১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় - সংগৃহীত

চলতি মাসেই বেআইনিভাবে কুড়িগ্রামের সাংবাদিককে মধ্যরাতে ডিসি অফিসের দুই-তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে উলঙ্গ করে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করেন। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেন। প্রশাসনের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই মাস্ক না পরায় তিন প্রবীণ ব্যক্তিকে রাজপথে কান ধরান যশোরের মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এভাবে একের পর এক বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে বিব্রত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকুরেদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে। জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মাধ্যমে তাদের সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, এর ব্যত্যয় হলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। কেউ যেন দায়িত্বে অবহেলা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করেন। এতে ব্যাড ইমেজ তৈরি হচ্ছে, আমরা এর দায়ভার নেব না। বাহাদুরি দেখানোর জন্য কোনো কাজ করলে, শৃঙ্খলাবিধি ভঙ্গ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনজন সিনিয়র সিটিজেনকে কান ধরিয়ে মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান ভুল করেছেন বলে মত দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, মনিরামপুর উপজেলার ইউএনও ওই বয়স্ক তিনজনের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের হাতে খাদ্যসামগ্রী এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার তুলে দিয়েছেন।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, যে তিনজন সিনিয়র সিটিজেন সাথে খারাপ আচরণ করা হয়েছে, যা ঘটেছে তাতে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তার পক্ষে আমাদের সরি বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাদের আচরণের জন্য আমাদের বিব্রত হতে হয়। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি।

জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. মু: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ওই কর্মকর্তাকে মনিরামপুর থেকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় কমিশনার অফিসে সংযুক্ত করেছি। তার অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে মনিরামপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চিনাটোলা বাজারে অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে পড়েন প্রথমে দুই বৃদ্ধ। এর মধ্যে একজন বাইসাইকেল চালিয়ে আসছিলেন। অপরজন রাস্তার পাশে বসে কাঁচা তরকারি বিক্রি করছিলেন। তাদের মুখে মাস্ক ছিল না। এ সময় পুলিশ ওই দুই বৃদ্ধকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে সাইয়েমা হাসান শাস্তি হিসেবে তাদের কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে অপর এক ভ্যানচালককে অনুরূপভাবে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ঘটনার রাতে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন নাগরিকরা।
কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন এবং আরো দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জনের একটি দল তুলে নিয়ে যায়।

রিগান জানান, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না, ডিসি স্যার বলেছে তোকে উচিত শিক্ষা দিতে।’ এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটরা তাকে ডিসি অফিসে নিয়ে এসে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। পরে তার চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটি স্বাক্ষর নেয় এবং জেলে পাঠায়। পরে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।

‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে ‘মুজিববর্ষের প্রাক্কালে কুড়িগ্রামে ব্যাপক নিয়োগবাণিজ্যের জনশ্রুতি চলছে, ঘটনা কি সত্য ?’ শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
জেলা প্রশাসনের বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহস্রাধিক কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে মনিরামপুরের ঘটনাকে আমি বিছিন্ন বলব। তবে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয়। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement