২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

১টি বালিশ ৫৯৫৭ টাকা, ভবনে উঠাতে ৭৬০ টাকা; তদন্ত কমিটি

- ছবি : সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেনাকাটা নিয়ে অবশেষে গৃহায়ণ ও গণপুূর্ত টনক নড়েছে। এই প্রকল্পে কেনা-কাটায় যে হরিলুট চলছে তা গত কয়েকদিন থেকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করছিল। এখানকার সাধারণ কেনা-কাটায় এতো বেশি দুর্নীতি চলছিল যে কেনাকাটার তালিকাটির প্রতি কারো নজর পড়লেই সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছেন।

এই প্রকল্পে একটি বালিশ কিনতে লেগেছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর এই বালিশ ভবনের উপরে উঠতে বিল করা হয়েছে ৭৬০ টাকা প্রতিটি। একেকটি বিছানা কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা আর বিছানা উপরে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা।

এছাড়াও ওয়্যারড্রোব কেনা হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা দিয়ে এবং এগুলোকে উপরে উঠাতে প্রতিটির খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকা। একেকটি ফ্রিজার কেনা হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকায় এবং প্রতিটি ফ্রিজার উপরে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা।

এই প্রকল্পে একেকটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা এবং প্রতিটি টেলিভিশন উপরে উঠাতে বিল করা হয়েছে সাত হাজার ৬৩৮ টাকা। খাট কেনা হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকায় এবং প্রতিটি খাট উপরে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। একটি ইলেকট্রিক আয়রন (ইস্ত্রি) কেনা হয়েছে চার হাজার ১৫৪ টাকায় এবং এগুলো ভবনের উপরের তলায় তুলে দিতে প্রতিটির জন্য খরচ দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা।

বৈদ্যুতিক কেটলি কেনা হয়েছে প্রতিটি ৫ হাজার ৩১৩ টাকা এবং প্রতিটি উপরের তলায় তুলে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। বৈদ্যুতিক চুলা কেনা হয়েছে প্রতিটি ৭ হাজার ৭৪৭ টাকায় এবং উপরে তুলে দেয়ার খরচ দেখানো হয়েছে প্রতিটির জন্য ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। রুম ক্লিনার মেশিন কেনা হয়েছে ১২ হাজার ১৮ টাকায় প্রতিটি এবং একেকটি উপরে তুলে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতে প্রতিটির জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ৩৮ হাজার ২৭৪ টাকা এবং প্রতিটি ওভেন উপরে তুলে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপরে উল্লেখিত সামগ্রীগুলোর দাম ও এসব ভবনের উপরে তুলে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রোববার গৃহায়ণ ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপি দরপত্র আহবান করা হয়।

প্যাকেজসমূহের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এ ক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলণ প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদফতর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার পেমেন্ট (বিল) বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement