২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইউজিসির ক্ষমতায়ন চায় বর্তমান কমিশন

ইউজিসির ক্ষমতায়ন চায় বর্তমান কমিশন - ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রায় সাত বছর বছর অতিক্রান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (এ রূপান্তরের লক্ষ্যে খসড়া আইন চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় ইউজিসির ইউজিসি) ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই কমিশন তার ক্ষমতায়ন চায়। বর্তমান কমিশনের নব-নিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনের সদস্যরা দায়িত্ব নেয়ার পর এ ব্যাপারে তাদের চাহিদার কথা বার বার বলেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ বা ‘ইউজিসি’ যে নামেই হোক প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতা না থাকলে একের পর এক পরিবর্তন করে তো কোনো লাভ হবে না। ইউজিসিকে কার্যকর করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দিতে হবে। তিনি বলেন, ইউজিসি ‘এখন দন্তহীন বাঘের মতো’। বার বার অভিযোগ করা হচ্ছে উচ্চশিক্ষার মান নেই, সনদ বাণিজ্য হচ্ছে’-- এটি রোধ করার জন্য ইউজিসি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা রাখে না। কোনো আদেশ বা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে মন্ত্রণালয় বা উচ্চ মহলের অনুমতি লাগে।

‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ আইনের খসড়ায় মোটা দাগে যে সব বিষয় রয়েছে তা হচ্ছেÑ ইউজিসির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আরো সম্প্রসারণে এবং প্রয়োগিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য ২৮-২৯ টি কার্যাবলী নির্ধারণও করে দেয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে নীতিমালা ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ক্ষমতা ইউজিসির হাতে ন্যস্ত করা। ইউজিসি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছেন, নীতিমালা-বিধিমালা প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ক্ষমতা যদি মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে তা হলে নতুন আইন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। ইউজিসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অ্যাডিটেশন কাউন্সিল গঠনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আইন হলেও আজো তা কার্যকর হচ্ছে না। তা হলে নতুন আইন দিয়ে কী লাভ হবে ?

ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব এবং আইনি সাপোর্ট না থাকায় ইউজিসির বর্তমান অচল কাঠামো দিয়ে ৪৫টির অধিক পাবলিক ও শতাধিক (১০৫) প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারকি সংস্থা ইউজিসির একাধিক কমিশনার নয়া দিগন্তকে বলেন। তারা বলেন, তদারকি কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এর জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী করেছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একাধিক সদস্য বলেন, প্রভাবশালীরা বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানার সাথে যে সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা রয়েছেন, তারাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। স্বাধীন ও কার্যকর ইউজিসি ছাড়া উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করা অসম্ভব হচ্ছে।

ইউজিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশে পাবলিক বা সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চশিক্ষা তদারকির জন্য। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সে ইউজিসিই আজো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। এরপর ৯২ সাল থেকে শুরু হয় প্রাইভেট বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রদান। দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ৪৭টি আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এক শ’ র কোট পার হয়েছে। বর্তমান সরকার তার দু’মেয়াদে এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। নতুন অনুমোদিত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সরকার সমর্থক মন্ত্রী-এমপি-প্রভাবশালী নেতা-সরকার সমর্থক জোটের নেতা-মন্ত্রীরা সম্পৃক্ত রয়েছেন।

এর বাইরে রয়েছে, ক্রস বর্ডার হায়ার এডুকেশনের (সিবিএইচই) আওতায় আরো প্রায় অর্ধশত সিবিএইচই প্রতিষ্ঠান দেশে উচ্চশিক্ষা প্রদান করছে। যদিও এদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে সর্বাধিক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নয়া দিগন্তকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অনুমোদনের আগে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’- আইনের খসড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, অর্থ বিভাগ, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে গত প্রায় আড়াই বছর ধরে। এ সময়ের মধ্যে তিন দফায় উক্ত আইনের খসড়া ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। সর্বশেষ মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ আবারো দু’টি পর্যবেক্ষণসহ আইনের প্রস্তাবনাটি ফেরত পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘উচ্চশিক্ষা কমিশনের জন্য পৃথক সচিবালয়, ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, পরামর্শক-উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে জনপ্রশাসন ও অর্থ বিভাগের মতামত এবং মঞ্জুরি কমিশনের কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসনের বেশ কিছু রুল ও ধারা এবং তৎপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগেরও মতামত গ্রহণপূর্বক তা সার-সংক্ষেপে উল্লেখ ও সংলাপ আকারে সন্নিবেশ করা আবশ্যক। ’

২০১২ সালে ৩ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন উৎকর্ষসাধন ও বিস্তৃৃতির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) রূপান্তর করে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দেন। এর আগে ইউজিসি শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ গঠনের লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন করে আইনি কাঠামো দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের মাত্র ছয়টি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রম দেখাশুনার জন্য ইউজিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইউজিসি ২০ বছর আগেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শুধুমাত্র বাজেট বরাদ্দ ও খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে একাডেমিক কার্যক্রম দেখ-ভাল করত।

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করলেও এর নানামুখী সীমাবদ্ধতা ও ক্ষমতাহীনতার বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও উচ্চশিক্ষায় চলমান নৈরাজ্য বন্ধে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব না থাকায় ‘দন্তহীন বাঘ’-এ পরিণত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সার-সংক্ষেপে ইউজিসির বর্তমান কাঠামোকে ‘অচল’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আর দেশের শিক্ষাবিদরা দীর্ঘ দিন থেকেই ইউজিসির ক্ষমতায়ন ও কার্য পরিধি বাড়ানোর দাবি করে আসছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল