২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কারাগারে প্রতিদিন নতুন বন্দী যাচ্ছে, জামিন কম

কারাগারে প্রতিদিন নতুন বন্দী যাচ্ছে, জামিন কম - সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রতিদিন ঢাকার আদালত থেকে বিভিন্ন মামলার আসামিদের শুনানির পর প্রেরণ করা হচ্ছে কারাগারে। পক্ষান্তরে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া বন্দীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্দীদের কোনো কোনো সেলে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। তারপরও কারা প্রশাসন থেকে বন্দীদের স্বাস্থ্যগত সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত সোমবার থেকেই কারাগারের প্রধান ফটকে নতুন বন্দীদের তাপমাত্রা মেপে কারা-অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়েছে। সাথে কারারক্ষীসহ সংশ্লিষ্টদেরও।
এ দিকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দীকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষাসেবা বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গৃহীত পদক্ষেপের এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপরও ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলার থানাগুলো থেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আদালতগুলো ছুটিতে থাকলেও উল্লিøখিত অপরাধে গ্রেফতারের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে শোনার জন্য দু-একজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। ছুটি ঘোষণার কারণে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে শুনানিতে আসছেন না। ফলে আদালত নিজে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন এবং আসামিদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর আদালত এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। তারপরও নতুন গ্রেফতার হওয়া আসামিদের শুনানির জন্য সিএমএম আদালতের অধীনে ৩৫টি আদালতের মধ্যে দু’টি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে ঢাকা জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরো জানান, আদালতে ওঠানোর আগে স্বল্প সময়ের জন্য আসামিদেরকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়। এদের মধ্যে যেসব আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি থাকে তাদেরকে শুধু আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়। যাদের রিমান্ড চাওয়া হয় না তাদেরকে হাজতখানায় রাখা হয় এবং তাদের মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত দেখে প্রয়োজনীয় আদেশ দেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ৬১ জন আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদের মধ্যে সিএমএম আদালত থেকে ৫৪ জনকে এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সাতজনকে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কোর্ট হাজতের ওসি শহিদুল ইসলামের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।

গতকাল পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে মোট বন্দী ছিলেন প্রায় ৮২ হাজার ৮২৮ জন।
গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে জানান, আজকে পর্যন্ত এ কারাগারে ৯ হাজারের মতো বন্দী অবস্থান করছে। তবে গত ২৫ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বন্দী কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়নি।

সূত্রটি জানায়, এই সময়ের মধ্যে নতুন বন্দী প্রতিদিন কারাগারে আসছে। তবে অন্য সময়ের তুলনায় বন্দী আসার সংখ্যা অনেক কম। কোনো দিন ৩৫ জনও আসছে। তবে পুরনো বন্দীরা জামিনে মুক্তি পায়নি। তাদের মতে, যদি এসব বন্দীর বিশেষভাবে শুনানির ব্যবস্থা করে জামিনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে কারাগারে বন্দীর চাপ কমত। তারপরও আমরা বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা করণীয় তার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।

গতকাল রাতে সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে কতজন নতুন বন্দী এসেছেন এবং জামিনে কতজন বন্দী মুক্তি পেয়েছেন তা জানতে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষাসেবা বিভাগের গৃহীত পদক্ষেপের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, সর্বশেষ ২৮ মার্চের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কারাগারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোনো পজিটিভ কেস নেই। তবে অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে কারো ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে তাদেরকে পৃথক কক্ষে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন কারাগারে মোট ৪০ বন্দীকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। দেশের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, করোনা আক্রান্তদের কোনো পজিটিভ কেস পাওয়া গেলে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্দীদের জন্য বিভাগভিত্তিক কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, সিলেট, ফেনী ও দিনাজপুর জেলা কারাগারে আইসোলেশন সেন্টার গঠন করা হয়েছে। করোনার সম্ভাব্য সংক্রমণ এড়াতে কারাগারে বন্দীদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, বন্দীরা যেন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে উদ্বিগ্ন না হন সে জন্য জরুরি টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্দী ও স্টাফদের বিদেশফেরত আত্মীয়-স্বজনকে কারা এলাকায় প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, কারা এলাকায় প্রবেশকারী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে। হ্যান্ড ওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিউটিতে প্রবেশের আগে কর্মরত সবার হাত ও বুট-জুতা জীবাণুমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া নিয়মিত দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে যেন সংক্রমণ সন্দেহ হলে সংশ্লিøষ্ট ব্যক্তিকে পৃথক করে ফেলা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement