২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চাঁদের ঐশ্বর্য

চাঁদের ঐশ্বর্য -

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের কমবেশি সবারই ভালোলাগা রয়েছে। কারণ একাকী নির্জনতায় এই প্রকৃতিই আমাদের প্রিয় সঙ্গী। আর তাই রাতের ওই আকাশ জ্যোৎস্নার মিষ্টি আলোয় ঝলমলে ও নিকষ কালোয় ঢাকা থাকে এটাই হয়তো আমরা জেনেছি। যে জ্যোৎস্নার আলো নিয়ে তৈরি হয়েছে কত শত গল্প-কাহিনী, কবিতা-সাহিত্য ও প্রেম-ভালোবাসার রচনা। যা আমরা শুনেছি ও কোথাও বা পড়েছি। আবার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় জ্যোৎস্নার দিকে বহুবার তাকিয়েছি। চাঁদনি রাতের ঝলমলে আলোয় কখনোবা পথ চলেছি। কিন্তু কখনো হয়তো এই অপূর্ব মন মাতানো জ্যোৎস্নার রূপটা গভীরভাবে অনেকের দেখা হয়নি। শুধু রাতের আকাশকে নিছক অন্ধকার ও রাত্রিবেলা বলেই হয়তো ভেবেছি। আর শীতকালের রাতের জ্যোৎস্না? সে তো কুয়াশাচ্ছন্ন ঝাপসা আলোয় অমাবস্যার চাঁদ দেখার মতো ভাবি। সেই কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে আবার চাঁদ দেখা যায় নাকি? যে জ্যোৎস্না দেখা যাবে...! আর রাত মানেই তো চারদিকে নেমে আসা শুধুই নীরব-নিস্তব্ধতা। যদি সেটা হয় শীতের রাত তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু সেই সময়েও যে রাতের পৃথিবীতে সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় সমারোহ ঘটতে পারে তা আমি উপভোগ করেছি। কারণ চাঁদের মিষ্টি আলো আমার খুব পছন্দ। এই তো এবার শীতের এক রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। আরামের বিছানাটাকে অসহ্যই লাগছিল। তখন বিছানা ছেড়ে কামরার সামনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আর চারপাশের নীরব নিস্তব্ধতায় আকাশের চন্দ্রালোকিত রাতের শোভা দেখছিলাম মুগ্ধ নয়নে। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে ইটপাথরের এই শহরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন মাদকতা আর কিছুতে কখনো অনুভব করিনি। যদিও আকাশ আমার খুব প্রিয় কিন্তু কখনো রাতের কালো আকাশের মতো আর কিছু দেখা হয়নি। রাতের আকাশে ভেসে বেড়ানো ওই মেঘেদের ছুটোছুটি। ঝলমল করা হাজারো তারার মেলা যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়, তা সাধারণত তারার আলোর ভিড়ে কখনো হয়তো সবার জ্যোৎস্নার ওই মোহনীয় রূপটাকে দেখা হয় না। কিন্তু আমি জ্যোৎস্নার সেই মায়াবী রূপ-মাধুরী নিজ চোখে অবলোকন করেছি, বহুবার সেই সৌভাগ্য হয়েছে। কেননা, রূপময় জ্যোৎস্না রাত এক অপরূপ রাত। যেন এক স্বপ্নের রঙিন রাত।
তাই তো ১৪ তারিখের তারাবিহ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হতেই পূর্ণিমার চাঁদের সৌন্দর্যে চোখ আটকে গেল। আর চোখ যেন সরতেই চাচ্ছে না। মাঠ থেকে চাঁদের দিকে একটু একটু তাকিয়েই উপরে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চাঁদের সাথে একাকী কত শত কথা বলছিলাম! তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তখনকার মুহূর্তটা হালকা শীতল বাতাস যেন আরো প্রশান্তিময় করেছিল। এভাবে এক-দেড় ঘণ্টা চলে গেল টেরই পেলাম না। যতই দেখছিলাম ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আর প্রতিবার চাঁদের দিকে তাকাতেই চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় আমি অভিভূত হচ্ছিলাম। চারপাশের আলো কম থাকায় চাঁদের এমন আলোকে মনে হচ্ছিল স্বচ্ছ রূপালি ঝর্ণার মতো, যেন চাঁদের আলো চারপাশ ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে কোনো এক দূর অজানায়।
