২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বেতনবৈষম্যে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা

বেতনবৈষম্যে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা - সংগৃহীত

সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত অফিস সহায়ক আমিরুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। ২০১৭ সালে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীতে এক রুমের বাসা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। শরিফের চাকরি ২০তম গ্রেড হওয়ায় তার বেতন স্কেল ৮ হাজার ২৫০ টাকা অনুযায়ী তিনি বেতন পাচ্ছেন ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই টাকার মধ্যে এই স্কেলের একজন কর্মচারীকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাসা ভাড়া দিতে হয় মূল বেতনের ৬০ শতাংশ। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই।

অন্য দিকে সরকারের একজন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার বেতন স্কেল কমপক্ষে ৭৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তিনি বেতন পান প্রায় দেড় লাখ টাকা। এর বাইরে গাড়ি মেইনটেন্যান্সের জন্য পান ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন সভার সম্মানী তো আছেই। বছরে তিন থেকে পাঁচটি বিদেশ সফরে পান অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা।

অথচ সরকারের এই দুই গ্রেডের কর্মচারী বাজার করেন একই দোকান থেকে। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই স্ত্রী সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
পে-স্কেল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০ থেকে ১১তম গ্রেডের কর্মচারীদের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকায় শুরু হয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের বেতন স্কেলের মোট পার্থক্য ৪২৫০ টাকা। পাশাপাশি ১০ থেকে প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৮ হাজার টাকায় শেষ হয়। এই ১০টি গ্রেডের পার্থক্য ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি, আবাসনসুবিধা, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণসহ নানাবিধ সুবিধা। অথচ প্রত্যেকে একই বাজারব্যবস্থার কাঠামোর আওতায় জীবন ধারণ করেন, এতে শ্রেণীবৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানাভাবে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা। তারা পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।
এমন প্রেক্ষাপটে এ বছরের শুরু থেকে সারা দেশের কর্মচারীরা ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম, বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) ব্যানারে টানা আন্দোলন করছেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে টানা কর্মবিরতি, অফিস চত্বরে অবস্থান ও সভা-সমাবেশ করছেন নিজ নিজ কার্যালয়ে। আগামী ২৭ মার্চের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২৮ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহাসমাবেশের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বাকাসসের নেতারা।

১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামের আহবায়ক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। বেতনবৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যদের দফতরেও স্মারকলিপি দিয়েছি। এরপর ৫০ এর অধিক মন্ত্রী ও এমপির দফতরে এ সংক্রান্ত স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। বেতনবৈষম্য নিরসনসহ নতুন পে-স্কেল সংশোধন করে গ্রেড অনুযায়ী বেতন স্কেলের পার্থক্য সমাহারে নির্ধারণ ও গ্রেড সংখ্যা কমানোর জোর দাবি জানান তিনি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চলতি সংসদের সমাপনী দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব রাখার প্রাক্কালে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীরা বৈষম্যের শিকার, তাদের বেতনবৈষম্য দূর করা দরকার। ৩ শ’ টাকা যাতায়াত ভাতা, ২ শ’ টাকা টিফিন ভাতা, ৫ শ’ টাকা শিক্ষাভাতা, ১৫ শ’ টাকা চিকিৎসাভাতা একেবারেই বেমানান। এসব ভাতা বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
একই বিষয় নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১১-২০তম গ্রেডের চাকরিজিবীদের বেতনবৈষম্য দূরীকরণে একটি কমিটি বা নতুন পে- কমিশন গঠনের অনুরোধ করে ১৪ লাখ কর্মচারীর হতাশা দূরীকরণের দাবি জানান।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) আব্দুল গাফফার নয়া দিগন্তকে বলেন, মাঠপ্রশাসনের কর্মচারীদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বৈষম্য নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আছে। তারাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২

সকল