১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৃষ্টি-দুঃখ

বৃষ্টি-দুঃখ -


দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গ্রামের কৃষকরা বিপর্যস্ত। বৃষ্টি নেই, খাল-বিল-পুকুরও শুকিয়ে গেছে। আবার বন্যায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কৃষকরা আরো বিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেতে করা বীজ বপনও শুকিয়ে যেতে থাকে। এখন খরার আশঙ্কায় কৃষকরা।
আব্বাস খুব হতাশ ভঙ্গিতে স্ত্রী সফুরাকে বললেন, অর্ধেক শ্রাবণ পেরিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি হতো, কিন্তু এবার আল্লøাহ আমাদের ওপর রেগে গেলেন। তাই শুধু গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আল্লাহ, এবার আমাদের কী হবে?
সফুরা সান্ত¡না দিয়ে বললেন, তুমি ধৈর্য ধরো, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। এটিও পরীক্ষা, আল্লাহর পরীক্ষা নেয়ার সময় ভেঙে পড়তে নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। ডাল-ভাত তৈরি, হাত-মুখ ধুয়ে নাও। সাদিয়া... আসো, খাবার দিয়েছি, বাসিত! এসো, খেয়ে নাও, তারপর পড়াশোনা চালিয়ে যাও।
সফুরা শাশুড়ি, মেয়ে ও ছেলেকেও খাবারের জন্য ডাকলেন।
আজ খুব দেরি হয়ে গেছে। বউমা, দাও বিছানার ওপর আমার খাবারটা রেখে দাও, আমি নিচে বসব না।
জি আম্মা! সাদিয়া নিচে নেমে নিয়ে যাও, দাদীকে খাবার প্লেট দাও। এখন থেকে কাজে অভ্যস্ত হয়ে যাও, শ্বশুরবাড়িতে তোমার শাশুড়ির কটূূক্তি শুনবে না।
মা! আমি কখনোই বিয়ে করব না। বাবা, আমি সবসময় এখানে থাকব।
অলস হয়েছে, মেয়েটা কী?
বুড়ি দাদীর গাঁটছড়া বেঁধে।
মা ও দাদীর এ কথা শুনে সাদিয়া মুখ বিকৃত করতে করতে খাবার পরিবেশন করতে লাগল।
মা, হেডমাস্টার বলছিলেন শাওনে বৃষ্টি না হলে দুর্ভিক্ষ হবে। এ কিসের দুর্ভিক্ষ?
সাত বছরের বশির তার মাকে খুব নির্বোধ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল।
বাবা রে এসব নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, তুমি পড়াশোনায় মন দিয়েছ। আমি আর তোমার বাবা সব সামলে নেবো।
বশিরের এ কথাগুলো আব্বাসকে আরো দুশ্চিন্তায় ঠেলে দিলো, সে কষ্ট করে খাবার খেতে লাগল।
কী হয়েছে? তুমি আজ ঠিকমতো খাচ্ছ না।
আমি কী বলব, সফুরা? আমি ভেবেছিলাম এবার ভালো ফসল হলে আমার মেয়ের হাত হলুদ করে দেবো। আমাদের মেয়ে, চৌদ্দ বছর বয়সী, কিছুই জানে না।
হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছ। আম্মার হাঁটুর চিকিৎসাও করতে হবে। বেচারি মাঝে মধ্যে ব্যথায় কাঁদে।
এবার কী হবে কে জানে, মাঠে সবুজ ফসল আসতে পারবে কি না!
আল্লাহ সবার মঙ্গল করবেন, আমি নফল রোজা রেখে দোয়া করছি।
ও আল্লøাহ; আমাদের দেখো।
আব্বাস একজন মধ্যবিত্ত কৃষক। তার খুব বেশি জমিজমা নেই। মাত্র এক একর জমি বাবা তার জন্য রেখে গেছেন। সব কৃষক আশাবাদী এবার বর্ষার শুরু থেকেই ভালো বৃষ্টি হবে। যার জন্য তিনি সার, বীজ ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন। ক্ষেত চাষ ও বপন করেছেন, কিন্তু জুলাই মাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত অর্ধেকও বৃষ্টি হয়নি। ভেসে গেছে কৃষকের বীজ বপন। কৃষকরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত হলেও বৃষ্টি হচ্ছে না। এ সময় বনজ প্রভৃতি জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষেতের বপনও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে, তাই কৃষকদের বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল বপনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ইদানীং আব্বাসের গ্রামে এক কৃষক মাঠে জায়নামাজ বিছিয়েছেন। মানুষ এখন বৃষ্টির জন্য নামাজের আশ্রয় নিচ্ছে। এভাবে মাস পেরিয়ে গেছে, এখন অমাবস্যার সবুজে ছড়িয়ে পড়েছে। অমাবস্যার দিনে হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে গেল জায়গাটা এবং ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হলো। আব্বাস মনে মনে আল্লøাহর কাছে অনুনয় বিনয় করতে লাগল, হে আল্লাহ! পৃথিবী আজ মায়ার তৃষ্ণা নিবারণ করুক।
শাশুড়ি কিচিরমিচির করে সফুরার কাছে এলেন। বললেন, বউমা, দেখো বৃষ্টি এসেছে। আব্বাসকে বলো বীজ জমিতে লাগাতে আর শুকরিয়া আদায়ের জন্য সদকা করতে।
দেখুন আম্মা, আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।
হ্যাঁ বউমা! তুমি ঠিকই বলেছ।
বশির ছোট শিশুর মতো কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, বাবা, আমিও যাব।
না, তুমি ভিজে যাবে। ঘরেই থাকো, তোমার পড়াশোনা মনে আছে? আমি শিগগিরই চারা পুঁতে আসব, তোমার জন্য দোকান থেকে কিছু আনব।
সফুরা বলল, এই টাকা কয়টা নিন। ভিক্ষুক যাকে দেখবেন তাকে সদকা করে আসবেন।
ঠিক আছে। মাকে খেয়াল রেখো। আর আজ পাটিসাপটা পিঠা বানাও, সবাই মিলে খাবো।
আব্বাস বশিরকে সাথে নিয়ে মাঠের দিকে রওনা হলেন। হালকা ঝিকিমিকি বৃষ্টি যা ছিল, তা এখন প্রচণ্ড রূপ ধারণ করছে, মেঘগুলো প্রবল বেগে গর্জন করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement