২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভাবনার প্রান্তরে

-


আমি ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরের বেঞ্চগুলোর একটাও ফাঁকা নেই। সব বেঞ্চ যেন পঙ্গু মানুষগুলোকে আরো পঙ্গু বানিয়ে ছাড়ছে। তা নয় তো কী! সারা দিন অফিসে, ব্যাংকে, দোকানে বসে থাকা ব্যক্তিটিও ট্রেনে ওঠে দু’জনের মাঝে আরেকটা কৃত্রিম আসন বানানোর চেষ্টা করে। ‘একটু চেপে বসলেই তো আরেকজন বসতে পারে’ সহমর্মিতার বাণী। দুই বেঞ্চের মাঝের ফাঁকা জায়গাটাও এক গাদা লোকে ঠাসা। এর মধ্যেও টিটি এসে বাড়তি পয়সা গোনার ধান্ধা।
কাঁধে ব্যাগ আর হাতে টিফিন বক্স নিয়ে দরজার পিঠে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি। সামনের স্টেশন থেকে আরো দু’জন ওঠে ঘামা শরীরে আমার পাশ ঘেঁষেই দাঁড়াল। আমি বারকয়েক চোখ ঘুরিয়ে দু’জনের মুখখানা দেখে নিলাম। দু’জনের মুখেই খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বয়স চব্বিশ থেকে সাতাইশের মাঝামাঝি। একজনের হাতে কালো বেসলেট আরেকজনের হাতে ‘টাইম জোন’ এর কালো বেল্টের ঘড়ি। আমি শুধু তাদের দু’জনকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছি।
এরই মধ্যে একজনের হাত চলে গেল বিশ্রী স্টাইলের হাঁটু কাটা প্যান্টের পকেটে। বেরিয়ে এলো বেনসন সিগারেটের একটি নতুন প্যাকেট। প্যাকেট এখনো খোলা হয়নি। দুটো সিগারেট বের করতেই হাত ফসকে একটি পড়ে গেল নিচে। জুতা ঠেলে সিগারেটটা ট্রেনের বাইরে ফেলে দিলো। যেখানে ফেলেছে কেউ পেলে হয়তো মুখে তুলে নিয়ে একটা টান দেবে! বোঝাই যাচ্ছে দু’জনই বড়লোকের দুলাল! এত দামের বেনসন সিগারেট কেউ এভাবে পায়ে ঠেলে!
এতক্ষণ পর্যন্ত ভালোই ছিল। কিন্তু সিগারেটটা কালো ঠোঁটে লাগিয়ে ধোঁয়াটা ছেড়ে দিলো বাতাসে। মনে হয় যেন বাতাসটা ওরা কিনে নিয়েছে। আমার কাছে পৃথিবীর জঘন্যতম গন্ধ হচ্ছে সিগারেটের গন্ধ।
পাশের সিটের এক ভদ্রলোক মাথা উঁচিয়ে একবার এদিকে তাকাল। একনজর দেখে আবার বসে পড়ল। কারণ, ধোঁয়াটা জানালা দিয়ে তার নাকেই আগে হানা দিচ্ছে। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ এটা কি কারো অজানা!
ট্রেন এসে থামল জংশনে। যাত্রীরা ওঠানামা করছে। আমি দরজা ছেড়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে দাঁড়ালাম। লোহার খুঁটিতে লালবাতির সিগন্যাল। ওদিক থেকে ট্রেন আসছে। তার মানে ট্রেনটা কিছুক্ষণ দাঁড়াবে এখানে। যাই গিয়ে একটু চা-স্টলে বসি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমরটা ধরে গেছে। ইদানীং ট্রেন বেড়ে গেছে।
ট্রেন আসার ৫ মিনিট বাকি। এলেই আমাদের ট্রেনটা ছেড়ে দেবে। ওইদিকে মেঘ ডাকতে শুরু করেছে। ধান কাটার মৌসুম চলছে। বাড়িতে রোদে ধান শুকাতে দিয়েছে। আমাকে গিয়ে ধান মাচায় তুলতে হবে। যদি বৃষ্টি এসে পড়ে, কী কাণ্ডটাই না ঘটবে।
করিম চাচা কি একলা সামাল দিতে পারবে? পারবে মনে হয়, না পারার কী আছে। তার দেহে অনেক শক্তি। চারজনের খাবার একাই খেতে পারে। গত মৌসুমে এক শ’ কেজি ওজনের বস্তা একাই টেনেছিল।
একবার বলি আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, আবার বলি আটকে থাক আকাশে, পড়িস না জমিনে। কারণ, আমার আত্মতৃপ্তি অনেকের সর্বনাশ বয়ে আনবে!
ফ্ল্যাগ মাস্টার সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিলো। লম্বা হুঁইসেল বাজিয়ে ট্রেন আবার ছুটে চলল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ

সকল