বাবা শুধু বাবার মতোই
- হুসাইন আহমদ
- ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
ছোট্ট একটি শব্দ বাবা। বাবা মানে আদর, বাবা মানে আবদার, বাবা মানে শাসন, বাবা মানেই নীরব ভালোবাসা। আমরা বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখি না। বাবা মানুষটি নিজের প্রতি বড্ড কৃপণ হন, নিজের প্রতি খুবই হিসেবি হন। পরিবার আর সন্তানদের জন্য তার ভাণ্ডারের সব দিতেও তিনি কার্পণ্য করেন না। কম পয়সায় কোন জিনিসটা পাওয়া যায় আর তা নিজের জন্য নিয়ে আসাটা মনে হয় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত। আবার যেখানে সামান্য জ্বর সর্দিতে আপনি, আমি কাবু। সেখানে শরীরের অস্বাভাবিক জ্বর ও অসুস্থতা নিয়েও তিনি নিজের মতো করেই সুস্থতার ভান করে চলেন প্রতিটি ক্ষণ। বিছানায় শুয়েও সন্তানদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে চিন্তায় যিনি বিভোর। হাজারো দুঃখ-ব্যথায়ও তার চোখে পানি আসে না সহজে। তিনি যেন কঠিন কোনো এক পদার্থে তৈরি। তাই তো সন্তানের সুখে-দুঃখে বাবার স্থানই সবচেয়ে বেশি উপরে।
বাবার সংজ্ঞাটা অনেকে অনেক ভাবেই করতে পারেন। বাবার সংজ্ঞাটা এভাবেও বলা যায় , বাবা হলেন নীরব বয়ে চলা নদী। কখনো জোয়ার, কখনো ভাটার মাঝে দিন কাটে তার। নীরবে বহমান তার জীবনের প্রতিটি ধাপ। যিনি জীবনের সমস্ত উপার্জন দিয়ে বাড়িঘর গড়ে তোলেন ঠিকই। কিন্তু বাড়িঘরে থাকার সবচেয়ে কম সময় যিনি পান তিনি হলেন বাবা। বাবার বাড়িঘরে দীর্ঘসময় রাজত্ব করি আমরা। অথচ, যিনি বানালেন তিনি হয়তো বাড়িঘরের সেই সুখের সময়গুলোতে পাশে থাকেন না। থাকেন আলোকবর্ষ দূরে। নিজের সবটুকু দিয়ে যিনি সন্তানদের আগলে রাখেন তিনি হলেন বাবা।
এ কথা চিরসত্য যে, পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বেশি ধৈর্যশীল কেউ থাকেন তিনি হলেন বাবা। বাবা হলেন একজন নির্ভীক নাবিকের মতো। যে নাবিক শত ঝড়, তুফানের মাঝেও জাহাজ বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। বাবাও তেমন সব বাধা-বিপত্তি থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে জীবনের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে যান। তিনিই বাবা যিনি সন্তানের আনন্দের খবরে না হেসে, গম্ভীর গলায় বলেন, আরো ভালো কিছু হতে হবে। পরক্ষণেই আড়ালে গিয়ে সন্তানের সাফল্যে নীরবে চোখের অশ্রু ঝরান। বাবাকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমি রাখি না। তবে কিছুটা অনুভব করি বাবা বড্ড একঘেয়ে একটা মানুষ। জীবনের সুখের সময়টা সবার সাথে ভাগ করে নিলেও দুঃখের সময়ের ভাগটা কাউকে দিতে অনিচ্ছুক এই মানুষটি।
আর বাবার স্বপ্নকে পূরণ করতে সন্তানদের যে অবহেলা বর্তমান ও অতীত সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে, হয়। তা সত্যিই দুঃখজনক। সেই ছোট্টবেলায় যখন হাঁটতে গিয়ে আছাড় খেয়ে ব্যথা পেতাম আমাদের তখন বাবা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ওষুধ। আমরা তখন বাবার হাতের আঙুলটি ধরে হেঁটে বেড়াতাম। বাবা একটি একটি করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে চিনাতেন হাত ধরে ধরে। যখন আমাদের ঘুম পেত মা আমাদের ঘুম পাড়াতেন। কিন্তু বাবা তো সন্তানকে কোলে না নিয়ে কখনো ঘুমাতে পারতেন না। বাবার বুকে মাথা রেখেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বছরের পর বছর কাটিয়েছি আমরা। যাকে ছাড়া নিজেদের কল্পনা করাও যায় না। আর তাই বয়সের ভারে যখন বাবার দেহটা আর চলতে পারে না। যখন তিনি ছোট্ট শিশুর মতো হয়ে যান, যখন তিনি খুঁজে বেড়ান সন্তানের হাত। যখন খুঁজে বেড়ান সন্তানের বুকে মাথা রেখে সন্তানের হাতের কোমল পরশে ক্লান্ত দেহে একটু ঘুম। তিনিও যখন সন্তানের হাতটি ধরে চলতে চান জীবনের অন্তিম সময়গুলো। তখন হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বর্তমান সমাজে বাবার প্রতি যে অবহেলা আমরা করি তা সত্যিই সন্তানদের জন্য বড়ই লজ্জা ও কলঙ্কজনক। অথচ আমরা ভুলে যাই আমাদের অস্তিত্বের উৎসই বাবা।
অতএব, আমাদের জীবনের অস্তিত্বের উৎস, জীবনের প্রকৃত নায়ক বাবার স্থানটা হোক নিজের ঘরে, মনের মসজিদে, পরম ভালোবাসায় প্রত্যেকের হৃদয়ে। আর বার্ধক্য সময়গুলোতে সব সময় তার সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণের দিকটা প্রাধান্য পাক। ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক ও নিরাপদ থাকুক পৃথিবীর সব বাবা-মা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা