২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্মৃতির ছিটেফোঁটা

-

হাজারটা সন্ধ্যা পেরিয়েছে। হাজারটা স্নিগ্ধ ভোর, নীরব রজনীও পেরিয়েছে। পেরিয়েছে এক যুগেরও বেশি সময়। তবে প্রিয় জামিয়াটার প্রতি ভালোবাসা, প্রেম, মায়া-মমতা কমেনি কোনো অংশেই। ধুলোমলিন স্মৃতির পাতাটা এক মুঠো দমকা হওয়ার ঝাপটায় প্রায়ই ঝিকমিকিয়ে ওঠে। হৃদয় দর্পণে ভেসে ওঠে নানাবিধ স্মৃতিকথা। সে স্মৃতি মেখে আছে কিছু সুখানুভূতির গল্প, কিছু দুঃখ বিজড়িত অসময়, হাসিঠাট্টার উল্লাস ঘেরা কিছু মধুময় প্রহর, পড়ালেখার সরঞ্জামাদির অতলে হারিয়ে যাওয়ার কিছু আনন্দঘন দিবারাত্রি নিয়ে। মনে পড়ে হুজুরদের পিতৃসুলভ আচরণের কথা। তাদের নির্ভেজাল ও নিরেট ভালোবাসার বিমুগ্ধ ছোঁয়াটাও যেন, একটু ভিন্নভাবেই মনে ভাসে। হা হা কার করে ওঠে হৃদয়ের ভেতরটা। প্রচণ্ড অভাব অনুভূত হয় তাদের অতিশয় মূল্যবান সে সাহচর্যের।
বয়সে তখন আমরা অনেক ছোট্ট। জ্ঞান-বুদ্ধিও তেমন পরিপক্ব হয়নি। যেদিন ভোরের ঘুমগুলো ভাঙত আম্মুর ডাকে, আব্বুর ডাকে। কোনো দিন তো অনেকটা বেলা হওয়ার পরেও ভাঙত সুখ নিদ্রা। যখন সূর্যটা আলোর ফোয়ারা নিয়ে পুব আকাশে দাঁড়ায় ঠিক তখন। সেদিনগুলোতে আম্মু ভাত খাইয়ে না দিলে পেটই ভরত না। কখনো তো ভাত বেড়ে দেয়নি বিধায় ঢং করে গাল ফুলিয়ে থাকতাম দীর্ঘক্ষণ। একটা সকাল, একটা দুপুর আর বিনিদ্র রজনীও পেরিয়েছি তার প্রভাবে।
সেদিন মায়ের পরশ না পেলে রাতের ঘুম না হলে দুপুরের গোসল, অবারিত মাঠ না হলে খেলার অবসর সময়গুলো, বাবার পকেটের দু-পাঁচ টাকা না হলে সারাটা দিন; এসবের কিছুই কাটত না। তৃপ্ত হতো না অবুঝ আত্মাটা।
জীবনের ঠিক এমন একটা সময়ে বাড়ি, মাঠ, ছোট্ট খেলার সাথী, বাবা-মা, মায়ার টান সবি ছিন্ন করে ছুটে এসেছিলাম নবাবী ইলমের এই উদ্যানে। অবুঝ মনের উচ্ছ্বাস আর আনন্দঘন সব উল্লাস পথ রোধ করতে পারিনি আমার। মা-বাবা, বাড়ি, মাঠ, ছোট ছোট বন্ধু, কাঁঠাল গাছের পাখিটা, বুক বিছিয়ে ছড়িয়ে থাকা খেলার মাঠ সবগুলোকে জীবন থেকে বিচ্ছেদ করে এসেছিলাম মাদরাসায়। একাকী এই জীবন কাটানোটা কতটা যে বেদনাদায়ক ছিল, তা ব্যক্ত করা অসম্ভব। বেডিং বিছিয়ে মাথাটা বালিশে রাখলেই মনে পড়ত আব্বুর আদর, প্রেমময় হাসি, আম্মুর নিঃস্বার্থ ভালোবাসাগুলোকে। মনে পড়ত ভাই-বোনদের সাথে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠার মধুমাখা সময়গুলোকে। বুকের মধ্যখানটা হু হু করে উঠত। অশ্রুরা দল বেঁধে নেমে আসত চোখের কোণ বেয়ে। ঠিক এমন হাজারটা কান্নাভেজা প্রহর, হাজার রকমের বেদনা, অগনণ বিচ্ছেদ বিরহ বক্ষে নিয়েই প্রায় একযুগ সময় কাটিয়েছি। এই জামিয়াতেই। অবুঝ সময়টা পেরিয়ে শৈশব তরুণ ছাপিয়ে একসময় পদার্পণ করলাম যুবক নামের অধ্যায়ে। ধীরে ধীরে জামিয়াকে ঘিরে জন্ম নিল অদৃশ্য ও অনুপম ভালোবাসা। ছোট্ট সময়ে আসতে না চাওয়া এই মাদরাসা থেকে তখন বেরাতে মন চায় না। জামিয়া তার সুশীতল কোলে আগলে নিল আমায়। ভালোবাসার ডোরে বেঁধে ফেলল আমার সর্বাঙ্গ। সহপাঠীদের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন আর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্বের বাঁধন ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠল। দিন দিন সময়গুলো হয়ে উঠল দারুন সুখপ্রদ। মাদাসাটাই হয়ে উঠল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। কিন্তু জীবনের সুখী সময়গুলো সম্ভবত খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। আমারও ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। তারপর আর বেশি দিন থাকা হয়নি এ জামিয়ার কোলে। জীবনের প্রয়োজনে বিদায় নিতে হয়েছে। বন্ধুদের চোখে অশ্রু নামিয়ে। জামিয়ার মায়াভরা কোল থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে একসময় আমাদের সাথীরা সবাই চলে গিয়েছে। অন্য কোনো উদ্যানে কিংবা ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে। বন্ধু-বান্ধব বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে দেশের নানা প্রান্তে। আর তার পরেই পেরিয়েছে প্রায় আরো একটি যুগ।


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান

সকল