২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাতঘড়ি

হাতঘড়ি -

রাশেদের আম্মু তন্ন তন্ন করে শোকেসের সব জাগায় খোঁজ করার পরেও কোথাও পেল না রাশেদের হাতঘড়িটি। রাশেদের রুমেও নেই। তবে ঘড়িটি গেল কোথায়? এমন তো না, ঘড়ির পা আছে ইচ্ছে হলে অন্য কোথাও চলে যাবে। কিন্তু ঘড়িটি কে নিয়ে গেল? আজ তিন দিন ধরে রাশেদ কান্না করে চলছে। কোনো কিছুতে কান্না থামছে না। তার কথা একটাই আমার ঘড়ি এনে দাও। ঘড়ি ছাড়া আমি খাবার খাবো না। কারো কথা শুনব না। স্কুলের পড়া লেখাও করব না। রাশেদের আম্মু একটু আগে রুমে এসেছে খাবার হাতে। রাগে গদগদ করতে করতে রাশেদ বলল। তোমাদের ভাত আমি খাবো না। আমার ঘড়ি এনে দাও। এ কথা বলে হাত-পা ছুড়ে কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলো। রফিক সাহেব, রাশেদের বাবা। ছেলের জন্য শহর থেকে তিন তিনটে নতুন ঘড়ি কিনে আনল। নাছোড় বান্দা রাশেদ, জানালা দিয়ে সে সব ঘড়ি ছুড়ে মারল। তার একটাই কথা আমি আমার পুরনো ঘড়িটাই চাই।
রাশেদের বাবা-মা ছেলের এমনটা দেখে ভাবনায় পড়ল। রাশেদের হাত ঘড়িটি ওর দাদু বেঁচে থাকতে উপহার দিয়েছিল। রাশেদ যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ক্লাসে ফার্স্টবয় হয়েছিল বলে। সে দিনের পর থেকে হাতঘড়িটি সব সময় রাশেদ নিজের হাতে পরে থাকত। কখনোই হাত ছাড়া করত না। রাশেদ ওর দাদুকে ভীষণ ভালোবাসত। আজ থেকে তিন বছর আগে যখন ওর দাদু মারা যায়। তখন রাশেদ খুব কষ্ট পেয়েছিল। দাদুকে ছাড়া রাশেদ এক মুহূর্ত ভাবতে পারে না। খেতে বসলে, রাতে ঘুমাতে গেলে, দাদুর কথা বড্ড বেশি মনে পড়ে। রাশেদের সবটা জুড়ে সামিয়ানা টানিয়ে ছিল তার দাদু। ওর দাদু মারা যাবার কয়েক দিন পরে, একদিন রাতে স্বপ্নে চুপিচুপি ওর কাছে এসেছিল। অনেক সময় গল্প করেছিল। চলে যাবার আগে রাশেদকে বলেছিল আমাকে যখন তোমার খুব মনে পড়বে। তখন আমার দেয়া হাতঘড়িটি দেখিও। আমাকে খুঁজে পাবে। যখন তোমার মন খারাপ থাকবে, একাকি মনে হবে ঘড়িটি হাতে পরিও। সে দিনের পর থেকে ওই হাতঘড়িটি রাশেদের প্রিয় বন্ধু। দাদুর ছায়া যে মিশে আছে এই ঘড়িতে।
রাশেদের মন আজ খুব খারাপ। আজ প্রায় ছয় দিন হতে চলল। ওর ঘড়িটি কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। আনমনে জানালার বাইরে তাকিয়ে কী যেন খুঁজে ফিরছিল! হঠাৎ একটি বিড়ালের পায়ে দাদুর দেয়া হাতঘড়িটি দেখে। চিৎকার করে দৌড়ে রুম থেকে বাইরে চলে আসে। বিড়ালটির কাছে যায়। বিড়ালটিও যেন ওর মালিককে খুঁজে পেল। লেজ নাড়িয়ে ম্যাও ম্যাও শব্দ করে রাশেদের বুকের কাছে লুকায়। ঘড়িটি খুঁজে পেয়ে রাশেদের মন আবার আনন্দে ভরে উঠল। ওর মনে হলো ওর দাদুকেই খুঁজে পেল ও।

 


আরো সংবাদ



premium cement