারে পর্যবেক্ষণে (আইসোলেশন) রাখার ব্যবস্থা করে। ১৪ দিন পর্যন্ত তারা দু’জন সেখানেই থাকবেন। এ সময়ের মধ্যে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো ধরনের উপসর্গ যদি দেখা না দেয়, তাহলে তাদেরকে কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে ফিরিয়ে নেয়া হবে। ইতোমধ্যে আইসোলেশনে দুইজনের ৮ দিন কেটে গেছে। এখন তারা অনেকটা সুস্থ।

গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সোমবার পর্যন্ত কারাগারে হাজতি কয়েদি মিলিয়ে বন্দীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৪ জন ছিল। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী থাকলেও এ কারাগারে বন্দীদের থাকা খাওয়ায় তেমন একটা সমস্যা হচ্ছে না। তারা বলেন, এই মুহূর্তে করোনার কারণে কারাগার এলাকায় বহিরাগত কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। যেসব বন্দীর স্বজন পিসির (প্রিজনার ক্যাশ) মাধ্যমে এখন টাকা এবং খাবার দিতে আসছে তাদের সবাইকে কারাগার এলাকার প্রধান সড়কের সামনে আটকে দেয়া হচ্ছে। এখান থেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে পিসির টাকা স্লিপের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে কারারক্ষীরা বন্দীদের খাবারও সেখান থেকেই বিক্রি করছে। পরে সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে কারাগারে বন্দীর সাথে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ অনেক কম হচ্ছে।
শুধু বন্দীর স্বজনরা কারাগার এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেন না তা কিন্তু নয়, কারাগার সংশ্লিষ্ট যারাই কারা অভ্যন্তরে অর্থাৎ অফিস এলাকা পর্যন্ত যেতে চাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। এরপর হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, কারাগারের বনফুল ও শাপলা ওয়ার্ডে যেসব বন্দীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে গত সপ্তাহে ৮ জনকে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, এবারো গত বছরের মতো প্রতি বন্দীর জন্য ইফতারে ৩০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এতে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, শরবত ও কলাসহ অন্যান্য আইটেম রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement