২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

লন্ডন ছাড়া বিমানের সব দেশে ফ্লাইট বন্ধ

লন্ডন ছাড়া বিমানের সব দেশে ফ্লাইট বন্ধ - সংগৃহীত

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর সেটি বাংলাদেশেও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গতকাল রোববার থেকে রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্বের ১৮টি রুটের মধ্যে যুক্তরাজ্যের হিথ্রোসহ দু’টি রুট খোলা ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সাথে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এসব রুটে বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরতদের মধ্যে যারা দেশে ফিরছেন তাদের কারো না কারো মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

শুধু বিমান বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশে চলাচলকারী বিদেশী বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ২৮০টি ফ্লাইট কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন তার এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে শঙ্কিত বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ মার্চ থেকে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশে বসবাসকারী অথবা ভ্রমণের জন্য অবস্থানকারী সব ব্যক্তিকে আজ দুপুর ১২টা থেকে আগামী ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত বাংলাদেশে আগমনকারী বিমানগুলোয় আনয়ন বন্ধ থাকবে।
গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে গড়ে ১২-১৩ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করতেন। কিন্তু এখন খাঁখাঁ করছে। দেশী-বিদেশী ফ্লাইট সংখ্যা কমতে থাকায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যুক্তরাজ্যের হিথ্রো ও ম্যানেচেস্টার রুট ছাড়া বাকি সব রুটের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কিছু কিছু দেশের টিকিট কাটা বিমানের যাত্রী থাকায় তাদের নিয়ে যাওয়া এবং আনার জন্য কিছু ফ্লাইট চলাচল করতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যুক্তরাজ্যে ছাড়া সব দেশে ফ্লাইট বন্ধ রাখার বার্তা দেন। তবে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিমানের শিডিউল অনুযায়ী ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা ফ্লাইটটি রাত সোয়া ৭টায় (বিজি-০৮৬) ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা। একইভাবে দুবাইয়ের উদ্দেশে (বিজি-১৪৭) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, মাস্কাটের উদ্দেশে (বিজি-০২১) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং আবুধাবির উদ্দেশে রাত ১০টা ৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ দিকে গতকাল বিমান বাংলাদেশের নির্ধারিত সৌদি আরবগামী দাম্মাম, রিয়াদ, জেদ্দা ও মদিনা ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর আগে কুয়েত ও দোহা ফ্লাইট বাতিল করা হয়। কলকাতা ও দিল্লি ফ্লাইট আগেই বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকক, কাঠমাণ্ডু, সিঙ্গাপুর রুটের ফ্লাইট কাটছাঁট করা হয়েছে। আগে সপ্তাহে সাত দিন ছিল। সেটি দু’দিন কমিয়ে পাঁচ দিন করা হয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে এসব ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যাবে কি না সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। বলছিলেন বিমানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের মোট ১৮টি রুটে ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মধ্যে ইয়াংগুন রুট লোকসানের কারণে অনেক আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অপর দিকে লন্ডনের ম্যানচেস্টার ও সৌদি আরবের মদিনা রুটে বিমান সম্প্রতি সরাসরি ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছিল। তার মধ্যে মদিনা ফ্লাইট গতকাল থেকে বন্ধ হয়েছে। গতকাল বিমানের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে যদি বিমানবন্দরের সব কার্যক্রমই স্থবির হয়ে পড়ে তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি।

বিমানের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ সোমবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবুধাবি হয়ে জেদ্দা যাওয়ার শিডিউল রয়েছে বিমানের বোঢিং ৭৭৭-৩০০ ইআর এর। ওই ফ্লাইটটি পরে জেদ্দা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরবে।
এর আগে শনিবার ও রোববার সকালে দু’টি ফ্লাইটে ইতালি থেকে দেশে ফেরা ২১০ জনকে আশকোনার হজক্যাম্পের অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement