প্রত্যাশার সুন্দর দিন

নতুনের আহ্বানে সাড়া দেয়া মনুষ্য চরিত্রের চিরাচরিত নিয়ম। সব কিছু গ্লানি আর যত অপূর্ণতা নতুনের মধ্যে যেন ঠিক হয়ে যাবে এমনটাই আমাদের গতানুগতিক ভাবনা। বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। নতুন বছরটা খুব বেশি শান্তির হবে এমন প্রত্যাশা প্রতিটি হৃদয়ের আকুতি থাকে।
একেকজন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। আমারও ভাবনায় আসে অনেক রকম পরিকল্পনা।
কিন্তু যখন পুরোনো বছরটাতে একটু ঘুরে ফিরে আসি তখন অনেক কিছু নিয়ে মন খারাপও হয়।
পৃথিবীজুড়ে যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে তার রেশ যেন অনেকটা ভীতসন্ত্রস্ত করে দিচ্ছে মনকে। হঠাৎ করে ২০২০ সালে যে এক ভয়াবহ সময় উপস্থিত হয়েছিল তা আসলেই পৃথিবীর সাধারণ জীবন যাপনে একটি মহা ধাক্কা ছিল।
হ্যাঁ, করোনা মহামারীর কথাই বলছি। এর যে ভয়াবহ রূপ আমরা দেখলাম তা আসলে ছেলে-বুড়ো সবারই মনে দাগ কেটেছে আর সবচেয়ে মর্মাহত করেছে স্বজন হারা বেদনা।
অনেকে আপনজন হারিয়েছে আমরা হারিয়েছি অনেক অভিজ্ঞ গুণী বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের। তাদের স্মরণে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে বিগত বছরের শেষ বিকেলের লালিমাতে।
অনেক পরিবর্তন এসেছে সমাজের, দেশের, পৃথিবীর সব স্তরে, পড়াশোনা বন্ধ প্রায়, অফিস আদালত প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাঝে অল্প স্বল্প খোলা! অনেক ব্যবসায় লোকসানে লগ্নি হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছে কতজন। প্রবাসীরা ফেরত এসেছেন কাজ হারিয়ে, মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে নেমে এসেছে অনেক পরিবার।
যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি তা হলো- করোনা প্রতিরোধে ভ্যাক্সিনেশন। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে এই মহান কাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে যেমনি পেয়েছি আনন্দ তেমনি বুঝেছি কতটা বৈচিত্র্যময় নতুন ধারার এই লড়াইটা। বেঁচে থাকার লড়াই সুস্থ থাকার লড়াই। ভালো লেগেছে যে, সচেতন একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আমরা একজোট। সঙ্ঘবদ্ধ এ সমাজ ধনী দরিদ্র ভেদাভেদ ভুলে সব এক স্তরে নেমে এসেছে, একই কাতারে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধে সচেষ্ট হয়েছে।
দুঃখ কষ্ট থাকবে, তাই বলে থেমে থাকা যাবে না, জয় করতে হবে সব প্রতিবন্ধকতা। প্রতিটি গল্পের পেছনে আরেকটি গল্প থাকে যা হয় বেশির ভাগ সময় কষ্টের পরিশ্রমের আর সাধনার। তবুও মানুষ সামনে এগিয়ে যায় নতুন স্বপ্নের পৃথিবী সাজায়।
সব কিছু ডিঙিয়ে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি নতুন দিনের আগমনী বার্তায় এ উড়োচিঠি ছেড়ে দিলাম। প্রত্যাশা সুন্দর দিন করোনামুক্ত সুস্থ পৃথিবী।