২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সড়ক নির্মাণ ব্যয় ১৭৩ ভাগ বেশি মাতারবাড়ির

- ছবি : সংগৃহীত

আকাশ-পাতাল ব্যয় ব্যবধান মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে সড়ক নির্মাণে। যা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আপত্তি। সেই আপত্তি সত্ত্বেও প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য যাচ্ছে। চলমান পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে সড়ক নির্মাণ খরচের চেয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ১০৪ কোটি টাকা বা ১৭৩.৩৩ শতাংশ বেশি।

পায়রাতে ব্যয় ৬০ কোটি টাকা। মাতারবাড়িতে ১৬৪ কোটি টাকা। আর পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে ব্রিজ নির্মাণে কিলোমিটারে খরচ ৩৫৬ কোটি টাকা। মাস্টার প্ল্যান তৈরির পাঁচ বছর পর প্রকল্পটি আগামীকাল মঙ্গলবার অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে যে কয়টি সমুদ্রবন্দর রয়েছে তার কোনোটিই গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল এসব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বিষয়ে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পটি নেয়া হয়।

জাপানের কাশিমা ও নিগাতা (পূর্ব) নামে দু’টি বন্দরের আদলে গড়ে তোলা হবে দেশের প্রথম এই গভীর সমুদ্রবন্দর। এ বন্দরে থাকবে একটি কনটেইনার টার্মিনাল ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। বন্দরটিতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ। এ বন্দর চালু হলে একদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানি পণ্যের হ্যান্ডলিং বাড়বে অন্য দিকে চাপ কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর।

২০১৬ সালে জাইকা একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে। যাতে মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের সম্ভাবনার কথা বলা হয়। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাট এলাকায় প্রকল্পটি করা হবে। এই প্রকল্পে জাইকার ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা। আগামী ৭ বছরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। এ বছর অনুমোদন পেলে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা।

জাইকার ওই সার্ভে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ দুই হাজার টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ কলম্বো, জওয়াহেরলাল নেহেরু, করাচি ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। এ বিবেচনায় মাতারবাড়িতে অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কনটেইনার পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প।

মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরে ৩০০ এবং ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দু’টি টার্মিনাল থাকবে। এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়তে পারে না। যার ফলে মাদার ভেসেলগুলো বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। এতে ফিডার জাহাজে করে কন্টেইনার আনা নেয়া করা হয়। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৮০০ টিইইউএস আমদানি পণ্য কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়ে থাকে।

মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার গভীরতার জন্য মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ থাকায় একসাথে আট হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর ফলে এখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দু’টি টার্মিনাল থাকবে। এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।

প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে : ১১.৮ হেক্টর জমির ওপরে বহুমুখী টার্মিনাল ও ২০.২ হেক্টর জমির ওপরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মধ্যে দু’টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, একটি মাল্টি গ্যান্ট্রি ক্রেইন, ছয়টি আরটিজি, দু’টি রিচ স্ট্যাকার ও ১২টি ইয়ার্ড চেসিস ট্রাক্টর, প্রাসঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম ক্রয়ের মধ্যে তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট ও একটি সার্ভে বোট, ২৬.৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পরামর্শক সেবা গ্রহণ।

প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০.৬৪৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে খরচ তিন হাজার ৩৮৪ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১৬৪ কোটি টাকা। যেখানে পায়রাতে ব্যয় হচ্ছে ৬০ কোটি টাকা। ৭.০৫৪ কিলোমিটার ব্রিজ ও সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫১০ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৩৫৫ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। আর ড্রেজিংয়ে যাবে এক হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

আর পরামর্শক খাতে ব্যয় ৮৩৬ কোটি টাকার মতো প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক খাতে একটিতে ৮১৩ জনমাসের জন্য ২৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, আরএইচডিতে প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা, সড়ক ও ব্রিজের জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ৯৪ লাখ টাকা, অভ্যন্তরীণ ব্যয় নিরীক্ষকে এক কোটি টাকা, ডিজাইন ও সুপারভিশনে তিন হাজার ৮৪৫ জনমাস পরামর্শকে ব্যয় ৫৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য পরামর্শক ২০ লাখ টাকা এবং এনজিও সেবার জন্য ১৫ কোটি টাকা। বিদেশী ঋণের সুদ খাতে যাবে ২০৬ কোটি ৮১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। টার্মিনাল ভবণ নির্মাণে যাবে ১০০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পটির জন্য জাইকা শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ হারে প্রকৌশল সেবা ঋণ এবং শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ সুদে প্রকল্পের মূল ঋণ দেবে। অফিস ভাড়া বাবদ যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা পিডব্লিউডির সর্বশেষ রেট সিডিউল অনুযায়ী ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রকল্পটি নেয়া জরুরি কিন্তু এর বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাব অনেক বেশি। পায়রা বন্দরের সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে যে খরচ হবে এখানে তার চেয়ে ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। পায়রাতে ব্যয় ৬০ কোটি টাকা। জ্বালানি খাতে ব্যয় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। এটাকে যৌক্তিক পর্যাযে নামিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয়ের মাত্রা বেশি। এটাকে দুই কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। পরামর্শক খাতে যে সম্মানী ধরা হয়েছে তা যৌক্তিক পর্যায়ে আনার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ ছিল।


আরো সংবাদ



premium cement