আকাশের মেঘগুলো পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ছুটে বেড়াচ্ছিল নিরবধি। আর মেঘ ভেলার চাদর ভেদ করে মিষ্টি আলোর বন্যা ছড়াচ্ছিল রূপময় ওই চাঁদ। চাঁদ যতই উপরে উঠছিল ততই বাড়ছিল তার উজ্জ্বলতা। বাড়ছিল সেই মায়াবী রাতের অপরূপ সৌন্দর্যও। কিন্তু চাঁদের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্যের সাথে সাথে ঘুমের তীব্রতাও বাড়ছিল। তবুও এমন মায়াবী একখানা চাঁদ রেখে কি কামরায় আসতে মন চায়? চায় না। কেননা, বারান্দার ওই ছাদের মতো খোলা জায়গায় আকাশের নিচে জ্যোৎস্নার সৌন্দর্যের যে এমন সমারোহ ঘটতে পারে তা আমার মতো কখনো আর কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি। হয়তো আগে কখনো রাতের বেলায় ইটপাথরের এই শহরের ভবনের বারান্দার খোলা জায়গা বা ছাদে এমন অনুভূতি নিয়ে কেউ হাঁটেনি, অবস্থান করেনি। তাই এমন অপূর্ব অনুভূতি হয়তো কারো মনে আগে কখনো জাগেনি। রাত গভীর হওয়ায় বাইরের চারদিকটা বেশ নীরব, নিস্তব্ধ আর নিঝুম ছিল। সব পাখপাখালি তাদের নীড়ে ঘুমাচ্ছে। মাঝে মধ্যের হালকা শীতল হাওয়া বয়ে যাওয়া শরীর মন যেন জুড়িয়ে দিচ্ছিল। তখন খুব করে মনে হচ্ছিল আমার সাথে বুঝি জেগে আছে ওই বিশাল আকাশের উজ্জ্বল চাঁদটি আর তার সাথিরাও। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় সব কিছুকে কেমন যেন মায়াবী দেখাচ্ছিল। এত অপরূপ, এত মায়াবী, এত সুন্দর জ্যোৎস্না দেখে ইচ্ছে করছিল এখানেই সারারাত কাটিয়ে দিই। এখানেই এই অপরূপ সৌন্দর্যের সবটুকু সময় অবলোকন করি। আজো অনুধাবন করতে পারলাম যুগে যুগে কবি সাহিত্যকরা কেন জ্যোৎস্নার প্রতি এত আবেগপূর্ণ ছিলেন। কেন তারা তাদের কবিতা, উপন্যাস ও রচনায় বারবার জ্যোৎস্না রাতের বর্ণনা দিয়েছেন। কেন তারা তার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেয়েছেন।
আজকে আমিও তো আবার তার রূপ সৌন্দর্যে অভিভূত, মুগ্ধ হলাম। এক কথায়, সম্পূর্ণ পরিবেশটা আমাকে অনেক আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল। কারণ, জোনাকি পোকার আলো প্রকৃতির সৌন্দর্যকে যেন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর এদিকে অনেক সময় কেটে গিয়েছিল। শেষ রাতেও সাহরি খেতে হবে। মন চাচ্ছিল না বারান্দার ছাদের মতো ওই খোলা জায়গা থেকে কামরায় চলে আসতে। তবুও কামরায় চলে এলাম। আর মনে মনে ইচ্ছে করলাম ও অপেক্ষায় রইলাম আজকের মতো আবার জ্যোৎস্না রাত দেখার ও উপভোগ করার।
অতএব, রাতের উজ্জ্বল আলোময় মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়া ওই ঝাপসা আবৃত চাঁদ, চারপাশে যারই প্রভাবে অপূর্ব সৌন্দর্যময় পৃথিবী এবং মনমাতানো ফুলের সুরভির সাথে জোনাকি পোকার খেলা হৃদয়-মনকে আপ্লুত করে তোলা। যেই অপূর্ব দৃশ্যের কারণে কবি ও শিল্পীদের কবিতা, গান লেখা ও আরো কত...। আল্লøাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন আলোময় ঝলমলে জ্যোৎস্না রাতকে দেখার, উপভোগ করার ও অভিভূত হওয়ার তাওফিক দান করেছেন, আলহামদুলিল্লøাহ।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল