১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে কথা হয়নি বলা

যে কথা হয়নি বলা -

আদিহা কিছু বলার আগেই বাবা-মা বলল, আমরা যা বুঝি তুমি তার থেকে বেশি বুঝতে চেষ্টা করো না।
তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আসো। ছেলেপক্ষ অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক নয়। মাত্র কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে আদিহা। অন্য আট-দশটি মেয়ের থেকে ভিন্ন স্বভাবের মেয়ে আদিহা। স্কুলে এ কারণে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতেন স্যার-ম্যামরা। বন্ধুরাও সবাই ভালোবাসত। পড়ালেখায় বরাবরের মতো ভালো ছাত্রী। পাঁচপীর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় একমাত্র এ প্লাস পেয়েছে আদিহা। বাবা-মায়ের কথার বাইরে কখনো চলার চেষ্টা করেনি।
আকাশজুড়ে হাজার তাঁরার ভিড়ে চাঁদ যেমন অপরূপা। এক পলক তাকিয়ে তাঁরাদের থেকে আলাদা করা যায় চাঁদকে। ঠিক শত মেয়ের ভিড়েও এক পলক দেখে আলাদা করা যাবে আদিহাকে।
কলেজে যাওয়া-আসার পথে রোজ কত ছেলে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা গান কবিতায় কত শতভাবেই না ছেলেরা প্রকাশ করে তার উপমা। জীবনে অনেক ছেলে প্রেমের অফার করেছে তবে আদিহা কখনো ওই পথে পা বাড়ায়নি। বাবা-মা আর এই সমাজব্যবস্থার কথা ভেবে সবসময় নিজেকে সামলে নিয়েছে।
নিজের ইচ্ছে না থাকলেও বাবা-মায়ের কথামতো আলমারি থেকে নতুন জামাকাপড় বের করে। গোসল করে পবিত্র হয়ে আসে। বেগুনি রঙের শাড়িতে বেশ মানিয়েছে আদিহাকে। নিজিকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে এক পলক দেখে লজ্জায় মাথা নত করে। মনে মনে কত কিছু পরিকল্পনা করেছিল আদিহা। বিয়ের তিন দিন আগে থেকে বন্ধুবান্ধব সবাই আসবে। ঝিলিমিলি বাতি জ্বলবে বিয়ে বাড়িজুড়ে। কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করবে সবাইকে। অথচ এসবের কিছুই হলো না।
মায়ের ডাক শুনে ধীর পায়ে এগিয়ে চলে। কাজী অনেক আগে এসেছে। দেখতে দেখতে বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। বর দিহান অবশ্য আদিহার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। একটি প্রাইভেট কোম্পানির বড় কর্মকর্তা।
দুই.
হুট করে ছয় মাস আগে বিয়ে হলেও আজ বউভাত অনুষ্ঠান। দুই পক্ষের লোক এসেছে। বাড়িজুড়ে আনন্দের ছোঁয়া। দিহান এর আগে কোনোদিন আদিহাকে নিয়ে মার্কেট করতে যায়নি। কথা দিয়েছে বউভাত অনুষ্ঠানের দিন একসাথে মার্কেট করবে। কিনে দেবে আদিহার পছন্দের সব জিনিসপত্র। পশ্চিমের আকাশে একটু একটু করে বিলীন হচ্ছে ক্লান্ত সূর্য। সারি সারি উড়ে চলছে সাদা বকের ঝাঁক দূর থেকে আরো দূরে। শরতের শেষ বিকেলে হুট খোলা রিকশায় বসে এসব দেখে ভালো লাগছে দু’জনের কাছে। আকাশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সাদা সাদা মেঘের ভেলা জানিয়ে দিচ্ছে কাশবনে যৌবন না এলেও ঋতু রানী শরৎ এসেছে। একসময় রিকশা এসে দাঁড়ায় কুড়িগ্রাম সুপার মার্কেটে। ভাড়া মিটিয়ে পাশ ঘুরে তাকাতেই সারি সারি পাকা কলার দোকান দেখে লোভ সামলাতে পারল না আদিহা। দিহানের কাছে বায়না ধরে কিনে নিলো কয়েক হালি। পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে চলে। শেষ বিকেলে কুড়িগ্রাম সুপার মার্কেটের এই রাস্তায় অনেক ভিড় লেগেই থাকে প্রতিদিন। আজো তার ব্যতিক্রম হলো না। আদিহা একটি কলা ছুলে খাওয়া শেষে বাকলটি রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। দিহান সেদিকে খেয়াল করেনি।
হঠাৎ সাঁই সাঁই শব্দে এগিয়ে আসে একটি দ্রুতগামী বাস। আদিহার ফেলে দেয়া কলার বাকলে পা পিছলে পড়ে যায় দিহান। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাস্তা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে দিহানের ছিন্নভিন্ন নিথর দেহ। আদিহা শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে কান্না করে চলছে দিহানের ছিন্নভিন্ন শরীর জড়িয়ে ধরে। আদিহার মায়ের চোখের সামনে ভেসে উঠে ২৮ বছর আগের স্মৃতি।
বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবে না কিছুতেই। তাই চালাকি করে ছেলের কাছে বায়না ধরে ওদের বিয়ের কেনাকাটা ওরা দুইজন মিলে করবে। সে দিন আদিহার মা রাস্তা পারাপারের সময় সবার আড়ালে হঠাৎ ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় চলন্ত বাসগাড়ির নিচে। কেউ না জানলেও আদিহার মা জানে সে দিনের সেই সাজানো নাটক।


আরো সংবাদ



premium cement